কলকাতা, ৭ ডিসেম্বর: তৃণমূল কংগ্রেস থেকে সাসপেন্ড হওয়ার পর দিন কয়েক ধরে রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছেন ভরতপুরের বিধায়ক হুমায়ুন কবীর (Humayun Kabir AIMIM alliance)। কখনও বাবরি মসজিদের ‘শিলান্যাস’ বিতর্ক, কখনও নতুন দল গঠনের ইঙ্গিত প্রতিটি ঘটনার পর তিনি যেন আরও বেশি করে আলোচনার মধ্যে উঠে আসছেন। এবার আরও বড় ঘোষণা করলেন তিনি। জানালেন, তিনি এখনই বিধায়ক পদ ছাড়ছেন না। বরং নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করবেন এবং সেই দলে থাকছে AIMIM-এর সঙ্গে জোটের স্পষ্ট রূপরেখা।
হুমায়ুনের দাবি, তিনি ইতিমধ্যেই AIMIM সুপ্রিমো আসাদউদ্দিন ওয়েইসির সঙ্গে কথা বলেছেন। ওয়েইসি তাঁকে হায়দরাবাদে ডেকেছেন এবং দু’জনের মধ্যে রাজনৈতিক আলোচনা হয়েছে। তাঁর নতুন দল আগামী ২২ ডিসেম্বর ঘোষণা করা হবে এবং সে দিনই মুর্শিদাবাদে বড় সম্মেলনের পরিকল্পনা রয়েছে।
গ্রহাণুতে চিনি! নাসার নতুন আবিষ্কারে অবাক বিশ্ব
সংবাদমাধ্যমে হুমায়ুন বলেন, “আমি একটা রাজনৈতিক দল। আমাকে তো দল করতেই হবে। শুধু বাবরি মসজিদ করার জন্য আমাকে সাসপেন্ড করেছে তৃণমূল। আগামী ২২ তারিখ আমার নতুন দল হচ্ছে। সেই দলের চেয়ারম্যান হব আমি। রাজ্যের ২৯৪ আসনের মধ্যে ১৩৫টি আসনে লড়ব। বাকি আসনগুলো নিয়ে AIMIM-এর সঙ্গে জোট চূড়ান্ত হয়েছে। ওয়েইসি সাহেব আমাকে হায়দরাবাদে বসতে বলেছেন।”
তিনি আরও জানান, তাঁর নতুন দল ধর্মীয় ভাবাবেগের জায়গাকে গুরুত্ব দেবে না বরং মুসলিম ভোটব্যাংকের মধ্যে তাঁর জনপ্রিয়তা কাজে লাগিয়ে রাজনৈতিক প্রভাব বাড়াতেই AIMIM-এর সঙ্গে এই সমঝোতা। তবে AIMIM-এ থামছেন না হুমায়ুন।
তিনি জানিয়ে দিয়েছেন ISF এবং বামেদের সঙ্গে জোট গঠনের পথও খোলা। তাঁর ভাষায়, “AIMIM তো ফাইনাল। ISF আসলে স্বাগত। বামফ্রন্ট চাইলে তারাও থাকুক। কংগ্রেস থাকলেও সমস্যা নেই। আমার একটাই টার্গেট—বাংলায় বিজেপিকে ক্ষমতায় আসতে না দেওয়া। আরএসএস ধাঁচের মুখ্যমন্ত্রী হলে বাংলার ক্ষতি হবে।”
এই মন্তব্যের পরেই রাজনৈতিক মহল আরও সরগরম। ISF বা বামেরা কি এই জোটে যাবে? এ প্রশ্নের উত্তরে বামফ্রন্ট নেতা শতরূপ ঘোষ স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “উনি নতুন দল গড়তে পারেন। কিন্তু আমাদের সঙ্গে জোটে আপত্তি নেই বলে উনি আমাদের ধন্য করছেন না। ধর্মনিরপেক্ষতা আমাদের মূল নীতি। কারও মুখে যদি মসজিদ, ধর্ম, সৌদি এসবই শোনা যায়, সেখানে আমরা নেই। রাজনীতি মন্দির-মসজিদ দিয়ে হয় না। স্কুল-কলেজ-হাসপাতাল–রাস্তা নিয়ে কথা বলাই রাজনীতি।”
অন্যদিকে রাজ্যের নারী ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রী শশী পাঁজা বলেন, “মুর্শিদাবাদের মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নকেই ভোট দিয়েছেন। হুমায়ুন তার ফলেই জিতেছিলেন। কেউ দলের ঊর্ধ্বে নন। সাসপেন্ড হওয়ার পর তিনি কী করবেন, সেটা তৃণমূলের দায়িত্ব নয়।” এদিকে বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা নিয়ে পরপর টানাপোড়েনের পর হুমায়ুন ঘোষণা করেছেন এখনই পদ ছাড়ছেন না। তাঁর কথায়, “ভরতপুরের মানুষই আমাকে ইস্তফা দিতে বারণ করেছেন।”
তৃণমূল তাঁকে বাবরি মসজিদ ‘শিলান্যাস’ বিতর্কের পর সাসপেন্ড করতেই জেলা রাজনীতিতে ব্যাপক ঢেউ ওঠে। প্রথমে ইস্তফার ইঙ্গিত, পরে নিজের দল গঠনের ঘোষণা সব মিলিয়ে হুমায়ুন এখন মুর্শিদাবাদে নিজের সমর্থন মজবুত করার পথে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, হুমায়ুনের নতুন দল ও AIMIM জোট যদি বাস্তবে রূপ পায়, তা হলে মুর্শিদাবাদের মুসলিম ভোটে নতুন সমীকরণ তৈরি হতে পারে। তবে ১৩৫টি আসনে লড়াইয়ের আত্মবিশ্বাস কতটা কার্যকর হবে তা সময়ই বলবে।
