চণ্ডীগড়, ১৬ মার্চ ২০২৫: পাঞ্জাবের জালন্ধরে এক চাঞ্চল্যকর ঘটনায়, ইউটিউবার রোজার সান্ধুর বাড়িতে রবিবার একটি “গ্রেনেডের মতো বস্তু” নিক্ষেপ করা হয়েছে (YouTuber attack)। এই ঘটনার পর পাকিস্তানি গ্যাংস্টার শাহজাদ ভাট্টি একটি ভিডিওর মাধ্যমে হামলার দায় স্বীকার করেছে। তার দাবি, এই হামলা সান্ধুর মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে কথিত অবমাননাকর মন্তব্যের প্রতিশোধ হিসেবে করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিরা জালন্ধর জেলার মকসুদান এলাকায় সান্ধুর বাসভবনে এই বস্তুটি নিক্ষেপ করেছে।
এই ঘটনার পর থেকে এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে এবং ঘটনাস্থল থেকে একটি গোলাকার ধাতব বস্তু উদ্ধার করা হয়েছে, যাকে প্রাথমিকভাবে গ্রেনেড বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। তবে, এটি বিস্ফোরিত হয়নি, ফলে কোনও ক্ষয়ক্ষতি বা হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
ঘটনার পর দুটি ভিডিও সামনে এসেছে। প্রথম ভিডিওতে পাকিস্তানি গ্যাংস্টার শাহজাদ ভাট্টি এই হামলার দায় স্বীকার করেছে। তিনি দাবি করেছেন, রোজার সান্ধু তার ইউটিউব কনটেন্টে মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আপত্তিকর ও অবমাননাকর ভাষা ব্যবহার করেছেন, যার জন্য তাকে “শাস্তি” দেওয়া হয়েছে। ভাট্টি ভিডিওতে আরও বলেছেন, এই হামলা তার দলের পাঁচজন সদস্য মিলে পরিকল্পনা করে সম্পন্ন করেছে। দ্বিতীয় ভিডিওটির বিষয়ে এখনও বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।
শাহজাদ ভাট্টি পাকিস্তানের একজন কুখ্যাত গ্যাংস্টার হিসেবে পরিচিত। তার এই দাবি ঘটনাটিকে আন্তর্জাতিক মাত্রা দিয়েছে এবং ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সীমান্ত পেরিয়ে অপরাধমূলক কার্যকলাপের আশঙ্কা তৈরি করেছে। পুলিশ এখন তদন্ত করছে, এই হামলার পিছনে স্থানীয় সহযোগীদের ভূমিকা ছিল কিনা।
জালন্ধর গ্রামীণ পুলিশের সুপারিনটেনডেন্ট জসরূপ কৌর বাঠ জানিয়েছেন, “আমরা ঘটনাস্থল থেকে একটি গ্রেনেডের মতো দেখতে বস্তু উদ্ধার করেছি। এটির প্রকৃতি নিশ্চিত করতে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন।” তিনি আরও বলেন, অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিরা এই বস্তুটি নিক্ষেপ করে দ্রুত পালিয়ে যায়। পুলিশ এখন সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করছে এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে ঘটনার বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করছে।
ঘটনাটি ঘটেছে রবিবার ভোরে, যখন সান্ধু ও তার পরিবার বাড়িতে উপস্থিত ছিলেন। সৌভাগ্যবশত, বস্তুটি বিস্ফোরিত না হওয়ায় কোনও বড় দুর্ঘটনা এড়ানো গেছে। তবে, এই ঘটনা স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে।
রোজার সান্ধু জালন্ধরের একজন জনপ্রিয় ইউটিউবার, যিনি তার ভিডিওর মাধ্যমে হাজার হাজার দর্শকের মন জয় করেছেন। তার কনটেন্টে সাধারণত বিনোদন, লাইফস্টাইল এবং সমাজের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা থাকে। তবে, তার কিছু ভিডিও বিতর্কের জন্ম দিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। শাহজাদ ভাট্টির দাবি অনুযায়ী, সান্ধুর কিছু মন্তব্য মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য আপত্তিকর ছিল, যা এই হামলার কারণ হয়ে উঠেছে। তবে, সান্ধু বা তার পরিবারের পক্ষ থেকে এখনও এই বিষয়ে কোনও আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হয়নি।
এই ঘটনা পাঞ্জাবে সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া বেশ কয়েকটি বিস্ফোরক-সংক্রান্ত ঘটনার সঙ্গে যুক্ত হয়ে উদ্বেগ বাড়িয়েছে। সম্প্রতি অমৃতসরের একটি মন্দিরে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছিল, যা এখনও তদন্তাধীন। জালন্ধরের এই ঘটনা সেই ধারাবাহিকতায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সীমান্তবর্তী এলাকায় অপরাধী গোষ্ঠীর কার্যকলাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।
এই ঘটনার পর স্থানীয় বাসিন্দারা এবং সান্ধুর অনুসারীরা শঙ্কা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। অনেকে সামাজিক মাধ্যমে এই হামলার নিন্দা করেছেন এবং পুলিশের কাছে দ্রুত তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। একই সঙ্গে, কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন, সান্ধুর কনটেন্টে যদি বিতর্কিত কিছু থেকে থাকে, তবে তার সমাধান আইনি পথে করা উচিত ছিল, হিংসার মাধ্যমে নয়।
মুসলিম সম্প্রদায়ের কিছু প্রতিনিধি জানিয়েছেন, তারা শান্তি বজায় রাখতে চান এবং এই ধরনের হিংসাত্মক পদক্ষেপের সমর্থন করেন না। তারা বলেছেন, যদি সান্ধুর কথায় কেউ আহত হয়ে থাকেন, তবে তারা সংলাপের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান চাইতেন।
পুলিশ এখন এই ঘটনার পিছনে কারা জড়িত এবং শাহজাদ ভাট্টির দাবির সত্যতা যাচাই করতে তদন্ত জোরদার করেছে। গ্রেনেড-সদৃশ বস্তুটি ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। এছাড়া, পাকিস্তান থেকে এই হামলার পরিকল্পনা হয়েছে কিনা, নাকি স্থানীয় কোনও গোষ্ঠী এতে জড়িত, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এই ঘটনা শুধু একটি অপরাধের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এটি সামাজিক মাধ্যমে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নিরাপত্তা এবং দায়িত্ব নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে। ইউটিউবারদের কনটেন্ট তৈরির স্বাধীনতা এবং তার ফলে সৃষ্ট বিতর্কের মধ্যে ভারসাম্য কীভাবে বজায় রাখা যায়, তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।
জালন্ধরে রোজার সান্ধুর বাড়িতে গ্রেনেড হামলার এই ঘটনা একটি সাধারণ অপরাধের ঘটনা ছাড়িয়ে অনেক বড় প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। শাহজাদ ভাট্টির দাবি এবং পাকিস্তানের সঙ্গে এর যোগসূত্র তদন্তে কীভাবে প্রমাণিত হয়, তা এখনও দেখার বিষয়। তবে, এই ঘটনা পাঞ্জাবের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং সামাজিক মাধ্যমের প্রভাব নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করেছে। পুলিশের তদন্তের ফলাফলের উপর সবার নজর থাকবে।