গুয়াহাটি, ২০ নভেম্বর: অসমের রাজনৈতিক ময়দানে ফের চাঞ্চল্য। ভোটার তালিকার বিশেষ সংশোধন নিয়ে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে। AIUDF-র বিধায়ক রফিকুল ইসলাম এই নির্দেশকে “বিপজ্জনক ষড়যন্ত্র” বলে আক্রমণ শানিয়েছেন। তাঁর অভিযোগ SR চালুর সিদ্ধান্ত অসমের গণতান্ত্রিক কাঠামো ও জনসংখ্যাগত ভারসাম্য নষ্টের পরিকল্পনা।
একই কণ্ঠে রফিকুলের বক্তব্য ছিল, “নির্বাচন কমিশন জানিয়েছিল, যেহেতু অসমে NRC করা হয়েছে, তাই SIR হবে না। কিন্তু এখন ঘোষণা করা হয়েছে ২২ নভেম্বর থেকে SR চালু হবে।” তিনি জোর দিয়ে বলেন, দেশে ১২টি রাজ্যে এই প্রক্রিয়া চালু হলেও অসমকে আগে ছাড় দেওয়া হয়েছিল NRC সম্পন্ন হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে। কিন্তু হঠাৎ করে SR চালু হওয়াকে তিনি স্বচ্ছ ভোট প্রক্রিয়ার পরিপন্থী বলে দাবি করেছেন।
সিদ্দারামাইয়ার সফর বাতিল, শিবকুমার সমর্থকদের সঙ্গে খার্গের বৈঠক ঘিরে তোলপাড়
তার থেকেও বেশি উদ্বেগের বিষয় হিসেবে রফিকুল ইসলাম ইঙ্গিত করেছেন রাজ্যের প্রধান নির্বাচন আধিকারিকের (CEO) ঘোষণার দিকে। তাঁর ভাষায়, “মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক বলেছেন, ভোটার তালিকা প্রকাশের দু’দিন আগেও কেউ যদি ভোটার ও অসমের বাসিন্দা হওয়ার দাবি জানায়, তাকে গ্রহণ করা হবে।”
এ বক্তব্যের পরই AIUDF-র বিধায়ক তীব্র সুরে অভিযোগ করেন এতে বাইরের লোক রাজ্যে ঢুকে সহজেই ভোটার হয়ে যেতে পারবে। তাঁর দাবি, “এটা এক ভয়ানক ষড়যন্ত্র। RSS ও BJP-এর ক্যাডাররা ঢল নামাবে অসমে, তারপর ভোটার হয়ে যাবে। এটা হতে দেওয়া যাবে না।”
এই মন্তব্যের পর মুহূর্তেই বিষয়টি রাজনৈতিক মহলে আলোড়ন তোলে। বিরোধী দলগুলোর বড় অংশ AIUDF-এর বক্তব্যের সঙ্গে সুর মিলিয়ে বলছে অসমে NRC শেষ হয়েছে মাত্র কয়েক বছর। এমন পরিস্থিতিতে হঠাৎ করে SR চালু করা এনআরসি–পরবর্তী নাগরিক যাচাই প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তাঁদের প্রশ্ন একদিকে NRC তালিকা, অন্যদিকে নতুন ভোটার যোগ দুটি ভিন্ন নাগরিক যাচাই নীতি কীভাবে একসঙ্গে চলবে?
তবে ক্ষমতাসীন শিবিরের অবস্থান সম্পূর্ণ ভিন্ন। বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, SR পুরোপুরি নিয়মমাফিক এবং নির্বাচনী বিশুদ্ধতা রক্ষার উদ্দেশ্যেই শুরু হয়েছে। তাঁদের যুক্তি, প্রত্যেক ভারতীয় নাগরিকের ভোট দেওয়ার অধিকার রয়েছে, এবং যারা আইনগতভাবে ভোটার হওয়ার যোগ্য তাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করতেই এই প্রক্রিয়া। তাই এটিকে ষড়যন্ত্র বলা রাজনৈতিক ইচ্ছাকৃত বিভ্রান্তি ছড়ানো ছাড়া আর কিছুই নয়।
অসমের সাধারণ মানুষও বিভক্ত। এক অংশের উদ্বেগ রাজ্যের জনসংখ্যা কাঠামো পরিবর্তনের সম্ভাবনা ও “বহিরাগত” ইস্যু আবার উত্তপ্ত হবে কি না। অন্যদিকে বহু বাস্তুচ্যুত ও বঞ্চিত নাগরিক মনে করছেন SR চললে তাঁদের নাম অবশেষে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। ফলে উত্তেজনা ও আশঙ্কার পাশাপাশি এক বড় অংশের মানুষের মধ্যে আশাও রয়েছে।
নির্বাচন কমিশন অবশ্য স্পষ্ট করেছে, ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে ডিজিটাল যাচাই, ডকুমেন্ট যাচাই এবং বাড়ি ভিত্তিক শারীরিক ভেরিফিকেশন সবই কার্যকর থাকবে। অর্থাৎ, কোনও গোষ্ঠী বা রাজনৈতিক পক্ষকে বিশেষ সুবিধা দেওয়ার প্রশ্নই নেই। তবে বিরোধীরা আশঙ্কা তুলছেন যাচাই প্রক্রিয়া বাস্তবে কতটা কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হবে সেটাই মূল প্রশ্ন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে ভোটার তালিকার সংবেদনশীলতা আরও বাড়বে। কারণ ভোটার তালিকা সমীকরণের মাধ্যমে আসনভিত্তিক ফলাফল প্রভাবিত হওয়া অস্বাভাবিক নয়।
তাই SR–কে ঘিরে শুরু হওয়া এই বিতর্ক আগামী দিনে আরও তীব্র হতে পারে। এদিকে রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, প্রয়োজনে তাঁরা আদালতেও যাবেন। “আমাদের লড়াই গণতন্ত্র রক্ষার লড়াই,” জানিয়ে তিনি দাবি করেন, রাজ্যের পরিচয়, সংস্কৃতি ও জনগোষ্ঠীর সুরক্ষার প্রশ্নে কোনওভাবেই আপস করা যাবে না।


