বিরোধীদের প্রবল আপত্তি ও যুক্তি অগ্রাহ্য করে সংখ্যার জোরে অপরাধী শনাক্তরণ বিল (identification bill) সংসদের দুই কক্ষে পাস করিয়েছে মোদী সরকার। বিলটি নিয়ে বিরোধী শিবিরের সম্মিলিত সমালোচনা এবং উদ্বেগের মুখে পড়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।
তৃণমূল কংগ্রেস, কংগ্রেস, ডিএমকে, বাম, এনসিপির মতো বিরোধী দল থেকে শুরু করে বিজেপি ঘনিষ্ঠ বিএসপিও বিলটির পরিকল্পিত অপব্যবহারের আশঙ্কা করেছে। আরও আলোচনা চেয়ে বিলটি এখনই পাস না করিয়ে আগে সংসদের স্থায়ী কমিটিতে পাঠানোর দাবি তুলেছিলেন বিরোধী সাংসদরা। স্থায়ী কমিটির রিপোর্ট এবং সুপারিশ খতিয়ে দেখে তবেই বিলটি নিয়ে এগিয়ে যাওয়া উচিত বলে দাবি করেন তাঁরা। যদিও বিরোধীদের দাবি ও যুক্তি উড়িয়ে লোকসভা ও রাজ্যসভায় গায়ের জোরে বিতর্কিত বিলটি পাস করায় সরকারপক্ষ।
একনজরে দেখে নেওয়া যাক এই বিলে উল্লেখযোগ্য প্রস্তাব কী কী রয়েছে?
এই বিলটি পাস হওয়ার পর আইনে পরিণত হলে যেকোনও অপরাধী, আটক বা গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তির শারীরিক নমুনা, চোখের মণি, হাত ও পায়ের আঙুলের ছাপ থেকে শুরু করে শারীরিক নমুনা সংক্রান্ত খুঁটিনাটি তথ্য ৭৫ বছর পর্যন্ত সংগ্রহ করে রাখতে পারবে সরকার।
সিআরপিসি থেকে পৃথক এটিই প্রথম বিল। সাব ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার অধিকারিক এফআইআর দায়ের করতে পারেন, অথচ এই বিলে নমুনা, মাপজোক নেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে হেড কনস্টেবলকে। এই বিলে উল্লিখিত প্রস্তাব অনুযায়ী ডিএনএ টেস্ট করে নমুনা সংগ্রহ করা যেতে পারে।
১৯২০ সালের পুরনো আইন অনুযায়ী, বিশেষ শ্রেণীর বন্দিদের ক্ষেত্রে ফিঙ্গারপ্রিন্ট, পায়ের ছাপ নেওয়া হত। নতুন বিলে যেকোনও অভিযোগে অভিযুক্ত এবং আটক হওয়া ব্যক্তির চোখের মণি, পায়ের ছাপের মতো নানা শারীরিক নমুনা সংগ্রহ করার কথা বলা হয়েছে। এছাড়াও তাদের হাতের লেখার নমুনা, স্বাক্ষরের নমুনা সংগ্রহ করতে পারবে পুলিশ। অর্থাৎ কেউ অপরাধী প্রমাণ হওয়ার আগেই তার সমস্ত ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নেবে সরকার। যা সরাসরি ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ।
এই দমনমূলক প্রস্তাবগুলির সমালোচনাতেই সরব হয়েছেন বিরোধীরা। যদিও দুই কক্ষেই বিরোধীদের অভিযোগ কর্ণপাত না করে সরকার এই বিল পাস করিয়ে দিয়েছে।
বিতর্কিত বিলটি নিয়ে বিরোধী শিবিরের আশঙ্কা, এই বিলটিকে হাতিয়ার করে সরকারের সমালোচক এবং বিরোধীদের কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা করবে মোদি সরকার। গণতান্ত্রিক আন্দোলন দমনে এটি হাতিয়ার হয়ে উঠবে। হেনস্থার ভয় দেখিয়ে বিরোধীদের দমন করার ক্ষেত্রে এই কালাকানুন ব্যবহার করতে পারে কেন্দ্রীয় সরকার। ব্রিটিশ আমলের থেকেও মোদি সরকারের আনা বিলটি বেশি দমনপীড়নমূলক বলে মন্তব্য করেছেন বিরোধী সাংসদরা।
তাঁদের বক্তব্য, অপরাধী সাব্যস্ত হওয়ার আগেই কোনও অভিযুক্তের ব্যক্তিগত স্বাধীনতা কেড়ে নিতে চায় বিজেপি সরকার। এই বিল সবরকমভাবে ব্যক্তি স্বাধীনতা ও অধিকারের পরিপন্থী ও দানবীয়। স্বাধীনতা সংগ্রামীদের অসহযোগ আন্দোলনের সময় ব্রিটিশ সরকার ভয় পেয়েছিল এবং ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ভয় দেখাতে ১৯২০ সালে এই ধরনের বিল এনেছিল।