ভারতের সংসদের শীতকালীন অধিবেশন (Parliament Winter Session 2025) ২০২৫ আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়ে ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে। কেন্দ্রীয় সংসদীয় বিষয়ক মন্ত্রী কিরণ রিজিজু শনিবার (৮ নভেম্বর ২০২৫) এই গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা করেন। সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ‘এক্স’–এ (আগের টুইটার) করা একটি পোস্টে তিনি জানান, “মাননীয়া রাষ্ট্রপতি শ্রীমতী দ্রৌপদী মুর্মু জি সরকারের সংসদের শীতকালীন অধিবেশন আহ্বানের প্রস্তাব অনুমোদন করেছেন। এই অধিবেশন ১ ডিসেম্বর থেকে ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে (সংসদীয় কাজের প্রয়োজন অনুসারে সময়ে কিছু পরিবর্তন হতে পারে)।”
মন্ত্রী আরও উল্লেখ করেন, “দেশের গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে, মানুষের আশা–আকাঙ্ক্ষাকে সম্মান জানাতে এবং গঠনমূলক বিতর্কের মাধ্যমে সংসদকে আরও কার্যকর করে তুলতে আমরা একটি অর্থবহ অধিবেশনের প্রত্যাশা করছি।”
এই ঘোষণার পর থেকেই রাজনৈতিক মহলে উত্তেজনা বাড়তে শুরু করেছে। সংসদের শীতকালীন অধিবেশন সবসময়ই রাজনৈতিক ও আইনগত দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়। সরকার যেমন একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিল পেশের প্রস্তুতি নেয়, তেমনই বিরোধীরাও নানা বিষয়কে কেন্দ্র করে সংসদে সরব হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না বলেই মনে করা হচ্ছে।
গত ২১ জুলাই থেকে ২১ আগস্ট ২০২৫ পর্যন্ত চলে সংসদের বর্ষাকালীন অধিবেশন। ওই অধিবেশনে মোট ১২টি বিল লোকসভায় এবং ১৪টি বিল রাজ্যসভায় পাস হয়। তবে অধিবেশন শুরু থেকেই বারবার অচলাবস্থা তৈরি হয়।
বিরোধীরা ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে আলোচনার দাবিতে সরব হয়, যার ফলে একাধিকবার সংসদের কাজ স্থগিত রাখতে হয়। পরে বিহারের ‘ভোটার তালিকার স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন (SIR)’ প্রসঙ্গেও তুমুল বিতর্ক ও হট্টগোল দেখা যায়। একাধিকদিন সংসদের কার্যক্রম বাধাপ্রাপ্ত হওয়ায় পূর্ণাঙ্গ আলোচনার পরিবেশও কিছুটা ব্যাহত হয়।
২০২৪ সালের শীতকালীন অধিবেশনও ছিল অত্যন্ত নাটকীয় ও উত্তপ্ত। সংবিধানের ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে আলোচনা, উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়ের বিরুদ্ধে বিরোধীদের অনাস্থা প্রস্তাব, এলাহাবাদ হাইকোর্টের এক বিচারপতির ইমপিচমেন্ট নোটিশ এবং সংবিধানের প্রণেতা ড. বি. আর. আম্বেদকরের ‘অপমান’ ইস্যুতে তুমুল বাদানুবাদ— সব মিলিয়ে সেই অধিবেশন রাজনৈতিক উত্তাপে ফুটন্ত ছিল।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০২৫-এর শীতকালীন অধিবেশনে সরকারের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিল আনা হতে পারে, যার মধ্যে থাকতে পারে, ডিজিটাল ডেটা সুরক্ষা ও সাইবার নিরাপত্তা সংক্রান্ত সংশোধনী, শিক্ষা ও কর্মসংস্থান নীতি, স্বাস্থ্য কাঠামো ও বীমা সুবিধা, কৃষি, গ্রামীণ ব্যাংক ব্যবস্থা ও MSP সংক্রান্ত আলোচনাও, নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় সংস্কার সম্পর্কিত প্রস্তাব।
অন্যদিকে বিরোধী দলগুলো মুদ্রাস্ফীতি, বেকারত্ব, জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি, জনকল্যাণমূলক প্রকল্পের তহবিল বরাদ্দ, রাষ্ট্র–রাজ্যের আর্থিক বণ্টন, সংখ্যালঘু অধিকার, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, এবং বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পের বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা ইস্যু তুলে ধরতে পারে।
সংসদ হল দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামোর হৃদয়। নাগরিকদের আশা–আকাঙ্ক্ষা, ক্ষোভ–প্রতিবাদ, উন্নয়ন পরিকল্পনা, সংবিধান রক্ষা— সবকিছুই এই মঞ্চে প্রতিফলিত হয়। সরকার ও বিরোধী দল একসঙ্গে বিতর্ক, আলোচনার মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যায় – এটাই সংসদের মূল লক্ষ্য।
জনমহলের প্রত্যাশা, আসন্ন অধিবেশনে কম অচলাবস্থা, বেশি আলোচনা হবে। সীমাবদ্ধ রাজনৈতিক সংঘাতের বাইরে গিয়ে নাগরিকদের স্বার্থে আইন প্রণয়ন হবে।
শীতকালীন অধিবেশনকে ঘিরে তাই দেশের রাজনৈতিক মানচিত্রে এখন থেকেই উত্তাপ বাড়ছে। কোন বিল পেশ হবে? কোন ইস্যুতে বিরোধীরা সরকারকে চাপে ফেলবে? সরকারের কৌশল কী হবে? সংসদে নতুন ইতিহাস তৈরি হবে নাকি আবার অচলাবস্থা? এসব প্রশ্ন এখন ঘুরছে দেশজুড়ে।
