পটনা: বিহারের রাজনীতি এখন চরম উত্তেজনার পর্যায়ে। ভোটের কাউন্টডাউন শুরু হতেই রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে শুরু হয়েছে অভিযোগ পাল্টা অভিযোগের লড়াই। এই পরিস্থিতিতে বিজেপির কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিরিরাজ সিং-এর মন্তব্য নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। তাঁর দাবি “২০১০ সালের রেকর্ডকেও এবার ছাড়িয়ে যাবে এনডিএ। বিহারের মানুষ উন্নয়ন চায়, বিভাজন নয়।”
বিহারের রাজনৈতিক মহল মনে করছে, এই মন্তব্য শুধু আত্মবিশ্বাসের প্রকাশ নয়, বরং এনডিএ শিবির থেকে স্পষ্ট রাজনৈতিক বার্তা—তারা এখন একক নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। বিজেপি-জেডিইউর জোট আবারও পুরনো ছন্দে ফিরছে, আর তেজস্বী যাদবের নেতৃত্বাধীন মহাগঠবন্ধন ক্রমে ভাঙনের পথে।
উৎসবের মিষ্টি আনন্দ! দীপাবলিতে কি ভাবে মতিচুর লাড্ডু বানাবেন জেনে নিন
গিরিরাজ সিং বলেন, “২০১০ সালে আমরা জেডিইউ-র সঙ্গে মিলে ২০৬টি আসন জিতে রেকর্ড করেছিলাম। এবার মোদীজির নেতৃত্বে, নীতীশজির প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা ও আমাদের সংগঠনের শক্তিতে সেই রেকর্ডও ছাড়িয়ে যাব। এনডিএর আছে নেতৃত্ব, আছে নীতি, আছে উন্নয়নের রোডম্যাপ।”
তিনি আরও বলেন, “অন্যদিকে মহাগঠবন্ধনের কোনও দিকনির্দেশনা নেই। তেজস্বী যাদব নিজের দলেই শৃঙ্খলা রাখতে পারছেন না, অন্য দলগুলোও তার নেতৃত্ব মানছে না। ক্ষমতার লোভে একত্রিত হওয়া এই জোটে বিশ্বাস নেই, মতৈক্য নেই।”
গিরিরাজের কটাক্ষ, “ওদের ‘গঠবন্ধন’ আসলে ‘ঠগবন্ধন’। একে অপরকে ঠকিয়ে নিজেরা লাভবান হওয়ার চেষ্টায় ব্যস্ত। চার ডজন আসনে ওরা নিজেদের মধ্যেই লড়ছে। জনগণ এখন সব বুঝে গেছে কারা উন্নয়ন করে আর কারা ভাঙনের রাজনীতি করে।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গিরিরাজ সিংয়ের এই বক্তব্য বিহারে বিজেপি-জেডিইউর আত্মবিশ্বাস ও সংগঠনের ঐক্যকে তুলে ধরছে। নীতীশ কুমারের প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা ও বিজেপির সাংগঠনিক ক্ষমতা মিলিয়ে এনডিএ এবার শক্তিশালী অবস্থানেই রয়েছে। বিশেষত, পাটনা, গয়া, আরা ও মুজফ্ফরপুরের মতো শহুরে কেন্দ্রে বিজেপির জনপ্রিয়তা এখনও অটুট।
অন্যদিকে, মহাগঠবন্ধনের মধ্যে স্পষ্ট অসন্তোষ ফুটে উঠেছে। একাধিক আসনে আরজেডি, কংগ্রেস ও বাম প্রার্থীরা একে অপরের বিরুদ্ধে লড়ছেন। এতে ভোট বিভাজনের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। রাজনৈতিক মহল মনে করছে, এই অস্থিরতাই গিরিরাজের মন্তব্যের ভিত্তি।
আরজেডি শিবির অবশ্য পাল্টা সুরে বলেছে, “বিজেপি ভয় পেয়েছে, তাই এখন থেকেই জয়ধ্বনি দিতে শুরু করেছে। বিহারের মানুষ মুদ্রাস্ফীতি, বেকারত্ব আর কৃষি সমস্যায় অতিষ্ঠ। এই সরকারকে মানুষ এবার শিক্ষা দেবে।”
কিন্তু বিজেপি শিবির দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করছে যে মোদী-নীতীশ জুটি ফের ভোটারদের আস্থা অর্জন করবে। গিরিরাজ বলেন, “বিহারের মানুষ জানে কে উন্নয়ন এনেছে, কে অরাজকতা ছড়িয়েছে। ২০১০-এর মতো এবারও জনতার আশীর্বাদ আমাদের সঙ্গেই থাকবে।”
বিহারের রাজনীতিতে এখন স্পষ্ট দুই চিত্র একদিকে আত্মবিশ্বাসী এনডিএ, অন্যদিকে নেতৃত্বহীন ও ভাঙাচোরা মহাগঠবন্ধন। আগামী নির্বাচনে কে শেষ হাসি হাসবে, তা সময়ই বলবে, কিন্তু একথা নিঃসন্দেহে বলা যায় বিহারের রাজনীতি এখন ফের এনডিএ বনাম ঠগবন্ধনের লড়াইয়ে পরিণত হয়েছে।