পহেলগাঁও (Pahalgam) জঙ্গি হামলা মামলায় গ্রেফতার দুই অভিযুক্ত পারভেজ আহমদ জোথার এবং বশির আহমদ জোথারকে জম্মুর বিশেষ আদালতে (এনআইএ মামলার জন্য নির্ধারিত) শুনানির জন্য হাজির করা হয়েছে। জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ) তাদের পাঁচ দিনের রিমান্ডের মেয়াদ আজ, ২৭ জুন, শেষ হচ্ছে। এই দুই ব্যক্তিকে গত রবিবার (২২ জুন) গ্রেফতার করা হয়েছিল, যা ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক জঙ্গি হামলার তদন্তে প্রথম বড় সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এই হামলায় ২৬ জন, প্রধানত পর্যটক, নিহত এবং ১৬ জন আহত হয়েছিলেন।
ঘটনার পটভূমি
গত ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ের (Pahalgam) বাইসারান মেডোতে একটি ভয়াবহ জঙ্গি হামলা ঘটে যায়। এই হামলায় তিনজন সশস্ত্র জঙ্গি, যারা নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈবার (এলইটি) সঙ্গে যুক্ত বলে জানা গেছে, ধর্মীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে পর্যটকদের লক্ষ্য করে হত্যা করে।
এনআইএ-এর তদন্ত অনুযায়ী, পারভেজ আহমদ জোথার (পহেলগাঁওয়ের বাটকোটের বাসিন্দা) এবং বশির আহমদ জোথার (পহেলগাঁওয়ের হিল পার্কের বাসিন্দা) (Pahalgam) এই তিন জঙ্গিকে হামলার আগে হিল পার্কে একটি মৌসুমি কুঁড়েঘরে (ধোক) আশ্রয়, খাদ্য এবং লজিস্টিক সহায়তা প্রদান করেছিলেন। এই হামলার তদন্তে এনআইএ গ্রেফতারের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করেছে, যার মধ্যে তিনজন পাকিস্তানি জঙ্গিরর পরিচয় নিশ্চিত করা হয়েছে।
আদালতের শুনানি
গত সোমবার (২৩ জুন) পারভেজ এবং বশিরকে জম্মুর অতিরিক্ত জেলা ও সেশন জজ রিতেশ কুমার দুবের আদালতে হাজির করা হয়। আদালত এনআইএ-এর (Pahalgam) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে, যা আজ শেষ হচ্ছে। আজ তাদের পুনরায় বিশেষ আদালতে হাজির করা হয়েছে শুনানির জন্য।
পরবর্তী শুনানির তারিখও আজ নির্ধারিত হতে পারে। এনআইএ (Pahalgam) জানিয়েছে, অভিযুক্তরা তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রকাশ করেছে, যার মধ্যে হামলাকারীদের পরিচয় এবং তাদের লস্কর-ই-তৈবার সঙ্গে যোগসূত্র রয়েছে। এই দুই অভিযুক্তকে অবৈধ কার্যকলাপ (প্রতিরোধ) আইন, ১৯৬৭-এর ১৯ ধারার অধীনে গ্রেফতার করা হয়েছে।
তদন্তের অগ্রগতি
এনআইএ-এর (Pahalgam) তদন্তে জানা গেছে যে, পারভেজ এবং বশির সচেতনভাবে তিনজন সশস্ত্র জঙ্গিকে আশ্রয় দিয়েছিলেন। তারা হামলার আগে জঙ্গিদের খাদ্য, আশ্রয় এবং লজিস্টিক সহায়তা প্রদান করেছিলেন। তদন্তে আরও প্রকাশ পেয়েছে যে, হামলাকারীরা ধর্মীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে পর্যটকদের লক্ষ্য করে হত্যা করেছিল, যা এই হামলাকে দেশের ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ জঙ্গি হামলা হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এনআইএ এই হামলার তদন্তে ২০০-এর বেশি ব্যক্তির সঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে, যার মধ্যে পনি চালক, দোকানদার এবং ফটোগ্রাফাররা রয়েছেন।
রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিক্রিয়া (Pahalgam)
এই হামলা জম্মু ও কাশ্মীরের পর্যটন শিল্পে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। পিডিপি নেত্রী ইলতিজা মুফতি এই হামলাকে নিন্দা করে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে দ্রুত অপরাধীদের গ্রেফতারের আবেদন জানিয়েছিলেন। তিনি বলেন, “পহেলগাঁওয়ে (Pahalgam) যা ঘটেছে তা সম্পূর্ণ নিন্দনীয়। এই হামলার ফলে পর্যটন বন্ধ হয়ে গেছে, যা জম্মু ও কাশ্মীরের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।” তিনি সরকারের কাছে জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান।
এদিকে, বিজেপি নেত্রী শাজিয়া ইলমি এই গ্রেফতারিকে তদন্তে একটি বড় সাফল্য হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, “এই গ্রেফতারির মাধ্যমে হামলার পিছনে ষড়যন্ত্র, লজিস্টিক এবং সহযোগিতার বিষয়ে আরও তথ্য প্রকাশ পাবে।” সামাজিক মাধ্যমে এই গ্রেফতারি নিয়ে ব্যাপক আলোচণা চলছে, যেখানে অনেকে এনআইএ-এর তৎপরতার প্রশংসা করেছেন।
জনরোষ ও জাতীয় প্রতিক্রিয়া
পহেলগাঁও (Pahalgam) হামলা গোটা দেশে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি করেছিল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই হামলার প্রতিশোধ নিতে সশস্ত্র বাহিনীকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছিলেন। এর ফলে ভারতীয় সেনাবাহিনী পাকিস্তানের মুরিদকে, বাহাওয়ালপুর, কোটলি এবং পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরের মুজাফফরাবাদে জঙ্গি ঘাঁটি গুলির উপর লক্ষ্যভিত্তিক হামলা চালায়। এই হামলা আন্তর্জাতিক মহলেও নিন্দিত হয়েছিল, এবং ফিনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স (এফএটিএফ) এই হামলাকে “নৃশংস” বলে নিন্দা করে।
Twitter Killer: ৯ জনকে খুনের পরিণতি ‘টুইটার কিলার’কে মৃত্যুদণ্ড
ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ
এনআইএ বর্তমানে তিনজন পাকিস্তানি সন্ত্রাসীর অবস্থান শনাক্ত করতে ব্যাপক তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছে। তদন্তে প্রাপ্ত ভিডিও ফুটেজ, প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ এবং প্রযুক্তিগত প্রমাণ বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। এই গ্রেফতারির মাধ্যমে তদন্তের দিক পরিবর্তন হয়েছে, এবং এনআইএ এখন সুলেমান শাহ নামে একজন সন্ত্রাসীর সম্পৃক্ততার বিষয়ে তদন্ত করছে, যিনি গত বছর জেড-মোর্হ টানেল হামলার সঙ্গেও জড়িত ছিলেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
পহেলগাঁও (Pahalgam) হামলা মামলায় পারভেজ আহমদ এবং বশির আহমদের গ্রেফতারি এনআইএ-এর তদন্তে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়। আজ তাদের বিশেষ আদালতে হাজির করা হয়েছে, এবং রিমান্ডের মেয়াদ শেষ হওয়ায় তদন্তের পরবর্তী দিক নির্ধারিত হবে। এই হামলা জম্মু ও কাশ্মীরের নিরাপত্তা পরিস্থিতি এবং পর্যটন শিল্পের উপর গভীর প্রভাব ফেলেছে। এনআইএ-এর তদন্ত এবং আদালতের সিদ্ধান্ত এই মামলায় ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।