ফতেহপুর মকবরা কাণ্ডে বিজেপিকে আক্রমণ ওআইসির

উত্তরপ্রদেশের ফতেহপুর (Owaisi) জেলায় একটি ঐতিহাসিক মকবরা ভাঙচুরের ঘটনায় অল ইন্ডিয়া মজলিস-এ-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (AIMIM) সাংসদ আসাদুদ্দিন ওয়াইসি তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন যে, ভারতীয়…

Owaisi slams BJP

উত্তরপ্রদেশের ফতেহপুর (Owaisi) জেলায় একটি ঐতিহাসিক মকবরা ভাঙচুরের ঘটনায় অল ইন্ডিয়া মজলিস-এ-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (AIMIM) সাংসদ আসাদুদ্দিন ওয়াইসি তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন যে, ভারতীয় জনতা পার্টি (BJP) দেশে ঘৃণার পরিবেশ সৃষ্টি করেছে এবং উত্তরপ্রদেশে মুসলিমদের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক স্থান দাবি করার জন্য সকলকে মুক্ত হাত দেওয়া হয়েছে।

ওয়াইসি বলেছেন, “এই সব কিছু রাজ্য পুলিশের নজরদারির মধ্যে ঘটছে, কিন্তু পুলিশ কিছুই করছে না। যদি এই হামলাকারীরা মুসলিম হতো, তাহলে পরিস্থিতি কী হতো তা কল্পনা করুন। আইনকে রাজনৈতিক মতাদর্শ এবং ধর্মের নির্দেশে ব্যবহার করা হচ্ছে। এটি মুসলিমদের প্রতি ঘৃণা এবং তাদের নিপীড়নের প্রচেষ্টার একটি উদাহরণ। এটি মনে হচ্ছে ১৯৯২ সাল ফিরে আসছে।”

   

ফতেহপুর জেলার রাদিয়া মহল্লায় অবস্থিত নওয়াব আবু সামাদের প্রায় ২০০ বছরের পুরনো মকবরা গত ১১ আগস্ট ভাঙচুর করা হয়। স্থানীয় সূত্র এবং সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত ভিডিও অনুযায়ী, বিজেপি এবং অন্যান্য হিন্দু গোষ্ঠীর হাজার হাজার সদস্য পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে এই ঐতিহাসিক স্থানে প্রবেশ করে।

তারা দাবি করে যে, এই মকবরাটি একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত হিন্দু মন্দিরের উপর নির্মিত হয়েছিল। তারা মকবরার কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং সেখানে কেশরিয়া পতাকা উত্তোলন করে পূজা করে। এই ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে, এবং স্থানীয় প্রশাসন ভারী পুলিশ এবং প্রাদেশিক সশস্ত্র কনস্টেবুলারি (পিএসি) মোতায়েন করেছে।

আসাদুদ্দিন ওয়াইসি এই ঘটনাকে বিজেপির ঘৃণামূলক রাজনীতির ফল হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, “উত্তরপ্রদেশে মুসলিমদের ঐতিহাসিক স্থানগুলির উপর দাবি করার জন্য একটি মুক্ত হাত দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনাগুলি রাজ্য পুলিশের নাকের ডগায় ঘটছে, কিন্তু তারা নীরব দর্শক হয়ে রয়েছে।”

তিনি আরও অভিযোগ করেছেন যে, যদি এই হামলাকারীরা মুসলিম হতো, তাহলে পুলিশের প্রতিক্রিয়া সম্পূর্ণ ভিন্ন হতো। ওয়াইসি ১৯৯২ সালের বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনার সঙ্গে এই ঘটনার তুলনা করেছেন, যখন ধর্মীয় উত্তেজনা দেশে ব্যাপক সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সূত্রপাত করেছিল। তিনি বলেছেন, “এই ঘটনা মনে করিয়ে দেয় যে, ১৯৯২ সালের সেই অন্ধকার দিনগুলি ফিরে আসছে।”

এই ঘটনা উত্তরপ্রদেশে রাজনৈতিক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। কংগ্রেস সাংসদ ইমরান মাসুদ বিজেপির উপর অভিযোগ করে বলেছেন, “এটি তাদের এজেন্ডা। তারা সমাজে বিভেদ সৃষ্টি করতে চায়। যদি বিপরীত পক্ষের কেউ এই কাজ করত, তাহলে গুলি চালানো হতো, কিন্তু তাদের মতাদর্শের লোকজন হলে পুলিশ তাদের হাত জোড় করে বের করে দেয়।”

Advertisements

বহুজন সমাজ পার্টির (বিএসপি) প্রধান মায়াবতী সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি এক্স-এ পোস্ট করে বলেছেন, “ফতেহপুরে মকবরা এবং মন্দির নিয়ে বিরোধে সরকারের উচিত কোনও সম্প্রদায়কে এমন কোনও পদক্ষেপ নিতে না দেওয়া, যা সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা বা ভ্রাতৃত্বের ক্ষতি করতে পারে।” সমাজবাদী পার্টির (এসপি) নেতা আখিলেশ যাদবও এই ঘটনাকে বিজেপির “বিভাজনের ষড়যন্ত্র” হিসেবে অভিহিত করেছেন।

ফতেহপুরে উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রশাসন ঘটনাস্থলে ব্যারিকেড স্থাপন করেছে এবং ভারী পুলিশ মোতায়েন করেছে। তবে, ওয়াইসি এবং অন্যান্য বিরোধী নেতারা অভিযোগ করেছেন যে, পুলিশ এই ঘটনায় যথেষ্ট কঠোরতা দেখায়নি। তারা দাবি করেছেন যে, এই ধরনের ঘটনা রোধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।

ফতেহপুরের এই ঘটনা ভারতে ধর্মীয় স্থান নিয়ে বিতর্ক এবং সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। আসাদুদ্দিন ওয়াইসির ১৯৯২ সালের সঙ্গে তুলনা এই ঘটনার গুরুত্বকে আরও উজ্জ্বল করে তুলেছে।

বাজারে ঢুকলেই গরম হাওয়া, সবজির সঙ্গে ডিম-পেঁয়াজের দাম আকাশছোঁয়া

এই ঘটনা কেবল ফতেহপুরের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি দেশের ধর্মীয় সৌহার্দ্য এবং আইনের শাসনের উপর প্রশ্ন তুলেছে। সরকার এবং প্রশাসনের পরবর্তী পদক্ষেপ এই ঘটনার ভবিষ্যৎ প্রভাব নির্ধারণ করবে।