উত্তরবঙ্গ, ৭ নভেম্বর: আগামী সপ্তাহতে ফের উত্তরবঙ্গ সফরে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বন্যা ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পর রাজ্যের উত্তরাংশে পরিস্থিতি এখন অনেকটাই স্বাভাবিক হলেও, মানুষের জীবনে তার প্রভাব এখনও রয়ে গিয়েছে। সেই পরিস্থিতি স্বচক্ষে খতিয়ে দেখতে আগামী সপ্তাহে ফের উত্তরবঙ্গে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী।
সূত্রের খবর অনুযায়ী, আগামী সোমবার বাগডোগরা হয়ে উত্তরবঙ্গে পৌঁছবেন মুখ্যমন্ত্রী। সফরের প্রথম দিনেই শিলিগুড়িতে প্রশাসনিক বৈঠকে বসবেন তিনি। ইতিমধ্যেই নবান্নের তরফে উত্তরবঙ্গের জেলাশাসকদের কাছে নির্দেশ পাঠানো হয়েছে যাতে মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকের জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পূর্ণ রাখা হয়।
বন্যার পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলায় রাজ্য সরকার যে একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে, তার অগ্রগতি নিয়েও এই বৈঠকে আলোচনা হবে বলে জানা গিয়েছে। শিলিগুড়ির বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে উপস্থিত থাকবেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী, বিভিন্ন জেলার জেলাশাসক, পুলিশ সুপার ও সংশ্লিষ্ট দফতরের আধিকারিকরা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, “উত্তরবঙ্গের মানুষ আমার কাছে অত্যন্ত প্রিয়। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সময় তাঁরা যে সাহস দেখিয়েছেন, তা প্রশংসনীয়। আমি তাঁদের পাশে আছি, থাকবও। রাজ্য সরকার তাঁদের পুনর্বাসনের জন্য সবরকম সাহায্য করবে।”
গত মাসে প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহার জেলার বিভিন্ন এলাকা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বহু পরিবার গৃহহীন হয়েছে, ফসলের ক্ষতি হয়েছে বিপুল পরিমাণে। রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই ক্ষতিগ্রস্তদের হাতে প্রাথমিক আর্থিক সহায়তা দিয়েছে, তবে মুখ্যমন্ত্রী এবার সরাসরি পরিদর্শন করে পরবর্তী পুনর্বাসন পরিকল্পনা নির্ধারণ করবেন।
এই সফরে মুখ্যমন্ত্রী উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলার প্রশাসনের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করতে পারেন। সূত্রের খবর, স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যাতে প্রতিটি জেলার ক্ষয়ক্ষতির রিপোর্ট, ত্রাণ বিতরণের তথ্য এবং পুনর্গঠনের অগ্রগতি বিস্তারিতভাবে উপস্থাপন করা হয়।
নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী এই সফরে উত্তরবঙ্গের পরিকাঠামো, সড়ক যোগাযোগ ও স্বাস্থ্যব্যবস্থা নিয়েও পর্যালোচনা করবেন। বিশেষ করে পাহাড়ি এলাকায় যেসব রাস্তা ও সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেগুলি দ্রুত মেরামতির নির্দেশ দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এছাড়া, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্থানীয় মানুষের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাঁদের সমস্যার কথাও শুনবেন। মুখ্যমন্ত্রীর এক ঘনিষ্ঠ সূত্রের বক্তব্য, “তিনি শুধু প্রশাসনিক দিক থেকেই নয়, মানবিক দিক থেকেও পরিস্থিতি দেখতে চান। মানুষ কেমন আছেন, তাঁদের পাশে সরকার কতটা কার্যকরভাবে দাঁড়াতে পেরেছে, সেটাই মূল লক্ষ্য।”
রাজনৈতিক মহলেও মুখ্যমন্ত্রীর এই সফরকে তাৎপর্যপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। উত্তরবঙ্গ দীর্ঘদিন ধরেই তৃণমূল সরকারের বিশেষ নজরে রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বারবার বলেছেন, উত্তরবঙ্গের উন্নয়ন তাঁর অগ্রাধিকারের তালিকায় শীর্ষে। বন্যা-পরবর্তী পরিস্থিতিতে উত্তরবঙ্গের মানুষের পাশে থাকার বার্তা দিতে এই সফর নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ। মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতি প্রশাসন ও সাধারণ মানুষের মধ্যে আত্মবিশ্বাস জাগাবে বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল।


