পটনা: ভারতের রাজনৈতিক মহলে নয়া তরজা। যে তরজা বিজেপির অভন্তরীন দ্বন্দ্বকে আবার প্রকাশ্যে এনেছে। সোমবার সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও বিজেপি নেতা আরকেআই সিং সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট করে বিহারের মানুষকে আহ্বান জানিয়েছেন, জাতীয় গণতান্ত্রিক জোটের (এনডিএ) প্রধান প্রার্থীদের মধ্যে উপমুখ্যমন্ত্রী সম্রাট চৌধুরীসহ যেকোনো অপরাধী রেকর্ডযুক্ত প্রার্থীর বিরুদ্ধে ভোট না দিতে।
তিনি বলেছেন “এমনকি সেই নেতারা যদি আপনার জাতির হয়, তাহলে তাদের এড়িয়ে চলুন”, এমন শক্তিশালী বার্তা দিয়ে সিং এর এই পোস্ট বিজেপির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের মধ্যে অস্বস্তি সৃষ্টি করেছে। তিনি আরও বলেছেন, যদি প্রত্যেক প্রার্থীই দাগী হয়, তাহলে ‘নোন অফ দ্য অ্যাবভ’ (নোটা) বাটন টিপুন। এই বক্তব্য বিহারের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের (২০২৫) ঠিক আগে জোটের একতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
৭০ বছর ধরে কয়েক পুরুষের বাস! দীপাবলিতে ঘরছাড়া প্রায় ২৭ পরিবার
আরকেআই সিং, যিনি গত বছর লোকসভা নির্বাচনে আরাহ সিট হারিয়ে রাজনৈতিক মরুভূমিতে চলে গিয়েছেন, এই পোস্টে এনডিএ প্রার্থীদের নাম করে তাদের অপরাধী মামলার বিস্তারিত তথ্য দিয়েছেন। তারারপুর থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন উপমুখ্যমন্ত্রী সম্রাট চৌধুরীর নাম উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, চৌধুরীর বিরুদ্ধে একাধিক গুরুতর অভিযোগ রয়েছে, যার মধ্যে দুর্নীতি, নাম পরিবর্তনের সন্দেহ এবং শিক্ষাগত যোগ্যতার ভুয়া সার্টিফিকেটের অভিযোগ অন্তর্ভুক্ত।
সম্প্রতি জনসুরাজ পার্টির প্রধান প্রশান্ত কিশোরের অভিযোগে সম্রাট চৌধুরীর ডি.লিট ডিগ্রি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে ২০১০ সালের শপথপত্রে তিনি ক্লাস সেভেন পাস বলে উল্লেখ করেছিলেন, কিন্তু পরে ক্যালিফর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি.লিট পেয়েছেন বলে দাবি করেছেন। সিং এছাড়া জেডিইউ প্রার্থী অনন্ত সিং এর (মোকামা) নাম নিয়েছেন, যিনি একসময় গ্যাংস্টার ছিলেন এবং বর্তমানে রাজনীতিতে প্রবেশ করেছেন।
তাঁর বিরুদ্ধে অস্ত্র আইন ভঙ্গ, হত্যা চেষ্টা এবং অন্যান্য মামলা রয়েছে। জগদীশপুর ও সান্দেশ থেকে জেডিইউ প্রার্থীদেরও নাম করেছেন, তিনি যারা আরাহ লোকসভা কেন্দ্রের অধীনে পড়ে। যেখানে তিনি গতবার হেরে গিয়েছিলেন।
আরজেডি প্রার্থীদের মধ্যে আরাহ থেকে দীপু সিং এবং রঘুনাথপুর থেকে ওসামা শাহাবের নাম উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, তাদের পিতাদের বিরুদ্ধে গুরুতর অপরাধের মামলা রয়েছে, যা প্রার্থীদের প্রোফাইলকে কলুষিত করেছে। আরকেআই সিং এই সব তথ্য বিস্তারিতভাবে লিখে মানুষকে সচেতন করেছেন, যাতে তারা ‘দাগী’ প্রার্থীদের ভোট না দিয়ে স্বচ্ছ রাজনীতির পথ বেছে নেয়।
রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য আরকেআই সিং এর সঙ্গে বিজেপির বর্তমান নেতৃত্বের দীর্ঘদিনের উত্তেজনাই এই মন্তব্যের কারণ। এক অবসরপ্রাপ্ত আইএএস অফিসার হিসেবে বিহার সিং ২০১০ সালে আরাহ থেকে লোকসভায় জয়ী হয়ে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। দ্বিতীয় নরেন্দ্র মোদী সরকারে তিনি বিদ্যুৎ মন্ত্রী ছিলেন এবং তার আগে ঘরোয়া বিষয়াবলী ও স্বরাষ্ট্র সচিব হিসেবে কাজ করেছেন।
কিন্তু গত লোকসভা নির্বাচনে আরাহ সিট হারার পর তিনি পার্টির মূলধারা থেকে দূরে সরে গিয়েছেন। সম্প্রতি প্রশান্ত কিশোরের দুর্নীতির অভিযোগের পর তিনি সম্রাট চৌধুরী, দিলিপ জৈসওয়াল, মঙ্গল পাণ্ডে এবং সঞ্জয় জৈসওয়ালসহ বিজেপি নেতাদের জবাবদিহিতে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন।
এর ফলে তাঁকে বিজেপির ৪৫ সদস্যের নির্বাচনী প্রচার কমিটি এবং ইলেকশন ম্যানিফেস্টো কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হয়। সিং বলেছিলেন, “কিশোরের অভিযোগের প্রমাণ থাকলে তার বিরুদ্ধে মামলা করুন, নইলে পদত্যাগ করুন।” এই ঘটনা বিজেপির অভ্যন্তরীণ বিভেদকে স্পষ্ট করে তুলেছে, যা বিহারের নির্বাচনী প্রচারে নতুন মোড় নিতে পারে।