পটনা: বিহার বিধানসভা নির্বাচনের আগে মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার দিলেন এক বড় চমক। মঙ্গলবার এক নির্বাচনী সমাবেশে তিনি ঘোষণা করেছেন আগামী পাঁচ বছরে রাজ্য সরকার এক কোটি যুবককে চাকরি দেবে। উন্নয়ন, কর্মসংস্থান ও শান্তির বার্তা দিয়ে নির্বাচনী প্রচারে নতুন গতি আনলেন জেডিইউ নেতা।
নীতিশ কুমার জানান, “আমাদের সরকার ইতিমধ্যেই ৫০ লক্ষ যুবক-যুবতীকে সরকারি চাকরি দিয়েছে। এবার আমরা প্রতিজ্ঞা করেছি আগামী পাঁচ বছরে আরও এক কোটি যুবককে চাকরি দেব।” তাঁর দাবি, বিগত দুই দশকে বিহার সরকার ধারাবাহিকভাবে রাজ্যের উন্নয়নে কাজ করেছে।
সেই উন্নয়নের ধারাকে আরও গতিশীল করতেই এই সিদ্ধান্ত। এই ঘোষণাকে কেন্দ্র করে রাজ্যের রাজনীতিতে তীব্র আলোড়ন তৈরি হয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, ভোটের ঠিক আগে চাকরির প্রতিশ্রুতি নিঃসন্দেহে ভোটারদের মন ছুঁয়ে যাবে বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের।
রাজ্যবাসীর মঙ্গলকামনায় বড়মায়ের মন্দিরে অভিষেক
নীতিশ এদিন তাঁর ভাষণে বিরোধীদেরও কড়া আক্রমণ করেন। তিনি বলেন, “আমাদের আগের সরকারের সময় আইনশৃঙ্খলা ভয়াবহ অবস্থায় ছিল। সন্ধ্যার পর মানুষ ঘর থেকে বেরোতে ভয় পেত। সমাজে ছিল ভেদাভেদ ও সংঘাত। কিন্তু আমরা ক্ষমতায় আসার পর থেকে রাজ্যে এসেছে শান্তি, সম্প্রীতি ও উন্নয়নের বাতাস।”
তিনি আরও যোগ করেন, “তখন শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছিল, রাস্তাঘাট ও বিদ্যুতের অবস্থা ছিল করুণ। কিন্তু আমরা রাজ্যের প্রতিটি ঘরে আলো পৌঁছে দিয়েছি, রাস্তাঘাট উন্নত করেছি, এবং সমাজে ভালোবাসা ও ভ্রাতৃত্বের পরিবেশ তৈরি করেছি।”
নীতিশ কুমারের এই ঘোষণাকে কেন্দ্র করে বিহার নির্বাচনের রাজনীতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। ২০২৫ সালের বিধানসভা ভোটে মূল লড়াই হবে ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (NDA) বনাম মহাগঠবন্ধন-এর মধ্যে।
এনডিএ-তে রয়েছে বিজেপি, জনতা দল (ইউনাইটেড), লোক জনশক্তি পার্টি (রামবিলাস), হিন্দুস্তান আওয়াম মোর্চা (সেক্যুলার) এবং রাষ্ট্রীয় লোক মরচা। অপরদিকে মহাগঠবন্ধনের নেতৃত্বে রয়েছে লালু প্রসাদের আরজেডি, কংগ্রেস, সিপিআই, সিপিআই (এম), এবং দীপঙ্কর ভট্টাচার্য নেতৃত্বাধীন সিপিআই (এমএল)। এদের সঙ্গে রয়েছেন বিকাশশীল ইনসান পার্টির মুকেশ সাহানি।
এদিকে, রাজনৈতিক কৌশলী প্রশান্ত কিশোর-এর দল জন সুরাজ-ও রাজ্যের সব ২৪৩ আসনে লড়ার ঘোষণা দিয়েছে, যা নির্বাচনী সমীকরণকে আরও জটিল করেছে। নির্বাচন কমিশনের নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী, ৬ এবং ১১ নভেম্বর দুই দফায় ভোট গ্রহণ হবে, আর ফল প্রকাশিত হবে ১৪ নভেম্বর।
নীতিশ কুমারের এই চাকরির প্রতিশ্রুতি রাজনৈতিক মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া এনেছে। একদিকে তাঁর সমর্থকরা বলছেন, এটি রাজ্যের যুবকদের প্রতি সরকারের অঙ্গীকারের প্রতিফলন। অন্যদিকে বিরোধীরা প্রশ্ন তুলছে যেখানে বিহারে বেকারত্বের হার এখনও দেশের মধ্যে অন্যতম বেশি, সেখানে এক কোটি চাকরির প্রতিশ্রুতি “বাস্তবসম্মত নাকি কেবল ভোটের কৌশল”?
তবে ভোটের আগের এই ঘোষণা নিঃসন্দেহে নীতিশ কুমারের রাজনৈতিক অবস্থানকে নতুন মাত্রা দিয়েছে। প্রায় দুই দশক ধরে রাজ্যের রাজনীতিতে স্থিতিশীল মুখ হিসেবে নীতিশ আজও উন্নয়ন ও প্রশাসনিক স্থিতিশীলতার প্রতীক হিসেবে নিজেকে তুলে ধরতে চান। এখন দেখার বিষয়, তাঁর এই “ভবিষ্যৎবাণী” ভোটবাক্সে কতটা প্রভাব ফেলে।