বিহার নির্বাচন ২০২৫: ভোটার তালিকা সংশোধন নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের নজরদারি

Supreme Court to hear petitions on Bihar voter list revision ahead of Assembly Elections 2025; final hearing scheduled for November 4 to ensure transparency.

বিহার বিধানসভা নির্বাচন একেবারে দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে, আর এই কঠিন সময়েই ভোটার তালিকা নিয়ে বিতর্ক পৌঁছে গেছে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ। বৃহস্পতিবার একাধিক পিটিশনের শুনানি হয় সর্বোচ্চ আদালতে, যেখানে আবেদনকারীরা দাবি করেছেন—নির্বাচন কমিশন (ECI) যেন ভোটার তালিকার সব ধরনের পরিবর্তনের স্পষ্ট ও আলাদা তালিকা প্রকাশ করে। বিশেষ করে যাদের নাম বাদ গেছে এবং যাদের নাম নতুন করে যুক্ত হয়েছে, সেই তালিকা জনগণের সামনে আনা বাধ্যতামূলক হওয়া উচিত বলে আবেদনকারীদের বক্তব্য।

Advertisements

আবেদনকারীদের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ। তিনি আদালতে বলেন, “নির্বাচনের এত কাছাকাছি সময়ে বড় কোনও পরিবর্তন সম্ভব নয়, কিন্তু অন্ততপক্ষে ভোটার তালিকায় সংযোজন ও বর্জনের স্পষ্ট তালিকা প্রকাশ করা উচিত। এতে জনগণের আস্থা বাড়বে, স্বচ্ছতাও নিশ্চিত হবে।”

সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ, যেখানে বিচারপতি সুর্য কান্ত ও বিচারপতি জয়মল্য বাগচি উপস্থিত ছিলেন, আবেদনকারীদের বক্তব্য শোনার পর গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ করেন। বেঞ্চ জানায়, নির্বাচন কমিশন তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন, এবং আইন অনুসারে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা বাধ্যতামূলক। একই সঙ্গে বেঞ্চ ইঙ্গিত দেয়, এই বিতর্কের উপর আদালতের নজরদারি এখানেই থেমে থাকছে না; প্রয়োজনে আরও পর্যবেক্ষণ ও নির্দেশনা দেওয়া হতে পারে।

নির্বাচন কমিশনের পক্ষে সিনিয়র আইনজীবী রাকেশ দ্বিবেদী আদালতকে জানান, নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যেই সমস্ত সংশোধন প্রক্রিয়া শেষ করা হবে। তিনি বলেন, “প্রথম দফার জন্য মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ১৭ অক্টোবর, এবং দ্বিতীয় দফার জন্য ২০ অক্টোবর। এই সময়সীমার মধ্যেই ভোটার তালিকা সংশোধনের সুযোগ থাকবে। চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পরই নির্বাচনের পরবর্তী ধাপ শুরু হবে।”

তিনি আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেন যে, আদালতের নির্দেশে নাম বাদ পড়া ভোটারদের জন্য বিনামূল্যে আইনি সাহায্যের ব্যবস্থা রাখা হলেও, এখনো পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের কাছে কোনও আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জমা পড়েনি।

Advertisements

এদিকে বিহার নির্বাচন হবে দুই দফায়—প্রথম দফা ৬ নভেম্বর এবং দ্বিতীয় দফা ১১ নভেম্বর। সমস্ত ভোট গণনা হবে ১৪ নভেম্বর। অর্থাৎ মাত্র এক মাসেরও কম সময় হাতে নিয়ে সমস্ত প্রস্তুতি শেষ করতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। এই অবস্থায় ভোটার তালিকা নিয়ে ওঠা বিতর্ক ও সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ নির্বাচনী প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে জনগণের আস্থা বাড়ানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।

বিহারের মতো একটি রাজনৈতিকভাবে সংবেদনশীল রাজ্যে ভোটার তালিকার স্বচ্ছতা সবসময় বড় ইস্যু। বিরোধী দলগুলি দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ করে আসছে যে, অনেক বৈধ ভোটারের নাম তালিকা থেকে বাদ পড়ছে, আবার এমন নাম যুক্ত হচ্ছে যেগুলি নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। ফলে আদালতের এই সক্রিয় নজরদারি জনগণের কাছে একটি ইতিবাচক বার্তা পাঠাচ্ছে যে, চূড়ান্ত ভোটার তালিকা নিরপেক্ষ ও সঠিকভাবে প্রকাশ করা হবে।

শেষ পর্যন্ত বলা যায়, বিহার নির্বাচনের আগে সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপ ভোটার তালিকা সংক্রান্ত বিতর্ককে নতুন মাত্রা দিয়েছে। আদালত একদিকে নির্বাচন কমিশনের উপর আস্থা রাখছে, অন্যদিকে জনগণের স্বচ্ছতা-সংক্রান্ত উদ্বেগকেও গুরুত্ব দিচ্ছে। ৪ নভেম্বরের শুনানির দিকে এখন সবার নজর, কারণ সেই দিন আদালতের পরবর্তী নির্দেশনা আসতে পারে, যা সরাসরি নির্বাচনী প্রক্রিয়ার উপর প্রভাব ফেলবে। আপাতত ভোটার তালিকা প্রকাশ ও সংশোধনের কাজ নিয়ে উত্তেজনা ও আগ্রহ দুই-ই তুঙ্গে।