কলকাতা, ১ ডিসেম্বর: মুর্শিদাবাদের ভরতপুরের তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীরের “আমি নিজে বাবরি মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করব” ঘোষণা রাজ্য-রাজনীতিতে ঝড় তুলেছে (Kalyan Banerjee)। ৬ ডিসেম্বরের আগে আসন্ন সংবেদনশীল তারিখকে সামনে রেখে এই মন্তব্য শুধু বিজেপিকে হাতিয়ার দিয়েছে তাই নয়, তৃণমূলের অন্দরেও অস্বস্তি ছড়িয়েছে।
দলের বর্ষীয়ান নেতা তথা শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ ব্যানার্জি আজ সরাসরি হুমায়ুনকে ‘মূল্যহীন’ বলে উড়িয়ে দিয়ে সাফ জানিয়ে দিলেন “পশ্চিমবঙ্গে মানুষ একজনকেই ভালোবাসে, বিশ্বাস করে, আর তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
দলটা তাঁর নামেই চলে।”কল্যাণের কথায় মোদী-তুলনা ছিল চোখে আঙুল দিয়ে দেখানোর মতো। তিনি বলেন, “যতদিন নরেন্দ্র মোদী আছেন, ততদিন বিজেপি আছে। মোদী চলে গেলে বিজেপি থাকবে না। ২০১৪-র আগে কেউ কি ভেবেছিল নরেন্দ্র মোদী এসে এতদিন থাকবেন? ঠিক একইভাবে, যতদিন মমতা দি আছেন, ততদিন কেউ কিছু করতে পারবে না।” এই একটি বাক্যে কল্যাণ যেন দলের অন্দরের সব সন্দেহ দূর করে দিতে চাইলেন – তৃণমূল মানে মমতা, আর মমতা মানেই তৃণমূল। হুমায়ুন কবীর বা অন্য কোনো ‘ব্যক্তিগত বীরত্ব’ দিয়ে দল চলে না।
শতাধিক আয়ুর্বেদ চিকিৎসকের ডেপুটেশন! বেতন বৈষম্যে তীব্র ক্ষোভ
হুমায়ুনের বক্তব্যের পটভূমি কিন্তু নতুন নয়। গত কয়েক মাস ধরেই তিনি দলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের সুর তুলছেন। ভরতপুরে দলের জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে বিরোধ, টিকিট বণ্টন নিয়ে ক্ষোভ, এমনকি মমতার বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ – সব মিলিয়ে তিনি যেন নিজেকে ‘মুর্শিদাবাদের বাঘ’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চাইছেন। কিন্তু “বাবরি মসজিদ” শব্দটা ব্যবহার করার মধ্যে দিয়ে তিনি যে রাজ্যের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ভারসাম্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলছেন, সেটাই তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে সবচেয়ে বড় মাথাব্যথার কারণ।
বিজেপি ইতিমধ্যেই এই বক্তব্যকে লাফিয়ে লাফিয়ে ব্যবহার করছে। দিলীপ ঘোষ থেকে শুরু করে শুভেন্দু অধিকারী – সকলেই বলছেন, “দেখুন, তৃণমূলের আসল চেহারা বেরিয়ে পড়েছে।”তৃণমূলের অন্দরে কল্যাণ ব্যানার্জি প্রথম নন যিনি হুমায়ুনের বিরুদ্ধে মুখ খুললেন। গতকালই দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেছিলেন, “এটা ব্যক্তিগত মন্তব্য, দলের বক্তব্য নয়।” কিন্তু কল্যাণের আজকের বক্তব্য অনেক বেশি কঠোর ও স্পষ্ট। তিনি যেন হুমায়ুনকে ‘দলের বাইরে’ ঠেলে দিয়ে বললেন – “ওই বিধায়কের কোনো মূল্য নেই।”
মনে করা হচ্ছে, আগামী কয়েকদিনের মধ্যে হুমায়ুনের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থাও নেওয়া হতে পারে।অন্যদিকে, হুমায়ুন নিজেও পিছু হটছেন না। আজ সকালে মুর্শিদাবাদে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, “আমি যা বলেছি, তা আমার ব্যক্তিগত অধিকার। আমি মুর্শিদাবাদের মানুষের হয়ে কথা বলি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমার নেত্রী, কিন্তু আমার এলাকার মানুষের ভাবাবেগ আমি বুঝি।” এই দ্বৈত কথায় তিনি যেন দলের শৃঙ্খলা ও ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তার মাঝে দোলাচল করছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই ঘটনা তৃণমূলের অন্দরে ‘মমতা-পরবর্তী’ নেতৃত্বের লড়াইয়ের একটা প্রাথমিক লক্ষণ। হুমায়ুনের মতো কয়েকজন বিধায়ক-সাংসদ ইদানীং নিজেদের ‘স্থানীয় বাঘ’ হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করছেন। কিন্তু কল্যাণ ব্যানার্জির মতো পুরনো দলের সৈনিকরা স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছেন – তৃণমূল এখনও ‘এক ব্যক্তি-কেন্দ্রিক’ দল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছায়া যতদিন আছে, ততদিন অন্য কেউ মাথা তুলতে পারবে না।
