ভারতীয় রেলের পরিষেবা নিয়ে একদিকে যেমন গর্বের শেষ নেই, তেমনই অন্যদিকে বেড়ে চলেছে নানা অনিয়ম ও জালিয়াতির ঘটনা। এবার তারই জ্বলন্ত উদাহরণ বিহার থেকে আসা সম্পর্ক ক্রান্তি এক্সপ্রেস ট্রেনের প্যান্ট্রিকারে (Pantry Car)। উত্তর-পূর্ব রেলের এই ট্রেনে সম্প্রতি এমন এক কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটল যা রীতিমতো রেল কর্তৃপক্ষের চোখ খুলে দিয়েছে।
ঘটনা সূত্রে জানা গিয়েছে, ১২৫৬৫ বিহার সম্পর্ক ক্রান্তি এক্সপ্রেসের প্যান্ট্রি কারে (Pantry Car) চলছিল বড়সড় টিকিট কেলেঙ্কারি। বাদশাহনগর ও আইশবাগ স্টেশনের মধ্যবর্তী রুটে আচমকা এক অভিযান চালিয়ে গোটা বিষয়টি ফাঁস করেন সিনিয়র ডিসিএম আশুতোষ গুপ্তের নেতৃত্বাধীন এক রেল তদন্তকারী দল।
অভিযান এবং ফাঁস হওয়া তথ্য:
ঘটনার দিন নির্ধারিত সময়েই চলছিল ট্রেন। হঠাৎ খবর আসে যে, প্যান্ট্রি কারে (Pantry Car) টিকিট ছাড়া বহু যাত্রী ভ্রমণ করছেন। এরপরই বিশেষ বাহিনী নিয়ে ট্রেনের রান্নাঘর, অর্থাৎ প্যান্ট্রি কারে ঢোকেন রেল আধিকারিকরা। দরজা খোলার পর চক্ষু চড়কগাছ! সেখানে গাদাগাদি করে বসে রয়েছেন ২৪ জন যাত্রী, যাঁদের কারোরই কোনও ট্রেনের বৈধ টিকিট নেই।
প্যান্ট্রি কর্মীদের বড়সড় জড়িত থাকার অভিযোগ:
প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, এই অবৈধ যাত্রার পিছনে বড় ভূমিকা রয়েছে প্যান্ট্রি কারের (Pantry Car) কর্মীদের। অভিযোগ, প্রতি যাত্রীর কাছ থেকে গড়ে ১,০০০ টাকা করে নিয়ে এই অবৈধ যাত্রার বন্দোবস্ত করত তারা। অর্থাৎ দীর্ঘদিন ধরেই এই চক্র চালাচ্ছিল ওই প্যান্ট্রি কর্মীরা।
জরিমানা ও রেলের পদক্ষেপ:
ঘটনাস্থলেই ২৪ জন টিকিটবিহীন যাত্রীর কাছ থেকে মোট ২৮,৫০০ টাকা জরিমানা আদায় করে রেল। শুধু তাই নয়, ওই ট্রেনের প্যান্ট্রি কার (Pantry Car) পরিচালনার দায়িত্বে থাকা সংস্থার বিরুদ্ধেও জরিমানার সুপারিশ করেছে রেল কর্তৃপক্ষ। রেল সূত্রে খবর, ওই সংস্থার লাইসেন্সও খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আগেও অভিযোগ ছিল:
রেল সূত্রে জানা গেছে, বিশেষ করে বিহার থেকে আসা ট্রেনগুলিতে টিকিটবিহীন যাত্রীদের সংখ্যা আগেও বাড়তে দেখা গিয়েছে। সম্প্রতি বেশ কিছুদিন ধরেই সম্পর্ক ক্রান্তি এক্সপ্রেসের প্যান্ট্রি কার (Pantry Car) নিয়ে একাধিক অভিযোগ আসছিল। সেই কারণেই এই বিশেষ অভিযান চালানো হয়।
সোশ্যাল মিডিয়ার ক্ষোভ:
ঘটনার কথা ছড়িয়ে পড়তেই সোশ্যাল মিডিয়ায় রীতিমতো ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। নেটিজেনদের একাংশের প্রশ্ন, এত বড় চক্র চলছিল অথচ এতদিন রেল কর্তৃপক্ষ কী করছিল? শুধু জরিমানা আদায় করেই কি শেষ হবে এই তদন্ত?
রেলের আশ্বাস:
রেলের তরফে জানানো হয়েছে, পুরো বিষয়টির নিরপেক্ষ তদন্ত চলছে। প্রয়োজনে প্যান্ট্রি কারের (Pantry Car) লাইসেন্স বাতিল করা হতে পারে। ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা এড়াতে রেল তাদের মনিটরিং আরও জোরদার করার পরিকল্পনা করছে।
একদিকে যাত্রী নিরাপত্তা ও পরিষেবা বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি, অন্যদিকে প্যান্ট্রি কারের অভ্যন্তরে টিকিটবিহীন যাত্রার মতো ঘটনা—ভারতীয় রেলের ভাবমূর্তি ফের প্রশ্নের মুখে। সাধারণ যাত্রীদের দাবী, শুধু জরিমানা নয়, এই ধরনের ঘটনার জন্য কঠোর শাস্তি ও নজরদারি নিশ্চিত করুক রেল কর্তৃপক্ষ।