নির্বাচন কমিশন (Election Commission of India-ECI) এই বছর দেশের সমস্ত রাজ্যে বিশেষ তীব্র নির্বাচন তালিকা সংশোধন বা Special Intensive Revision (SIR) পরিচালনার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। সূত্রের খবর, ভারত টুডের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই ঘোষণাটি হয়তো বিহার নির্বাচন শেষ হওয়ার আগেই আসতে পারে। বিভিন্ন রাজ্যে প্রাথমিক কাজ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা অক্টোবরে SIR কার্যক্রম শুরু করার পথ প্রশস্ত করবে।
সাক্ষাৎকারে নির্বাচনী কর্মকর্তারা (CEOs) কমিশনকে আশ্বাস দিয়েছেন যে, সংশোধনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সেপ্টেম্বরের মধ্যে শেষ করা সম্ভব। ভারতের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসাবে ধরা হচ্ছে।
একটি তিন ঘণ্টা ত্রিশ মিনিটের দীর্ঘ বৈঠকে নির্বাচন কমিশন দেশব্যাপী SIR-এর যৌক্তিকতা ও কার্যক্রমের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেছে। বৈঠকে রাজ্য সচিবদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, ভোটার যাচাই করার জন্য কোন কোন ডকুমেন্ট স্বীকৃত হবে তা তালিকাভুক্ত করতে হবে। এগুলো স্থানীয়ভাবে সহজলভ্য এবং স্বীকৃত সনদপত্রের উপর ভিত্তি করে প্রণয়ন করা হবে।
উদাহরণস্বরূপ, সংখ্যালঘু উপজাতি অঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং উপকূলীয় রাজ্যে স্বায়ত্তশাসিত কাউন্সিল বা স্থানীয় সংস্থা কর্তৃক প্রদত্ত সনদগুলো প্রায়শই পরিচয় ও বসবাসের বৈধ প্রমাণ হিসেবে গণ্য হয়।
ইসি-এর সঙ্গে বুধবার অনুষ্ঠিত বৈঠকটি ছিল গুরুত্বপূর্ণ। এতে রাজ্য সচিবরা উপস্থিত ছিলেন এবং তারা SIR কার্যক্রমের জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে কমিশনকে জানিয়েছেন। বিশেষ করে বিহারের চিফ ইলেকটোরাল অফিসার (CEO) বিহার রাজ্যে SIR প্রয়োগের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন।
ফেব্রুয়ারিতে গিয়ানেশ কুমার চিফ ইলেকশন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব নেন। এরপর থেকে এটি কমিশনের তৃতীয় বৈঠক। তবে PTI-এর সূত্র অনুযায়ী বুধবারের বৈঠকটি বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ ছিল, কারণ এতে পুরো দেশে SIR কার্যক্রমের জন্য প্রস্তুতির বাস্তব অবস্থা বিশ্লেষণ করা হয়।
সূত্রের খবর, এই বছরের শেষে SIR কার্যক্রম শুরু হওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, যা আসন্ন ২০২৬ সালের অসম, কেরল, পুদুচেরি, তামিলনাড়ু এবং পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের আগে সম্পন্ন হবে।
নির্বাচন কমিশনের মতে, এই তীব্র সংশোধনের মূল উদ্দেশ্য হল অবৈধ বিদেশি নাগরিকদের ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া। বাড়ি বাড়ি যাচাই কার্যক্রম চালিয়ে ভোটার তালিকার সঠিকতা নিশ্চিত করা হবে।
তবে, বিরোধী দলের অভিযোগ রয়েছে যে, ভোটার তালিকায় BJP-কে সুবিধা দিতে ভোটার তালিকা মনিপুলেট করা হচ্ছে। এ অভিযোগ মোকাবিলায় কমিশন নতুন কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো নতুন ‘ডিক্লারেশন ফর্ম’ যা নির্বাচনী অন্তর্ভুক্তি বা অন্য রাজ্য থেকে স্থানান্তরিত হওয়ার জন্য আবেদনকারীদের পূরণ করতে হবে।
ফর্মে উল্লেখ থাকতে হবে যে, যাঁরা ১ জুলাই ১৯৮৭ সালের আগে জন্মগ্রহণ করেছেন, তাঁরা ভারতীয় জন্মস্থান প্রমাণসহ জন্মতারিখ এবং স্থান সংক্রান্ত ডকুমেন্ট জমা দেবেন। এছাড়া, ১ জুলাই ১৯৮৭ থেকে ২ ডিসেম্বর ২০০৪ সালের মধ্যে জন্মগ্রহণকারীদের তাদের পিতামাতার জন্মসংক্রান্ত ডকুমেন্টও জমা দিতে হবে।
বিহারের বিরোধী দলগুলি এই কার্যক্রমের কঠোর সমালোচনা করেছে। তারা বলেছে, “কোটি কোটি যোগ্য নাগরিক দস্তাবেজের অভাবে ভোটার অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে পারেন।” তবে, সুপ্রিম কোর্ট নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছে যে, কোনও যোগ্য নাগরিককে ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া যাবে না।
কিছু রাজ্য ইতিমধ্যেই পূর্ববর্তী ভোটার তালিকা আপলোড করেছে। উদাহরণস্বরূপ, দিল্লির শেষ তীব্র সংশোধন ২০০৮ সালে হয়েছে, আর উত্তরাখণ্ডের ২০০৬ সালে। বর্তমানে কমিশন বিহারের ২০০৩ সালের ভোটার তালিকাকে SIR-এর ভিত্তি হিসেবে ব্যবহার করছে।
অনেকে মনে করেন, ২০০২ থেকে ২০০৪ সালের মধ্যে অন্যান্য রাজ্যগুলোও এই ধরনের সংশোধন করেছে। সেই তালিকা ও রেকর্ডগুলো বর্তমান SIR কার্যক্রমের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কাট-অফ রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহৃত হবে।
SIR কার্যক্রমের মাধ্যমে ভোটারদের নির্ভুল তথ্য নিশ্চিত করা হবে। তবে একই সাথে দস্তাবেজের অভাব, স্থানীয় স্বীকৃতি ও প্রক্রিয়াগত জটিলতা ভোটারদের জন্য চ্যালেঞ্জ হতে পারে। নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যেই স্থানীয় স্বীকৃত ডকুমেন্টগুলোকে বৈধ করার চেষ্টা করছে। এতে বিশেষ করে সংখ্যালঘু, উপজাতি ও কোস্টাল এলাকার মানুষ সুবিধা পাবেন।
বৃহত্তর পরিকল্পনা হলো, SIR-এর মাধ্যমে দেশের সমস্ত ভোটার তালিকা আধুনিক, স্বচ্ছ এবং বৈধ হবে। এটি শুধু ভোটারদের জন্য নয়, নির্বাচনী প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতার জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তীব্র নির্বাচন তালিকা সংশোধন (SIR) দেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে ধরা হচ্ছে। এটি ভোটার তালিকার স্বচ্ছতা ও নির্ভুলতা নিশ্চিত করবে, একই সাথে অবৈধ ভোটারদের শনাক্ত করার সুযোগও প্রদান করবে। যদিও বিরোধী দল ও কিছু রাজ্য সরকারের আশঙ্কা রয়েছে, কমিশন নিয়ম ও স্থানীয় বাস্তবতার সাথে মিলিয়ে কার্যক্রম পরিচালনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
প্রসঙ্গত, SIR কার্যক্রমের সঠিক সময়সূচী, প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টের তালিকা এবং রাজ্যভিত্তিক নিয়মাবলী সম্পর্কে ভোটারদের সচেতন করা হবে। এই উদ্যোগ দেশের নির্বাচনী স্বচ্ছতা ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি মানুষের আস্থা বৃদ্ধি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।