আরএসএস ইস্যুতে হাইকোর্টের বড় সিদ্ধান্তে চাঞ্চল্য

karntaka-high-court-rss-order-stay-siddaramaiah-government

বেঙ্গালুরু: কর্ণাটকের সিদ্দারামাইয়া সরকার বড়সড় ধাক্কা খেল হাইকোর্টে। আরএসএস ইস্যুতে রাজ্য সরকারের সাম্প্রতিক আদেশের উপর কর্ণাটক হাইকোর্টের ধারোয়াড় বেঞ্চ অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এই আদেশটি ব্যাপকভাবে আরএসএস (রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ)-এর কার্যক্রমকে লক্ষ্য করে জারি করা হয়েছে বলে দেখা হচ্ছিল। আজেকের শুনানিতে আদালত সরকারের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।

Advertisements

বিচারপতি নাগপ্রসন্না এই আদেশকে ‘মৌলিক অধিকারের উপর অযথা বাধা’ বলে উল্লেখ করে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন, এবং পরবর্তী শুনানি ১৭ নভেম্বর নির্ধারিত করেছেন। এই রায়টি শুধুমাত্র আরএসএসের জন্য স্বস্তির বাতাস নয়, বরং গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা এবং ধর্মীয়-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের অধিকারকে রক্ষা করার একটি শক্তিশালী বার্তা বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ।

   

আগামী বছর ভোট! তবু SIR ২.০ থেকে কেন বাদ পড়ল অসম?

এই ঘটনার পটভূমি খুবই সাম্প্রতিক এবং রাজনৈতিকভাবে উত্তপ্ত। ১৬ অক্টোবর কার্যনির্বাহী ক্যাবিনেটের বৈঠকে কর্ণাটক সরকার একটি নতুন নির্দেশ জারি করে, যাতে বলা হয় যে কোনো বেসরকারি বা সামাজিক সংস্থা সরকারি স্কুল, কলেজের মাঠ বা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে অনুষ্ঠান, সভা বা সাংস্কৃতিক কর্মসূচি আয়োজন করতে চাইলে সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রধানের লিখিত অনুমতি নিতে হবে।

এছাড়া, জেলা প্রশাসনগুলোকে কড়া পালনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে কার্ণাটক ভূমি রাজস্ব এবং শিক্ষা আইনের অধীনে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এই আদেশটি সরকারের স্বরাষ্ট্র বিভাগ থেকে ১৮ অক্টোবর পুনরায় জারি করা হয়, যা ২০১৩ সালের একটি পুরনো নির্দেশের পুনরাবৃত্তি বলে দাবি করা হলেও, এর পিছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে বলে বিরোধীরা অভিযোগ করেছে।

এই নির্দেশের মূলে ছিল পঞ্চায়েত রাজ ও আইটি-বিটি মন্ত্রী প্রিয়াঙ্ক খড়গের একটি চিঠি। রাইচুর জেলার একজন পঞ্চায়েত উন্নয়ন অফিসার (পিডিও) আরএসএসের একটি অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার অভিযোগে স্থানান্তরিত হওয়ার পর খড়গে মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়াকে চিঠি লিখে আরএসএস এবং তার অধীনস্থ সংস্থাগুলোর সরকারি সম্পত্তি বা সর্বজনীন স্থানে কার্যক্রমের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের দাবি জানান।

Advertisements

তিনি লিখেছেন, “সাম্প্রতিক সময়ে সরকারি কর্মকর্তা এবং কর্মচারীরা আরএসএস এবং অন্যান্য সংস্থার কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন, যা স্পষ্ট নির্দেশ লঙ্ঘন করে।” এই চিঠির ফলে সেই পিডিওকে স্থানান্তর করা হয়, এবং ক্যাবিনেট সিদ্দারামাইয়ার নেতৃত্বে এই নতুন নিয়ম প্রণয়ন করে। মুখ্যমন্ত্রী পরে স্পষ্ট করেছেন যে, এটি শুধুমাত্র আরএসএসের জন্য নয়, সকল সংস্থার জন্য সাধারণ নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ।

কিন্তু বিরোধীরা, বিশেষ করে বিজেপি, এটিকে ‘আরএসএস-বিরোধী প্রতিহিংসা’ বলে অভিহিত করেছে এবং রাজ্যব্যাপী প্রতিবাদ শুরু করেছে।আদালতের হস্তক্ষেপ এসেছে পুনশ্চৈতন্য সেবা সংস্থা নামক একটি এনজিওর রিট যত্নপত্রের মাধ্যমে। এই সংস্থা দাবি করেছে যে, সরকারের এই আদেশটি মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন করে, বিশেষ করে ভারতীয় সংবিধানের ১৯(১)(বি) ধারা, যা সভা এবং সমাবেশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করে।

ধারোয়াড় বেঞ্চের বিচারপতি নাগপ্রসন্না বলেছেন, “সরকারের উদ্দেশ্য স্পষ্ট নয়। এটি কোনো নির্দিষ্ট সংস্থাকে লক্ষ্য করে জারি করা হয়েছে কি না, তা পরীক্ষা করতে হবে। মৌলিক অধিকারকে এভাবে সীমাবদ্ধ করা যায় না।” আদালত আরও যোগ করেছেন যে, সরকার যদি সাধারণ নিরাপত্তার জন্য নিয়ম করতে চায়, তাহলে তা সকলের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য হতে হবে, কোনো একটা গোষ্ঠীকে টার্গেট করে নয়।

এই অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা অর্থাৎ এখন থেকে ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত কোনো বেসরকারি সংস্থাকে সরকারি প্রতিষ্ঠানে অনুষ্ঠানের জন্য পূর্বানুমতি নিতে হবে না। এটি আরএসএসের মতো সংস্থাগুলোর জন্য তাৎক্ষণিক স্বস্তি এনেছে, যারা রুট মার্চ এবং শাখা অনুষ্ঠানগুলোতে সরকারি স্থান ব্যবহার করে আসছে।