ভুল করে নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরোনোয় গ্রেফতার পাকিস্তানী যুবক

জম্মু ও কাশ্মীরের পুঞ্চ জেলায় নিয়ন্ত্রণ রেখা (LOC) বরাবর মঙ্গলবার এক ২৬ বছর বয়সী পাকিস্তানি (pakistani) অনুপ্রবেশকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এই গ্রেপ্তারের…

pakistani youth arrested in loc

জম্মু ও কাশ্মীরের পুঞ্চ জেলায় নিয়ন্ত্রণ রেখা (LOC) বরাবর মঙ্গলবার এক ২৬ বছর বয়সী পাকিস্তানি (pakistani) অনুপ্রবেশকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এই গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটেছে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক উত্তেজনা এবং পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার পর সীমান্তে প্রায় প্রতিদিনের মতো যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের মধ্যে। গত ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে ঘটে যাওয়া ওই হামলায় ২৬ জন, বেশিরভাগই পর্যটক, নিহত হয়েছিলেন।

গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তি ওয়াকাস (pakistani)

গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তি ওয়াকাস, পাকিস্তান (pakistani)-অধিকৃত কাশ্মীরের (POK) তর্খাল গ্রামের বাসিন্দা। কর্মকর্তাদের মতে, তিনি চাকান-দা-বাগ এলাকার একটি অগ্রবর্তী গ্রামে নিয়ন্ত্রণ রেখা অতিক্রম করে ভারতীয় ভূখণ্ডে প্রবেশ করার পরপরই সতর্ক ভারতীয় সেনাবাহিনীর হাতে ধরা পড়েন।

   

ওয়াকাস জানিয়েছেন

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ওয়াকাস (pakistani) জানিয়েছেন, তিনি অনিচ্ছাকৃতভাবে তার গ্রাম থেকে এলওসি অতিক্রম করেছেন। গ্রেপ্তারের সময় তার কাছ থেকে কোনো অপরাধমূলক সামগ্রী উদ্ধার করা যায়নি বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

সড়ক দুর্ঘটনা? এবার দেড় লক্ষ টাকা পর্যন্ত মিলবে ক্যাশলেস চিকিৎসার সুবিধা

ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা

এই ঘটনা পহেলগাঁও হামলার পর ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে ঘটেছে। পাকিস্তান-ভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বার সঙ্গে যুক্ত দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ) এই হামলার দায় স্বীকার করেছিল। ভারতীয় কর্তৃপক্ষের দাবি, এই হামলায় পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্সের (আইএসআই) নির্দেশনা ছিল।

পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন

হামলার পর থেকে পাকিস্তানি (pakistani) সেনাবাহিনী এলওসি বরাবর ক্রমাগত যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে চলেছে। ৫-৬ মে রাতে পাকিস্তানি সেনারা কুপওয়ারা, বারামুল্লা, পুঞ্চ, রাজৌরি, মেন্ধর, নওশেরা, সুন্দরবানি এবং আখনুরের বিপরীতে অযাচিতভাবে ছোট অস্ত্র দিয়ে গুলি চালায়, যার জবাব ভারতীয় সেনাবাহিনী সমানুপাতিকভাবে দিয়েছে। এটি ছিল টানা ১২তম রাতের যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন।

পহেলগাঁও হামলার পর ভারত কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। ইন্ডাস জল চুক্তি স্থগিত করা, পাকিস্তানি নাগরিকদের ভিসা বাতিল, আটারি স্থল সীমান্ত বন্ধের মতো পদক্ষেপগুলো এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। পাকিস্তানও পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে ভারতীয় নাগরিকদের দেশ ত্যাগের নির্দেশ দিয়েছে এবং ১৯৭২ সালের শিমলা চুক্তি স্থগিত করেছে। এই কূটনৈতিক ও সামরিক উত্তেজনার মধ্যে ওয়াকাসের গ্রেপ্তার নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।

ওয়াকাসের গ্রেফতারের বিষয়ে জানানো হয়েছে

ওয়াকাসের (pakistani) গ্রেফতারের বিষয়ে এক্স-এ পোস্টে জানানো হয়েছে, তাকে সন্দেহজনক পরিস্থিতিতে দেখা যাওয়ার পর ভারতীয় সেনাবাহিনী তাকে আটক করে। তিনি পিওকের পুঞ্চের তর্খাল গ্রামের বাসিন্দা এবং বর্তমানে তার জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এটি গত তিন দিনে তৃতীয় এই ধরনের গ্রেপ্তার। পহেলগাঁও হামলার পর থেকে সীমান্তে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে, এবং এই ঘটনা সেই তীক্ষ্ণ নজরদারির ফল।

জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ) পাহলগাম হামলার তদন্তভার গ্রহণ করেছে এবং তিনজন সন্দেহভাজন জঙ্গির (pakistani) স্কেচ প্রকাশ করেছে। এদের মধ্যে দুজন পাকিস্তানি নাগরিক—হাশিম মুসা ওরফে সুলেমান এবং আলি ভাই ওরফে তালহা ভাই—এবং একজন আন্তনাগের বাসিন্দা আদিল হুসেন থোকার। তাদের গ্রেপ্তার বা শনাক্তকরণে সহায়তার জন্য ৬০ লক্ষ টাকার পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। তদন্তে জানা গেছে, এই হামলার নির্দেশ এসেছিল পাকিস্তানের আইএসআইয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের কাছ থেকে।

সীমান্তে ভারতীয় সেনাবাহিনীর সতর্কতার প্রমাণ

ওয়াকাসের গ্র্রেফতাররের ঘটনা সীমান্তে ভারতীয় সেনাবাহিনীর সতর্কতার প্রমাণ। তবে, তার দাবি—যে তিনি অনিচ্ছাকৃতভাবে এলওসি অতিক্রম করেছেন—তদন্তের মাধ্যমে যাচাই করা হচ্ছে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তার কাছ থেকে কোনো অস্ত্র বা সন্দেহজনক সামগ্রী পাওয়া যায়নি, তবে তার উদ্দেশ্য এবং পটভূমি সম্পর্কে বিস্তারিত তদন্ত চলছে।

পহেলগাঁও হামলার পর থেকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জঙ্গিদের এবং তাদের পৃষ্ঠপোষকদের কঠোর শাস্তির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “যারা এই জঘন্য কাজের পিছনে রয়েছে, তাদের পৃথিবীর শেষ প্রান্ত পর্যন্ত খুঁজে বের করে শাস্তি দেওয়া হবে।” এই প্রেক্ষাপটে, ওয়াকাসের গ্রেপ্তার ভারতের সীমান্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

এই ঘটনা এলওসি বরাবর চলমান উত্তেজনাকে আরও তীব্র করতে পারে। পাকিস্তানের (pakistani) অব্যাহত যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন এবং জঙ্গি কার্যকলাপে সমর্থনের অভিযোগ ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ককে আরও জটিল করে তুলেছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন, উভয় দেশকে সংযম প্রদর্শন এবং সংলাপের মাধ্যমে সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে। তবে, ওয়াকাসের মতো ঘটনা এই সংলাপের পথকে আরও কঠিন করে তুলতে পারে।

Advertisements