শিক্ষিকার নির্দেশে পড়ুয়াদের দিয়ে মুসলিম সহপাঠীকে চড় বিতর্ক, যোগী বিপাকে

সম্প্রতি একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে যেখানে দেখা যাচ্ছে উত্তরপ্রদেশের মুজাফরনগরে এক স্কুল শিক্ষিকা তার ছাত্র-ছাত্রীদের দিয়ে তাদেরই এক মুসলিম সহপাঠীকে চড় মারতে বলছেন। ভিডিওটা কোন সময়ের, সম্প্রতি না পুরনো তা নিশ্চিত করা যায়নি। ভিডিও-র সত্যতা যাচাই করেনি কলকাতা ২৪x৭ নিউজ পোর্টাল। ভিডিওটি ভাইরাল হতেই নজরে পড়ে বিরোধীদের। ভাইরাল ভিডিও-র ঘটনাকে নিন্দা করেছে বিরোধীরা এবং সরাসরি গেরুয়া শিবিরের দিকে আঙুল তোলা হয়েছে এবং দেশে হিংসা-ভেদাভেদ সৃষ্টি করার অভিযোগও আনা হয়েছে বিজেপি-র বিরুদ্ধে।

Advertisements

ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে ‘এক্স’ –এ কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী লিখেছেন, “নিরীহ শিশুদের মনে ভেদাভেদের বিষ পুঁতছেন এবং স্কুলের মতন পবিত্র জায়গাকে হিংসার বাজারে পরিণত করছেন। এর থেকে আর খারাপ কাজ দেশের জন্য কোন শিক্ষক করতে পারেন না। বিজেপিকে কড়া আক্রমণ করে রাহুল গান্ধী আরও লিখেছেন, “এটা সেই একই কেরোসিন যে ছড়িয়ে বিজেপি দেশের প্রতিটা কোনায় আগুন লাগিয়েছে। শিশুরা ভারতের ভবিষ্যৎ, তাদের হিংসা কোরো না, আমাদের সবাইকে মিলে একসঙ্গে ভালোবাসা শেখাতে হবে।“

অপর দিকে সমাজবাদী পার্টি শনিবার বিজেপি এবং আরএসএস এর বিরুদ্ধে ঘৃণার রাজনীতি করার অভিযোগ করে। সমাজবাদী পার্টি দাবি করে যে এই ঘৃণার রাজনীতির ফলেই দেশের এমন অবস্থা হয়েছে যেখানে একজন শিক্ষিকা তার ছাত্র-ছাত্রীদের তাদেরই সংখ্যালঘু সহপাঠীকে চড় মারতে বলে তার ধর্মের জন্য। এসপি সভাপতি অখিলেশ যাদবও একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট করে শিক্ষিকার দ্রুত বর্খাস্ত দাবি করেন আন্দ সেই শিক্ষিকাকে ‘শিক্ষক সমাজের উপর দাগ’ বলে কটাক্ষ করেন।

ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের জাতীয় মুখপাত্র সুস্মিতা দেব। তিনি বলেন, “ঘৃণা বিজেপির ডিএনএ-তে রয়েছে। আমরা ছাত্রের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের নিন্দা জানাই, যাকে মুজাফফরনগরে তার ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে টার্গেট করে মারধর করা হয়েছিল। একটি সময়ে যখন শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান এবং বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য স্কুলে শেখানো উচিত, তখন বিজেপি শাসিত ইউপি শিশু ও যুবকদের মধ্যে সাম্প্রদায়িকতার বিষ ঢোকানোর চেষ্টা করছে।

ভাইরাল ভিডিও এবং তারপর বিরোধীদের চাপে বেরিয়ে এসেছে শিক্ষিকার পরিচয়। জানা গিয়েছে অভিযুক্ত শিক্ষিকার নাম ত্রাপ্তি ত্যাগী এবং ঘটনাটি ঘটেছে মানসুরপুর থানার অধীনের খুব্বাপুর গ্রামে। ঘটনার সম্পর্কে সার্কেল অফিসার রবিশঙ্কর বলেন যে পুলিশ ঘটনাটি খতিয়ে দেখছে এবং খুব শীঘ্রই ব্যবস্থা নেবে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিকারী শুভম শুক্লা জানান যে ভিডিও তে ছাত্র-ছাত্রী ছাড়া আরও দু’জনকে দেখা যাচ্ছে, যার মধ্যে একজন অভিযুক্ত শিক্ষিকা এবং আরেকজনকে চেনার চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, “এই দুজনের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেও।“

Advertisements

এরই মাঝে বিবিসি-কে সাক্ষাৎকারে অভিযুক্ত শিক্ষিকা সমস্ত ঘটিনাকে নস্যাৎ করে জানিয়েছেন,” এটি তৈরি করা হয়েছে। এই গ্রামে হিন্দু-মুসলমান সবাই একে অপরের জন্য সহায়ক। শিশুরাও আমাদের আপন। সেদিন শিশুটিকে মনে রাখার জন্য দেওয়া হয়েছিল, মনে রাখার পরও সে আসেনি। তার বাবা তাকে একটু শক্ত করতে বললেন। আমি অক্ষম আমি চেয়ার থেকে উঠতে পারছি না। আমি ভেবেছিলাম যে আমি এটি ইনস্টল করার জন্য একটি বা দুটি বাচ্চা পেলে এটি কাজ শুরু করবে। আমার উদ্দেশ্য ছিল না যে সে হিন্দুর সন্তান বা মুসলমানের সন্তান। এটা আমাদের জায়গায় কখনই ঘটে না। ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে মমদান শব্দটি ঢোকানো হলেও লাইন কেটে দেওয়া হয়েছে। ভিডিওটি কেটে ফেলা হয়েছে।

“আমি বলেছিলাম যে সমস্ত মুসলমান মায়েরা তাদের বাচ্চাদের তাদের মামার বাড়িতে নিয়ে যাবেন না কারণ পরীক্ষা শুরু হতে চলেছে এবং পড়াশোনার অনেক ক্ষতি হবে। আমি শুধু এই লাইন বলেছি. তার (সন্তানের) চাচা সেখানে বসে ছিলেন। শিশুটিকে আঁটসাঁট করার কথাও বলা হচ্ছিল এবং ভিডিও করা হচ্ছিল। আজকাল অনেক রকমের ফোন থাকায় ভিডিওটা খুঁজে পাচ্ছিলাম না। সে একটু ষড়যন্ত্র করেছে। আমি হিন্দু-মুসলিম দৃষ্টিকোণ থেকে কোনো শিশুকে দেখি না।“

“যারা তাকে চড় (থাপ্পড়) মেরেছে তারা কেবল মুসলমান। আমার স্কুলের বেশির ভাগ ছেলেমেয়েই মুসলমান। আজ পর্যন্ত এখানে হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে এমন কোনো কথাবার্তা হয়নি। ভুলটা আমারই হয়েছে। একটা ভুল হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি আমি ভালো থাকলে আমি নিজেই বাচ্চাদের নিয়ন্ত্রণ করতাম। এমন কথা মাথায় আসে না। এটাই আমি বলব।“