অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা (Bengali Muslims) আজ গুয়াহাটিতে এক সাংবাদিক সম্মেলনে অভিযোগ করেছেন যে, মণিপুরের মতো দূরবর্তী অঞ্চল থেকেও লোকজন অসমে এসে অবৈধভাবে জমি দখল করছে। তারা বিশেষ করে বনভূমি, দখল করছে।
শর্মা বলেন, “এই অবৈধ দখলের পিছনে একটি ‘ষড়যন্ত্র’ রয়েছে। প্রথমে কয়েকজন লোক এসে জমিতে চাষ শুরু করে, তারপর আরও লোক এনে সেখানে বসতি তৈরী করে।” তবে বিরোধী দল কংগ্রেসের মতে হিমন্ত বেছে বেছে বাঙালি মুসলিমদের টার্গেট করছেন।
লখিমপুরে সম্প্রতি একটি উচ্ছেদ অভিযানের উল্লেখ করে শর্মা বলেন, “আমরা মণিপুর ও নগাঁও থেকে আসা ১২টি পরিবারকে পেয়েছি, যারা সম্ভবত জানত না যে এলাকায় ইতিমধ্যে উচ্ছেদ শুরু হয়েছে।” তিনি জানান, স্থানীয় জেলা কমিশনারকে এই পরিবারগুলিকে ফিরিয়ে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
শর্মা আরও অভিযোগ করেন যে অনেক দখলদার দাবি করেন যে তারা গোলপাড়ার মতো নিকটবর্তী জেলা থেকে এসেছেন, কিন্তু তাদের আসল উৎস হতে পারে পশ্চিমবঙ্গ বা এমনকি বাংলাদেশ। তিনি বলেন, “গতকালই আমরা ১৬ জন অবৈধ বাংলাদেশি নাগরিককে ধরেছি।” পূর্ববর্তী প্রশাসনের ব্যর্থতাকে দায়ী করে তিনি বলেন, আগে সীমান্ত পেরিয়ে আগমন বন্ধ করার কোনো ব্যবস্থা ছিল না।
মুখ্যমন্ত্রী দখলের একটি পুনরাবৃত্তিমূলক ধরণের কথা উল্লেখ করেন। তিনি লুমডিংয়ে আদা চাষ, উরিয়ামঘাটে (গোলাঘাট) পানের বাগান এবং শ্রীভূমি ও হাইলাকান্দিতে রাবার চাষের উদাহরণ দেন। শর্মার মতে, উরিয়ামঘাটে প্রায় ৫০০টি পরিবার হাজার হাজার বিঘা বনভূমি দখল করেছে।
তিনি বলেন, “মধ্য অসমের ধিং ও লাহোরিঘাট থেকে আগত এই পরিবারগুলি প্রতি পরিবার ৩০০-৫০০ বিঘা জমিতে পান চাষ করছে।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, মিয়ানমার থেকে আমদানি করা ‘সুপারি’ স্থানীয় উৎপাদনের সঙ্গে মিশিয়ে দেশীয় পণ্য হিসেবে বিক্রি করা হচ্ছে।
শর্মা প্রশাসনিক ব্যার্থতার ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, বন কর্মকর্তা এবং কিছু স্থানীয় রাজনীতিবিদ এই বসতিগুলিকে উপেক্ষা করেছেন, যা ধীরে ধীরে ভোটব্যাঙ্কে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, “যখন জনসংখ্যা ৫,০০০-১০,০০০ ছাড়িয়ে যায়, তখন স্থানীয় বিধায়করাও ব্যবস্থা নিতে দ্বিধা করেন।” তিনি আশ্বাস দেন, দায়ী বন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে, যারা দখলদারদের মত একই সম্প্রদায়ের।
২০২১ সালের মে মাস থেকে অসম সরকার ১.১৯ লক্ষ বিঘা জমি উদ্ধার করেছে, যা প্রায় ৫০,০০০ মানুষকে প্রভাবিত করেছে। তবে, শর্মা জানান, এখনও ৬৩ লক্ষ বিঘা জমি, যার মধ্যে ২৯ লক্ষ বিঘা বনভূমি, অবৈধ দখলে রয়েছে। তিনি কোনো নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর নাম উল্লেখ না করলেও বলেন, এই অবৈধ বসতি মূলত ‘একটি ধর্মের’ লোকেদের দ্বারা পরিচালিত, যা তিনি আদিবাসী সম্প্রদায়ের উপর ‘ভূমি আক্রমণ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
শর্মার এই মন্তব্য রাজনৈতিক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। বিরোধী দলগুলি, বিশেষ করে কংগ্রেস, অভিযোগ করেছে যে এই উচ্ছেদ অভিযানে বাঙালি-ভাষী মুসলিম সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করা হচ্ছে। তারা দাবি করেন, এটি আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যে বিভাজন সৃষ্টির কৌশল।
কংগ্রেস নেতারা বলেছেন,উচ্ছেদ হওয়া অনেকেরই ভোটার আইডি এবং আধার কার্ড রয়েছে। তবে, শর্মা জোর দিয়ে বলেন, এই অভিযান আদিবাসী সম্প্রদায়ের জমি ও পরিচয় রক্ষার জন্য অপরিহার্য। তিনি বলেন, “আমরা কেবল জমি উদ্ধার করছি না, আমরা অসমের ভবিষ্যৎ রক্ষা করছি।”
২২ গজে রবিবাসরীয় লড়াইয়ে ভারত-পাক হাইভোল্টেজ ম্যাচ কোথায় দেখেবন? জেনে নিন
এই উচ্ছেদ অভিযানের সমালোচনা করেছে গুয়াহাটির কিছু নাগরিক সমাজ সংগঠন, যারা এটিকে ‘মানবাধিকার লঙ্ঘন’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। তবে, শর্মা দাবি করেন, তৃণমূল সংগঠনগুলি, যেমন তাই আহোম ছাত্র সংঘ, উরিয়ামঘাটে উচ্ছেদের সমর্থনে স্মারকলিপি জমা দিয়েছে। তিনি বলেন, “যদি এই দখল অব্যাহত থাকে, তবে ১৫-২০ বছরের মধ্যে অসমের পরিচয় হারিয়ে যাবে।”