পাণ্ডুলিপি সংরক্ষণে নতুন দিগন্ত, মোদীর হাত ধরে উদ্বোধন হল ‘জ্ঞান ভারতম পোর্টাল’

নয়াদিল্লি, ১২ সেপ্টেম্বর : প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী শুক্রবার নয়াদিল্লির বিজ্ঞান ভবনে ‘জ্ঞান ভারতম পোর্টাল’ উদ্বোধন করলেন। এটি একটি যুগান্তকারী জাতীয় উদ্যোগ, যার মূল লক্ষ্য ভারতের…

PM Modi launches 'Gyan Bharatam Portal'

নয়াদিল্লি, ১২ সেপ্টেম্বর : প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী শুক্রবার নয়াদিল্লির বিজ্ঞান ভবনে ‘জ্ঞান ভারতম পোর্টাল’ উদ্বোধন করলেন। এটি একটি যুগান্তকারী জাতীয় উদ্যোগ, যার মূল লক্ষ্য ভারতের বিপুল পাণ্ডুলিপি ঐতিহ্যের সংরক্ষণ, ডিজিটাইজেশন এবং বিশ্বব্যাপী জনসাধারণের কাছে তা পৌঁছে দেওয়া। এই উপলক্ষে আয়োজিত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী এবং সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের প্রদর্শনীও পরিদর্শন করেন।

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ১১ থেকে ১৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিজ্ঞান ভবনে অনুষ্ঠিত হচ্ছে প্রথম জ্ঞান ভারতম আন্তর্জাতিক সম্মেলন— “পাণ্ডুলিপি ঐতিহ্যের মাধ্যমে ভারতের জ্ঞানঐতিহ্য পুনরুদ্ধার” শীর্ষক এই সম্মেলনে দেশ-বিদেশের ১,১০০-রও বেশি পণ্ডিত, গবেষক, প্রতিষ্ঠান ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব অংশ নিচ্ছেন। সম্মেলনটি ভারতের প্রাচীন জ্ঞানভাণ্ডারকে আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় পুনর্জীবিত করার এক ঐতিহাসিক প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে।

   

Read More: Textile Giants: বাংলাদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে ভারতে তিন টেক্সটাইল জায়েন্ট

প্রধানমন্ত্রী মোদী উদ্বোধনী ভাষণে বলেন, “জ্ঞান ভারতম শুধু একটি পোর্টাল নয়, এটি ভারতের সভ্যতার মূল শিকড়ের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য। একইসঙ্গে এটি আমাদের ভবিষ্যতের জন্যও এক অগ্রণী পদক্ষেপ, যাতে ২০৪৭ সালের মধ্যে বিকশিত ভারতের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে।” তিনি আরও জানান, ভারতের প্রাচীন জ্ঞানের সঙ্গে আধুনিক প্রযুক্তির মেলবন্ধনই ভারতকে “বিশ্বগুরু” হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে।

জ্ঞান ভারতম পোর্টালের লক্ষ্য ও কার্যক্রম:

‘জ্ঞান ভারতম’ পোর্টালকে একটি সর্বাঙ্গীণ কাঠামো হিসেবে তৈরি করা হয়েছে। এর মাধ্যমে সারা দেশের পাণ্ডুলিপিগুলির চিহ্নিতকরণ ও নথিভুক্তি করে জাতীয় রেজিস্ট্রি তৈরি করা হবে। ভঙ্গুর পাণ্ডুলিপির সংরক্ষণ ও পুনর্নির্মাণে বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহৃত হবে। পাশাপাশি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI)-নির্ভর টুলসের সাহায্যে বৃহৎ পরিসরে ডিজিটাইজেশন চালানো হবে এবং একটি জাতীয় ডিজিটাল ভাণ্ডার গড়ে তোলা হবে।

Advertisements

শুধু সংরক্ষণই নয়, বিরল পাণ্ডুলিপির গবেষণা, অনুবাদ ও প্রকাশনার দিকেও জোর দেওয়া হবে। পণ্ডিত ও সংরক্ষণকারীদের প্রশিক্ষণ, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম উন্নয়ন এবং সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে এই উদ্যোগ বিশ্বজুড়ে ভারতীয় জ্ঞানের বিস্তার ঘটাবে। এছাড়াও শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে পাণ্ডুলিপি জ্ঞানের সংযুক্তিকরণকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা:
সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই পোর্টাল ও সম্মেলন ভারতের পাণ্ডুলিপি ঐতিহ্যকে নতুনভাবে বিশ্বদরবারে উপস্থাপন করবে। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে বিপুল সংখ্যক পাণ্ডুলিপি শনাক্তকরণ ও নথিভুক্তকরণের কাজ শুরু হয়েছে। সম্মেলনে দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞদের উপস্থিতি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভারতীয় ঐতিহ্যের গুরুত্ব আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

অতীত ও ভবিষ্যতের সেতুবন্ধন:
ভারতবর্ষের বহু প্রাচীন জ্ঞান— দর্শন, বিজ্ঞান, গণিত, চিকিৎসা, জ্যোতির্বিজ্ঞান— আজও ছড়িয়ে আছে দেশের নানা প্রান্তে রক্ষিত পাণ্ডুলিপির ভাণ্ডারে। কিন্তু সংরক্ষণ ও আধুনিকায়নের অভাবে সেগুলির একটি বড় অংশ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ‘জ্ঞান ভারতম’ সেই হারানো ঐতিহ্যকে উদ্ধার করে বিশ্বের কাছে পৌঁছে দিতে চলেছে।

এই জাতীয় উদ্যোগ কেবল সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সংরক্ষণ নয়, বরং ভারতের জ্ঞানসম্ভারকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য উপলব্ধ ও প্রাসঙ্গিক করে তোলারও এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। প্রধানমন্ত্রী মোদীর কথায়, “আমাদের গৌরবময় অতীতের জ্ঞানকে আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় নতুন রূপে বিশ্বমঞ্চে প্রতিষ্ঠিত করাই জ্ঞান ভারতম-এর মূল লক্ষ্য।”