পিএনবি কেলেঙ্কারি মামলায় সিবিআই চার্জশিটে নীরব মোদীর বোন পূর্ণিমা অভিযুক্ত

পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক কেলেঙ্কারির (PNB Scam) ঘটনায় কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো (CBI) গত সোমবার একটি সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট দাখিল করেছে। এই চার্জশিটে প্রধান অভিযুক্ত নীরব মোদীর বোন…

PNB Scam: CBI Charges Nirav Modi’s Sister Purvi Mehta in Supplementary Chargesheet

পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক কেলেঙ্কারির (PNB Scam) ঘটনায় কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো (CBI) গত সোমবার একটি সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট দাখিল করেছে। এই চার্জশিটে প্রধান অভিযুক্ত নীরব মোদীর বোন পুরবী মেহতাকে অভিযুক্ত হিসেবে নাম দেওয়া হয়েছে। বিশেষ সিবিআই আদালতে এই চার্জশিটটি দাখিল করেছেন বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর এ লিমোসিন। এই মামলা, যা ভারতের ব্যাঙ্কিং ইতিহাসে একটি বড় কেলেঙ্কারি হিসেবে পরিচিত, এখনও নতুন মোড় নিচ্ছে।

পুরবী মেহতা ছাড়াও এই সম্পূরক চার্জশিটে ফায়ারস্টার গ্রুপ অফ কোম্পানিজের একজন কর্মকর্তা আদিত্য নানাভাটির নামও অভিযুক্ত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। পুরবী মেহতা, যিনি বেলজিয়ামের নাগরিক, তাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে কারণ তিনি পিএনবি ব্যাঙ্ক থেকে প্রাপ্ত লেটার্স অফ আন্ডারটেকিং (এলওইউ)-এর মাধ্যমে প্রাপ্ত তহবিলের একজন সুবিধাভোগী বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে, আশ্চর্যজনকভাবে, তার স্বামী ময়ঙ্ক মেহতা, যিনি একজন ব্রিটিশ নাগরিক, এই চার্জশিটে অভিযুক্ত হিসেবে নামানো হয়নি।

   

এদিকে, এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) যে মানি লন্ডারিং মামলার তদন্ত করছে, তাতে পুরবী মেহতা ও ময়ঙ্ক মেহতা দম্পতি আগে অভিযুক্ত হিসেবে নামাঙ্কিত হয়েছিলেন। তবে, এখন তারা ইডি মামলায় সাক্ষী হিসেবে সহযোগিতা করার জন্য ‘অ্যাপ্রোভার’ হয়েছেন। এই ঘটনা মামলার গতিপথে নতুন জটিলতা যোগ করেছে।

Advertisements

পিএনবি কেলেঙ্কারির পটভূমি
পিএনবি কেলেঙ্কারি ভারতের ব্যাঙ্কিং খাতে একটি কালো অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত। এই মামলার প্রধান অভিযুক্ত হলেন নীরব মোদী এবং তার মামা মেহুল চক্সি। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা মুম্বাইয়ের পিএনবি ব্যাঙ্কের ব্র্যাডি হাউস শাখার কর্মকর্তাদের ঘুষ দিয়ে লেটার্স অফ আন্ডারটেকিং (এলওইউ) এবং ফরেন লেটার্স অফ ক্রেডিট (এফএলসি) ব্যবহার করে ১৩,০০০ কোটি টাকারও বেশি সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। এই কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে আসার আগে, ২০১৮ সালে মেহুল চক্সি ভারত থেকে পালিয়ে অ্যান্টিগুয়ায় আশ্রয় নেন। তবে, সাম্প্রতিক একটি গণমাধ্যমের রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে যে চক্সি বর্তমানে তার স্ত্রী প্রীতি চক্সির সঙ্গে বেলজিয়ামের অ্যান্টওয়ার্পে বসবাস করছেন। তিনি সেখানে একটি ‘রেসিডেন্সি কার্ড’ পেয়েছেন বলেও জানা গেছে।

অন্যদিকে, নীরব মোদী গত ছয় বছর ধরে লন্ডনের একটি কারাগারে বন্দি রয়েছেন। ভারত সরকার তার প্রত্যর্পণের জন্য আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু এখনও সে প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়নি।

কীভাবে ঘটেছিল এই কেলেঙ্কারি?
পিএনবি কেলেঙ্কারির মূল ঘটনা শুরু হয়েছিল মুম্বাইয়ের ব্র্যাডি হাউস শাখায়। নীরব মোদী এবং মেহুল চক্সির সংস্থাগুলো ব্যাঙ্কের কাছ থেকে এলওইউ এবং এফএলসি প্রাপ্তির মাধ্যমে বিদেশে অর্থ স্থানান্তর করত। এই প্রক্রিয়ায় ব্যাঙ্কের কিছু অসাধু কর্মকর্তা তাদের সহায়তা করেছিল বলে অভিযোগ। এই এলওইউগুলোর মাধ্যমে তারা বিদেশি ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়েছিল, যা পরে ফেরত দেওয়া হয়নি। ফলে পিএনবি-র উপর বিপুল পরিমাণ আর্থিক চাপ পড়ে। এই কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে আসার পর ভারতের ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার নিরাপত্তা ও স্বচ্ছতা নিয়ে বড় প্রশ্ন উঠে আসে।

পুরবী মেহতার ভূমিকা
সিবিআই-এর তদন্তে উঠে এসেছে যে পুরবী মেহতা এই কেলেঙ্কারির মাধ্যমে প্রাপ্ত তহবিলের একজন গুরুত্বপূর্ণ সুবিধাভোগী। তিনি নীরব মোদীর ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে কাজ করেছেন বলে অভিযোগ। তবে, তার স্বামী ময়ঙ্ক মেহতাকে সিবিআই অভিযুক্ত না করায় অনেকের মনে প্রশ্ন উঠেছে। ইডি মামলায় এই দম্পতির ‘অ্যাপ্রোভার’ হওয়ার সিদ্ধান্ত কি সিবিআই-এর তদন্তে প্রভাব ফেলেছে? এই প্রশ্নের উত্তর এখনও স্পষ্ট নয়।

তদন্তের অগ্রগতি ও ভবিষ্যৎ
সিবিআই এবং ইডি এই মামলায় সমান্তরালভাবে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে। নীরব মোদী ও মেহুল চক্সির প্রত্যর্পণের প্রক্রিয়া এখনও চলমান। ভারত সরকার এই কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত সবাইকে বিচারের আওতায় আনতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে, অভিযুক্তদের বিদেশে থাকা এবং আইনি জটিলতার কারণে এই প্রক্রিয়া দীর্ঘসূত্রী হয়ে পড়েছে।

এদিকে, পুরবী মেহতার নাম চার্জশিটে অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় এই মামলায় নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। তিনি কি ভারতের হাতে ধরা দেবেন, নাকি নীরব মোদী ও মেহুল চক্সির মতো বিদেশে থেকেই আইনি লড়াই চালিয়ে যাবেন—তা সময়ই বলবে। এই কেলেঙ্কারি শুধু আর্থিক ক্ষতির গল্প নয়, বরং জনগণের ভরসার উপর একটি বড় আঘাত। তদন্তকারী সংস্থাগুলোর উপর এখন দায়িত্ব রয়েছে এই মামলার ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা।