শ্রীনগর: ফের উত্তপ্ত জম্মু ও কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখা (LoC)। ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পর কয়েকমাসের শান্তি ভেঙে আবারও সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘন করল পাকিস্তান। শনিবার গভীর রাতে লিপা ভ্যালি এলাকায় ভারতীয় সেনা ছাউনি লক্ষ্য করে গুলি ও মর্টার শেল ছোড়া শুরু করে পাকিস্তান সেনা। সেনা সূত্রে জানা গিয়েছে, ২৬ থেকে ২৭ অক্টোবরের মধ্যরাতের দিকে পাকিস্তানের দিক থেকে একাধিক গোলাবর্ষণ হয়। ভারতীয় বাহিনী সঙ্গে সঙ্গে পাল্টা জবাব দেয়।
একজন প্রতিরক্ষা মুখপাত্র জানিয়েছেন, “পাকিস্তান বিনা উস্কানিতে সংঘর্ষবিরতি ভেঙেছে। ভারতীয় সেনা যথাযথ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে।” প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, এই গোলাগুলিতে ভারতের তরফে কোনও প্রাণহানির খবর নেই। তবে সীমান্ত এলাকার কয়েকটি গ্রামে আতঙ্ক ছড়িয়েছে।
‘মন্থা’য় ত্রস্ত উপকূল, বাংলার ৮ জেলায় কী পরিস্থিতি? জানুন বিস্তারিত বুলেটিনে
সূত্রের দাবি, পাকিস্তানের এই উসকানির নেপথ্যে রয়েছে দুই উদ্দেশ্য একদিকে আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকর্ষণ, অন্যদিকে সীমান্ত দিয়ে জঙ্গি অনুপ্রবেশের পথ তৈরি করা। কারণ, লিপা ভ্যালি বহু বছর ধরেই অনুপ্রবেশের অন্যতম সক্রিয় রুট হিসেবে পরিচিত। প্রায় ৯ কিলোমিটার উচ্চতায় অবস্থিত এই উপত্যকা কাজিনাগ ঝর্ণার কাছে অবস্থিত, এবং কঠিন ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে এখান দিয়ে গোপনে অনুপ্রবেশ করা তুলনামূলক সহজ।
স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, রাতভর গোলাগুলির সময় সীমান্তবর্তী কিছু গ্রামবাসীকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সকালে সেনার টহল বাড়ানো হয়েছে এবং এলাকার বাঙ্কারগুলো মজবুত করা হয়েছে। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে, পাকিস্তানের এই আচরণ নতুন নয়। প্রতি বারই যখন ভারত নিয়ন্ত্রণরেখায়
সাফল্য পায় বা কোনও জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস করে, তখনই পাকিস্তান সংঘর্ষবিরতি ভঙ্গ করে প্রতিক্রিয়া জানায়। “অপারেশন সিঁদুর”-এর পর ভারতীয় বাহিনী সীমান্ত এলাকায় জঙ্গি পরিকাঠামোতে বড়সড় ধাক্কা দিয়েছিল। সেই পরেই এই মর্টার হামলা, যা প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
অন্যদিকে কূটনৈতিক মহল মনে করছে, ভারতের কূটনৈতিক চাপ এবং আন্তর্জাতিক মহলে পাকিস্তানের ক্রমশ হ্রাসমান বিশ্বাসযোগ্যতা তাদের এমন উস্কানিমূলক পদক্ষেপে ঠেলে দিয়েছে। পাকিস্তানের অর্থনৈতিক সঙ্কট ও রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেই তারা ফের সীমান্ত উত্তপ্ত করে নিজেদের অভ্যন্তরীণ সংকট থেকে মনোযোগ সরাতে চাইছে।
উল্লেখযোগ্যভাবে, চলতি বছরের ১০ মে পাকিস্তান ভারতের কাছে তিন দিনের যুদ্ধবিরতির আবেদন করেছিল, যা ভারত মেনে নেয়। তার পর থেকেই লিপা ভ্যালি সহ নিয়ন্ত্রণরেখা জুড়ে আপেক্ষিক শান্তি বজায় ছিল। কিন্তু এই সাম্প্রতিক ঘটনার পর ফের উত্তেজনা ছড়িয়েছে।
লিপা ভ্যালির আশেপাশে এখন অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। সীমান্তবর্তী গ্রামগুলির বাসিন্দাদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। সেনা জানিয়েছে, যেকোনও অনুপ্রবেশের চেষ্টা নস্যাৎ করার জন্য সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সবমিলিয়ে, ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর সাফল্যের পর পাকিস্তানের এই নতুন হামলা শুধুমাত্র সীমান্তে নয়, কূটনৈতিক ক্ষেত্রেও নতুন টানাপোড়েনের সূচনা করতে পারে বলেই মনে করছে পর্যবেক্ষক মহল।


