গুয়াহাটি: অবৈধ অনুপ্রবেশের দীর্ঘদিনের সমস্যা আবার সামনে এল অসম বিধানসভায়। রাজ্য সরকার জানিয়েছে, ২০২১ থেকে ২০২৫ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত অসমে মোট ৩২,২০৭ জন বিদেশিকে অবৈধভাবে বসবাসকারী হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে, কিন্তু তাঁদের মধ্যে মাত্র ১,৪১৬ জনকে দেশে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়েছে। সংখ্যার এই বিপুল বৈষম্য নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে রাজ্যের ‘ডিটেকশন–ডিলিশন–ডিপোরটেশন’ ব্যবস্থা নিয়ে।
প্রশ্নোত্তর পর্বে কংগ্রেস বিধায়ক আব্দুর রহিম আহমেদের প্রশ্নের জবাবে আসাম অ্যাকর্ড বাস্তবায়ন দফতরের মন্ত্রী অতুল বরা জানান, রাজ্যে অবৈধ বিদেশি শনাক্তকরণের কাজ ধারাবাহিকভাবে চলছে। তিনি বছরভিত্তিক তথ্যও দেন। তথ্যের ভিত্তিতে ২০২১: ৬,৩০৪ জন, ২০২২: ৮,৭৯০ জন, ২০২৩: ৬,৭০৩ জন, ২০২৪: ৬,১২০ জন এবং ২০২৫ (৩১ অক্টোবর পর্যন্ত): ৪,২৯০ জন।
LAC-LoC তে শত্রু হবে নির্মুল, কুশা প্রকল্পে প্রবেশ করল ভারতীয় সেনা
মন্ত্রী আরও জানান, আইন অনুযায়ী অসমে একজনকে “বিদেশি” বলে ঘোষণা করার ক্ষমতা একমাত্র ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালের। ট্রাইব্যুনাল রায় দিলে উচ্চতর আদালতে চ্যালেঞ্জ করার সুযোগ থাকে, যার ফলে অনেক ক্ষেত্রে পুরো প্রক্রিয়া দীর্ঘ ও জটিল হয়ে ওঠে। এছাড়া, বিদেশি ঘোষণা হওয়ার পরেও তাঁদের নিজ দেশ গ্রহণ করতে রাজি না হলে বহিষ্কার প্রক্রিয়াতেও নানা বাধার সৃষ্টি হয়। ফলে শনাক্ত হওয়া বিপুল সংখ্যক বিদেশির অতি অল্প অংশকে ফেরত পাঠানো সম্ভব হচ্ছে।
মন্ত্রী অতুল বোরা বিধানসভায় বলেন, অসম চুক্তি অনুযায়ী ২৫ মার্চ ১৯৭১ তারিখের পর যাঁরা বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশ করেছেন, তাঁদের নাম নির্বাচনী তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে এবং দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে। দীর্ঘ চার দশক পেরিয়ে গেলেও এই সংবেদনশীল সমস্যার সমাধান এখনও বহুলাংশে অপূর্ণ।
এদিন সীমান্ত নিরাপত্তা সম্পর্কেও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেন মন্ত্রী। ভারত–বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমান্তে আসামের মোট ২৬৭.৫ কিলোমিটার এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার কাজ চলছে বহু বছর ধরে। এর মধ্যে ২২৮.৫৪১ কিলোমিটারে কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে, যা ধুবরি, দক্ষিণ সালমারা–মনকাচর, কাছাড় এবং শ্রীভূমি জেলার সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা কিছুটা শক্ত করেছে।
তবে শ্রীভূমির কুশিয়ারা নদীর ধারে ৪.৩৫ কিমি এলাকায় এখনও ফেন্সিং ঝুলে রয়েছে। কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে এলাকা নিয়ে BGB (Border Guard Bangladesh)-এর আপত্তি। ফলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের আলোচনার আগে সেখানে কাজ শুরু করা যাচ্ছে না।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই তথ্য অসমের বহু বছরের বিতর্কিত বিষয় অবৈধ অনুপ্রবেশ আবারও নতুন করে উস্কে দিতে পারে। শনাক্ত হওয়া বিদেশিদের তুলনায় বহিষ্কৃতদের সংখ্যা এত কম হওয়া বিরোধীদের হাতিয়ার হতে পারে। বিরোধীরা ইতিমধ্যেই বলছে, সরকার শুধু “সংখ্যা প্রকাশ” করছে, কার্যকর পদক্ষেপ খুব কম।
অন্যদিকে সরকার বলছে, আইনগত ও আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক জটিলতা থাকা সত্ত্বেও সীমান্ত নিরাপত্তায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে এবং ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে বিদেশি শনাক্তকরণের প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে। এই পরিসংখ্যান প্রকাশের পর রাজ্যে রাজনৈতিক আলোচনায় নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। ভবিষ্যতে NRC, ডিটেনশন ক্যাম্প, সীমান্ত নিরাপত্তা এবং আসাম চুক্তির বাস্তবায়ন নিয়ে বিতর্ক আরও উত্তপ্ত হবে বলেই বিশেষজ্ঞদের ধারণা।
