আগামী ৯ সেপ্টেম্বর হতে চলেছে দেশের উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচন। বর্তমান উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনকড়ের উত্তরসূরি খুঁজতে রাজনৈতিক মহল ইতিমধ্যেই সরগরম। এনডিএ শিবির রবিবার আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেছে তাদের প্রার্থী—প্রবীণ বিজেপি নেতা সিপি রাধাকৃষ্ণণের নাম। প্রার্থী ঘোষণার পর থেকেই একযোগে সমর্থন আদায়ের প্রচারে নেমে পড়েছে বিজেপি। এই প্রচারে এবার যোগ দিলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (PM Modi)।
মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে স্পষ্ট হয়েছে যে, এনডিএ চাইছে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতাতেই এই নির্বাচন শেষ হোক। মোদি বলেন, “রাধাকৃষ্ণন মাটির মানুষ, সারাজীবন বিতর্ক থেকে শতহস্ত দূরে থেকেছেন। তিনি যোগ্য প্রার্থী, তাই উপরাষ্ট্রপতি পদের জন্য তাঁকেই সমর্থন করা উচিত।” এদিন প্রধানমন্ত্রী বিরোধী শিবিরকে সরাসরি আবেদন জানান, এনডিএ প্রার্থীকেই যেন সমর্থন করা হয়, যাতে কোনও অপ্রয়োজনীয় রাজনৈতিক সংঘাত না হয়।
প্রধানমন্ত্রী আরও স্মরণ করিয়ে দেন, এনডিএ প্রার্থীর সমর্থনে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং ইতিমধ্যেই বিরোধীদের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছেন। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গেকে ফোন করেছেন তিনি। একই সঙ্গে নির্বাচনী এজেন্টের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেন রিজিজুকে। সবদিক থেকে কার্যত সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে বিজেপি শিবির।
তবে বিরোধী INDIA জোট যে এত সহজে বিজেপির আবেদন রাখবে না, তা একপ্রকার নিশ্চিত। সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই বিরোধী শিবিরে উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচন ঘিরে তোড়জোড় শুরু হয়েছে। কানাঘুষো রয়েছে, ডিএমকের প্রবীণ নেতা তথা রাজ্যসভার সাংসদ তিরুচি সিবা হতে পারেন INDIA জোটের প্রার্থী। রাজনৈতিক মহলের মতে, রাধাকৃষ্ণণের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবেই দক্ষিণ ভারতের একজন অভিজ্ঞ নেতাকে ময়দানে নামানোর চিন্তাভাবনা করছে বিরোধীরা।
এই পরিস্থিতি স্পষ্ট করছে যে, উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিজেপি ও বিরোধী জোট—দুই শিবিরই দক্ষিণী রাজনীতির ভারসাম্যের দিকে নজর দিচ্ছে। কারণ দক্ষিণ ভারতে বিজেপির প্রভাব তুলনায় দুর্বল, সেই জায়গায় বিরোধীরা নিজেদের অবস্থান শক্ত করতে চাইছে।
রবিবার বিজেপির তরফে প্রার্থী ঘোষণা করার পর প্রধানমন্ত্রী এক্স হ্যান্ডেলে রাধাকৃষ্ণণের প্রশংসা করে লিখেছিলেন, “রাধাকৃষ্ণণ দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে কখনও বিতর্কে জড়াননি। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে।” তিনি তামিলনাড়ুর একজন অভিজ্ঞ রাজনৈতিক নেতা হিসেবে বহু বছর ধরে সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করেছেন। এনডিএ শিবির মনে করছে, তাঁর প্রার্থিতায় বিরোধীরা এককাঠি হলেও সমর্থন জানাবে।
যদিও বাস্তব ছবি ভিন্ন। বিরোধী জোটের ভেতরে স্পষ্ট বার্তা পাওয়া যাচ্ছে—বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থী জেতার পথ তারা প্রশস্ত করবে না। এনডিএর প্রার্থীর বিরুদ্ধে নিজেদের প্রার্থী দাঁড় করাতে চাইছে INDIA জোট। সেই উদ্দেশ্যে ডিএমকের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। ফলে উপ-রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের লড়াই কার্যত দক্ষিণ ভারতের রাজনৈতিক মহলকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হবে বলেই মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল।
সব মিলিয়ে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরাসরি বিরোধীদের উদ্দেশে আবেদন স্পষ্ট করে দিচ্ছে যে বিজেপি চাইছে একটি সর্বসম্মত নির্বাচন। কিন্তু বিরোধীরা যে পাল্টা কৌশল নিয়ে ময়দানে নামবে তা প্রায় নিশ্চিত। আগামী ৯ সেপ্টেম্বরের নির্বাচন তাই দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এক বড়সড় পরীক্ষার মঞ্চ হয়ে উঠতে চলেছে।