পটনা, ১২ নভেম্বর: বিহার বিধানসভা নির্বাচনের ভোট গণনা শুরু হওয়ার এখনও দু’দিন বাকি, কিন্তু শহরের রাজেন্দ্র নগরের একটি বিশাল বাড়িতে যেন জয়ের উৎসব শুরু হয়ে গেছে। জেডি(ইউ)-র প্রার্থী, বাহুবলী নেতা অনন্ত কুমার সিংহের বাসভবনের সামনে গত দু’দিন ধরে চলছে তুমুল প্রস্তুতি। সাদা-নীল তাঁবু উঠছে, প্লাস্টিকের চেয়ার সাজানো হচ্ছে সারি সারি, লাল-হলুদ ফেস্টুন ঝুলছে গেটের ওপর।
বাড়ির ভিতর থেকে ভেসে আসছে ঢাক-ঢোলের শব্দ, আর বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা সমর্থকরা চিৎকার করছে—‘অনন্ত জিন্দাবাদ! জয় বিহার!’ যেন ভোটের ফলাফল ঘোষণার আগেই জয় নিশ্চিত।অনন্ত সিংহ—বিহারের রাজনীতিতে যাঁর নাম শুনলেই মনে পড়ে ‘বাহুবলী’ শব্দটি। মোকামা বিধানসভা কেন্দ্র থেকে এবার জেডি(ইউ)-র টিকিটে লড়ছেন তিনি।
দিল্লি বিস্ফোরণ কাণ্ডে চাঞ্চল্যকর মোড়
তাঁর বিরুদ্ধে ৩৮টিরও বেশি ফৌজদারি মামলা রয়েছে—খুন, অপহরণ, চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে অস্ত্র আইন লঙ্ঘন। কিন্তু সেই সব অভিযোগ যেন তাঁর জনপ্রিয়তায় কোনো ছাপ ফেলেনি। বরং মোকামা-বরহামপুর অঞ্চলে তিনি ‘দাদা’। যাঁর এক ইশারায় বন্ধ হয়ে যায় বাজার, চলে যায় সরকারি কাজ। এবার নির্বাচনে তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী আরজেডি-র ললন সিংহ।
কিন্তু অনন্তের সমর্থকরা বলছেন, “একতরফা খেলা হবে। দাদার জয় ছাড়া কোনো রাস্তা নেই।”বুধবার সকাল থেকেই অনন্তের বাসভবনের সামনে ভিড় জমতে শুরু করে। পটনার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা শত শত কর্মী-সমর্থকরা হাতে জেডি(ইউ)-র পতাকা নিয়ে দাঁড়িয়ে। বাড়ির গেটের সামনে একটি বিশাল এলইডি স্ক্রিন বসানো হয়েছে, যেখানে ১৪ নভেম্বর গণনার দিন সরাসরি ফলাফল দেখানো হবে। তার পাশে তৈরি হচ্ছে খাবারের স্টল—বিরিয়ানি, লিট্টি-চোখা, সমোসা, জিলিপি।
এক কর্মী জানালেন, “দাদা বলেছেন, জয়ের দিন পুরো পটনাকে খাওয়াবেন। তাই আগে থেকেই প্রস্তুতি।”অনন্ত সিংহ নিজে এদিন সকালে বাড়ির বারান্দায় দাঁড়িয়ে সমর্থকদের উদ্দেশে হাত নাড়েন। কালো শার্ট, সাদা পাজামা, গলায় জেডি(ইউ)-র গামছা। তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন স্ত্রী নীলম দেবী, যিনি আগে মোকামা থেকে বিধায়ক ছিলেন। নীলম দেবী বলেন, “জনগণ আমাদের সঙ্গে আছে। অনন্ত যা বলেন, তা করে দেখান। এবারও জয় আমাদের।”
তবে প্রশ্ন উঠছে, এত আত্মবিশ্বাসের উৎস কী? নির্বাচন কমিশনের কড়া নজরদারি, ইভিএম-এর সিল, বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী—সবকিছু সত্ত্বেও কেন এত উৎসব?স্থানীয় সূত্র জানাচ্ছে, অনন্তের শিবিরে গত কয়েকদিন ধরে ‘ইনসাইড নিউজ’ ঘুরছে। তাঁদের দাবি, মোকামায় তাঁর লিড ৫০ হাজারের ওপর। বুথ-লেভেলের কর্মীরা ফিডব্যাক দিচ্ছেন, গ্রামে-গ্রামে ভোট পড়েছে ‘দাদার নামে’। এছাড়া, জেডি(ইউ)-র সঙ্গে এনডিএ-র জোট, নীতীশ কুমারের সমর্থন—সব মিলিয়ে অনন্তের শিবির আশাবাদী।
এক সমর্থক বলেন, “দাদা জেলে থাকলেও জিতেছেন। এবার তো বাইরে, কী হবে?”তবে এই উৎসবের ছবি দেখে বিরোধীরা ক্ষুব্ধ। আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব টুইট করেছেন, “যাঁর বিরুদ্ধে খুনের মামলা, তাঁর বাড়িতে জয়ের উৎসব? এটাই কি নীতীশের সুশাসন?”
কংগ্রেস নেতা শক্তি সিংহ গোহিল বলেন, “ভোট গণনার আগে এমন প্রস্তুতি গণতন্ত্রের জন্য বিপজ্জনক। নির্বাচন কমিশনের উচিত নজর রাখা।” পুলিশ প্রশাসনও সতর্ক। পটনা এসএসপি উপেন্দ্র শর্মা জানিয়েছেন, “অনন্ত সিংহের বাড়ির চারপাশে অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে। কোনো অনিয়ম হলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”


