- নিমতৌড়িতে এসে মেজাজ নিমের থেকেও বেশি তেতো হয়ে গেল কুনাল ঘোষের (Kunal Ghosh)? সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে তমলুক কেন্দ্রে হেরেছে তৃণমূল। তৃণমূলের দেবাংশুকে বেশ ভালো মার্জিন এই হারিয়েছেন বিজেপির প্রার্থী প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গাঙ্গুলী। রাজ্যের একাধিক জায়গায় বিজেপিকে দুরমুশ করলেও, তমলুকের প্রেস্টিজ ফাইটে খালি হাতেই ফিরতে হয়েছে তৃণমূলকে।
আর সেই তমলুকে এবার একুশে জুলাইয়ের শহীদ সমাবেশ উপলক্ষে একটি সভায় হাজির ছিলেন কুনাল। সেখানেই তাঁর বিস্ফোরক বক্তব্য ‘খাল কেটে কুমির এনেছি আমরা’।
এমনিতেই সদ্য সমাপ্ত বিধানসভা উপনির্বাচনের পর তৃণমূলের অভ্যন্তরে সাংগঠনিক রাজনীতিতে কুনালের গুরুত্ব ক্রমশই বাড়ছে বলে মনে করা হচ্ছে। একদিকে উত্তর কলকাতায় সাংগঠনিক ক্ষেত্রে গুরুত্ব বেড়েছে কুনালের। জেলা স্তরেও কুনালের গুরুত্ব আরও বাড়তে চলেছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক মহলের একাংশ। ২০২১-এ পূর্ব মেদিনীপুরের ২ লোকসভা কেন্দ্রের দায়িত্বে ছিলেন কুনাল। পরবর্তীকালে হলদি নদীর বুক দিয়ে অনেক জল বয়ে গিয়েছে। লোকসভা ভোট চলাকালীনই রাজ্য সম্পাদকের পদ, এমনকী মুখপাত্রের পদ ছেড়ে দেওয়া কুনালের অভিমান এবং মানভঞ্জনের পর্ব দেখেছে রাজ্যবাসী।
তবে বিধানসভা উপনির্বাচনের পরে, আবারও মেদিনীপুরের অবজারভার হিসাবে কুনালের কামব্যাকের একটা সম্ভাবনা দেখছে রাজনৈতিক মহল। নিমতৌড়িতে একুশে জুলাই এর প্রস্তুতি সভায় আত্মসমালোচনার মোডেই ছিলেন কুনাল। তাঁর বক্তব্য “বাকি ২৯ টা জায়গাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমস্ত প্রকল্পের সুবিধা যেমন পেয়েছে, কাঁথি-তমলুকও একইভাবে পেয়েছে। তাহলে এই দু’টো সিট কেন জেতা গেল না ? কিছু কিছু জায়গায় আমাদের ভুল হয়েছে। আমি ঠিক না আপনি ঠিক, এই নিয়ে হিসাব করতে গিয়ে আমরা খাল কেটে কুমির নিয়ে চলে এসেছি। এই ইগো রাখা যাবে না। একুশে জুলাই জনস্রোত করুন। তারপরে দেখবেন পুরো খোলনলচে পাল্টে ফেলা হয়েছে।”
তবে কার্যক্ষেত্রে শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে সরব হওয়া নিয়ে বারবার মুখ খুলেছেন কুনাল। দলের বেশ কিছু নেতা-নেত্রীরা সেটিং করে চলছেন শুভেন্দুর সাথে এমন বিস্ফোরক অভিযোগও শোনা গিয়েছিল তাঁর মুখে। লোকসভার আবহে ‘গদ্দার’ ইস্যুতে ঘাটালের প্রার্থী দেবের সঙ্গে পর্যন্ত মতানৈক্য দেখা গিয়েছিল কুনাল ঘোষের।
ফলে শুভেন্দুকে টক্কর দেওয়ার জন্য অধিকারী গড়ে কুনালের থেকে ভালো বাজি আর কেউ হতে পারে না। এমনটাই মত তৃণমূলের অনেক প্রবীণ নেতার। নিমতৌড়ির সভাতে কুনালের এই বক্তব্যের পরে সেই জল্পনায় আরও কিছুটা উস্কানি পাওয়া গেল বলে মনে করছেন জেলা নেতৃত্ব। এমনকী তমলুকের ক্ষেত্রে বেশ কিছু জায়গায় অন্তর্ঘাতের রিপোর্ট পাওয়া গিয়েছে তৃণমূলের প্রাথমিক তদন্তে। ফলে ‘খাল কেটে কুমির আনা’ বা ‘ইগোর লড়াই’-এর মত শব্দ কুনাল যথেষ্ট ভেবেচিন্তে ব্যবহার করেছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
তবে লক্ষণীয়ভাবে, কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রে পরাজিত তৃণমূল প্রার্থী, পটাশপুরের বিধায়ক উত্তম বারিক এই সভায় হাজির ছিলেন না। তার এই সভায় হাজির না থাকাটাও একটা জল্পনার সৃষ্টি করেছে। যদিও হেরে গেলেও উত্তমের লড়াইকে অতি উত্তম বলেছেন খোদ তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা। তবে কুনাল যদি সত্যিই আবার এই জেলার দায়িত্ব নেন, তাহলে উত্তমের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক কতটা উত্তম থাকে সেটাও একটা দেখার মত বিষয় হবে।