পাকিস্তান নিরাপত্তা পরিষদে, ভারতের স্থায়ী সদস্য পদ বিরোধিতা করবে

বুধবার পাকিস্তান রাষ্ট্রসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে (UN Security Council) দুই বছরের মেয়াদ শুরু করেছে। আজ থেকে পাকিস্তান জাপানকে সরিয়ে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের (দক্ষিণ কোরিয়া আরেকটি সদস্য) একটী…

Pakistan Begins Two-Year Term at UN Security Council, Opposes India's Reform Bid

বুধবার পাকিস্তান রাষ্ট্রসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে (UN Security Council) দুই বছরের মেয়াদ শুরু করেছে। আজ থেকে পাকিস্তান জাপানকে সরিয়ে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের (দক্ষিণ কোরিয়া আরেকটি সদস্য) একটী অস্থায়ী সদস্য হিসেবে কাজ করবে। পাকিস্তান এই মেয়াদে জুলাই মাসে নিরাপত্তা পরিষদের চেয়ারপারসন হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে, ফলে এই মেয়াদে ইসলামাবাদ রাষ্ট্রসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের এজেন্ডা নির্ধারণের সুযোগ পাবে।

পাকিস্তান ইতোমধ্যেই আইএসআইএস এবং আল কায়েদা নিষেধাজ্ঞা কমিটির সদস্য হিসেবে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে বসেছে, যা সন্ত্রাসী ব্যক্তি ও গোষ্ঠীকে নির্ধারণ এবং তাদের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের কাজ করে। এই মেয়াদে পাকিস্তানের নিরাপত্তা পরিষদে অস্থায়ী সদস্য হিসেবে এটি তার অষ্টম মেয়াদ। বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্য ও পশ্চিম এশিয়ায় রাজনৈতিক ও মানবিক সংকটের মধ্যে পাকিস্তান এই সময়ে নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য হওয়ার ফলে একদিকে যেমন রাজনৈতিক গুরুত্ব বৃদ্ধি পাবে, তেমনি অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বৈশ্বিক ইস্যুগুলিতেও পাকিস্তানের মতামত প্রভাব ফেলবে।

   

গাজা যুদ্ধ, লেবাননের সংকট, ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে উত্তেজনা, সিরিয়ার শাসন পরিবর্তন, আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার সংঘাত—এছাড়াও, ইউরোপে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের দীর্ঘস্থায়ী অর্থনৈতিক চাপ, দক্ষিণ কোরিয়ার ভয়াবহ রাজনৈতিক সংকট, চীন ও ফিলিপাইন ও ভিয়েতনামের মধ্যে নৌকা সংঘাত, উত্তর কোরিয়ার সামরিক উত্তরণ এবং তাইওয়ান নিয়ে চিনের হুমকি—এসব বিষয় নিয়ে বিশ্বজুড়ে বিপর্যয় এবং অস্থিরতা চলছে।

এদিকে, পাকিস্তান যে আলোচনার বিষয়গুলো তুলে ধরবে, তাতে কাশ্মীর একটি অন্যতম প্রসঙ্গ হতে পারে। রাষ্ট্রসংঘে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত মুনির আক্রম তার ভাষণে বলেছেন, “আমরা কাশ্মীর ইস্যু তুলে ধরতে এবং আন্তর্রাষ্ট্রক সম্প্রদায় থেকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে জোর দেব।”

পাকিস্তান রাষ্ট্রসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য হিসেবে কোন ভেটো অধিকার না থাকলেও, এটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণে একটি বড় ভূমিকা রাখতে পারে। বিশেষত সন্ত্রাসী হিসেবে গোষ্ঠী বা ব্যক্তিদের তালিকাভুক্ত করার মতো গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপে এর প্রভাব পড়তে পারে। পাকিস্তান ইতোমধ্যে ঘোষণা করেছে, তারা কোনো নতুন স্থায়ী সদস্যের অন্তর্ভুক্তি বিরোধিতা করবে এবং অস্থায়ী সদস্য সংখ্যা বাড়ানোর পক্ষেই থাকবে।

একই সময়ে, ভারত রাষ্ট্রসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য পদ লাভের জন্য পুরোদমে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, কারণ এটি বিশ্বের সর্ববৃহৎ জনগণের দেশ এবং একটি শক্তিশালী অর্থনীতি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। ভারতের প্রস্তাবিত নিরাপত্তা পরিষদ সংস্কারকে পাকিস্তান চ্যালেঞ্জ করবে। পাকিস্তান ইতোমধ্যেই বলেছে, তারা ভারতের এই প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে দৃঢ়ভাবে অবস্থান নেবে।

ইতিমধ্যে পাকিস্তান একে অপরকে সহযোগিতা করার চেষ্টা করছে, বিশেষত ইসলামিক স্টেট (আইএসআইএস) এবং আল-কায়েদার বিরুদ্ধে কার্যক্রমে গুরুত্ব আরোপ করছে। আন্তর্রাষ্ট্রক সম্পর্কের ক্ষেত্রে পাকিস্তান তার অবদান রাখতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, বিশেষ করে মুসলিম বিশ্বের স্বার্থ রক্ষায়। তাদের দাবি, তারা বিশ্বের মুসলিম দেশের কণ্ঠস্বর হিসেবে কাজ করবে, যেমন ভারত ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর কণ্ঠস্বর হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।

এই দুই বছরের মেয়াদ পাকিস্তানের জন্য অনেকগুলো রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সুযোগ নিয়ে এসেছে, তবে এর সাথে জড়িত কিছু ঝুঁকিও রয়েছে। বিশেষত পাকিস্তান এবং ভারতের সম্পর্কের মধ্যে উত্তেজনা, নিরাপত্তা পরিষদ সংস্কারের প্রশ্ন, এবং আন্তর্রাষ্ট্রক সন্ত্রাসবাদ নিয়ে চ্যালেঞ্জগুলির মধ্যে পাকিস্তান কীভাবে তার অবস্থান তৈরি করবে, তা ভবিষ্যতের জন্য বড় প্রশ্ন।