সিন্ধু জল চুক্তির বিরুদ্ধে তীব্র আপত্তি ওমর আব্দুল্লাহর

জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আব্দুল্লাহ (omar abdullah) শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ১৯৬০ সালে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে স্বাক্ষরিত সিন্ধু জল চুক্তির (ইন্ডাস ওয়াটার্স ট্রিটি)…

omar abdullah protests indus water trety

জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আব্দুল্লাহ (omar abdullah) শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ১৯৬০ সালে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে স্বাক্ষরিত সিন্ধু জল চুক্তির (ইন্ডাস ওয়াটার্স ট্রিটি) বিরুদ্ধে তীব্র আপত্তি প্রকাশ করেছেন। তিনি এই চুক্তিকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের জনগণের জন্য “সবচেয়ে অন্যায় নথি” হিসেবে অভিহিত করেছেন।

   

সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি বলেন, “ভারত সরকার কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। জম্মু ও কাশ্মীরের ক্ষেত্রে আমরা কখনোই সিন্ধু জল চুক্তির পক্ষে ছিলাম না। আমরা সবসময় বিশ্বাস করেছি যে, এই চুক্তি জম্মু ও কাশ্মীরের মানুষের প্রতি চরম অন্যায়।” এই মন্তব্য পহেলগাঁওয়ে ২২ এপ্রিল সংঘটিত সন্ত্রাসী হামলার প্রেক্ষাপটে এসেছে, যেখানে ২৫ জন ভারতীয় এবং একজন নেপালি নাগরিক নিহত হয়েছেন।

পহেলগাঁও হামলা ও চুক্তি স্থগিতকরণ (omar abdullah)

২২ এপ্রিল অনন্তনাগ জেলার পহেলগাঁওয়ের বাইসারান মেডোতে জঙ্গিরা পর্যটকদের উপর এলোপাথাড়ি গুলি চালায়, যার ফলে ২৬ জন নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হন। এই হামলার দায় স্বীকার করেছে দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ), যা পাকিস্তান-ভিত্তিক লস্কর-ই-তৈবার একটি শাখা। এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় ২৩ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে ক্যাবিনেট কমিটি অন সিকিউরিটি (সিসিএস) এক বৈঠকে সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেয়। (omar abdullah)

এই বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর উপস্থিত ছিলেন। ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আরও কঠোর পদক্ষেপ হিসেবে আটারি-ওয়াঘা সীমান্ত বন্ধ, পাকিস্তানি ভিসা বাতিল এবং কূটনৈতিক সম্পর্কের মান হ্রাস করেছে।

চুক্তি স্থগিতের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা

জলশক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব দেবশ্রী মুখার্জি বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের জলসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব সৈয়দ আলী মুর্তাজাকে একটি চিঠির মাধ্যমে চুক্তি স্থগিতের সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন। চিঠিতে বলা হয়েছে, “ভারত সরকার পাকিস্তান সরকারকে চুক্তির ধারা XII(3) অনুযায়ী সংশোধনের জন্য নোটিশ দিয়েছিল। পাকিস্তান এই বিষয়ে আলোচনায় প্রবেশ করতে অস্বীকার করেছে, যা চুক্তির লঙ্ঘন।”

চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, “পাকিস্তানের অব্যাহত সীমান্তবর্তী সন্ত্রাসবাদ জম্মু ও কাশ্মীরে নিরাপত্তা অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করেছে, যা ভারতের চুক্তির অধীনে অধিকার প্রয়োগে বাধা দেয়।” জনসংখ্যার উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এবং পরিচ্ছন্ন শক্তির উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তাও চুক্তির পুনর্মূল্যায়নের কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

ওমর আব্দুল্লাহর অবস্থান

মুখ্যমন্ত্রী ওমর আব্দুল্লাহ (omar abdullah) বলেন, সিন্ধু জল চুক্তি জম্মু ও কাশ্মীরের জনগণের সম্ভাবনাকে সীমিত করেছে। তিনি জানান (omar abdullah), এই চুক্তির কারণে রাজ্যে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প এবং সেচ ব্যবস্থার উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়েছে। তিনি বলেন, “আমরা সবসময় এই চুক্তির বিরোধিতা করে এসেছি। এটি আমাদের জনগণের প্রতি একটি অন্যায় নথি।” তিনি পহেলগাঁও হামলাকে দুর্ভাগ্যজনক বলে উল্লেখ করে সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেন।

পাকিস্তানকে নজরে রাখতে আরব সাগরে মোতায়েন ’৭১ যুদ্ধের হিরো বিক্রান্ত

অমিত শাহের সঙ্গে আলোচনা

ওমর আব্দুল্লাহ (omar abdullah) জানিয়েছেন, তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠকে জম্মু ও কাশ্মীরের বাসিন্দাদের অন্যান্য রাজ্যে নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা করেছেন। শাহ তাকে আশ্বাস দিয়েছেন যে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি পরামর্শ জারি করবে এবং বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলা হবে। আব্দুল্লাহ বলেন, “আমরা নিশ্চিত করব যে বৈঠকে উত্থাপিত সমস্যাগুলির সমাধান করা হবে।”

অমিত শাহের বৈঠক

শুক্রবার সন্ধ্যায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ দিল্লিতে তার বাসভবনে সিন্ধু জল চুক্তি নিয়ে একটি বৈঠক আয়োজন করেছেন। এই বৈঠকে জলশক্তি মন্ত্রী সি আর পাটিল এবং অন্যান্য সিনিয়র সরকারি কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সূত্র জানায়, বৈঠকে চুক্তি স্থগিতের পরবর্তী পদক্ষেপ এবং এর বাস্তবায়ন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই বৈঠক চুক্তি স্থগিতের ফলে ভারতের কৌশলগত পরিকল্পনা এবং জম্মু ও কাশ্মীরে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প ত্বরান্বিত করার বিষয়ে মনোযোগ দেয়।

পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া

পাকিস্তান ভারতের এই সিদ্ধান্তকে “যুদ্ধের কাজ” হিসেবে অভিহিত করে বলেছে, চুক্তির অধীনে তাদের প্রাপ্য জলপ্রবাহ বন্ধ বা ডাইভার্ট করা হলে তারা “পূর্ণ শক্তি” দিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাবে। পাকিস্তান শিমলা চুক্তি স্থগিত করেছে, ভারতীয় বিমানের জন্য আকাশসীমা বন্ধ করেছে এবং বাণিজ্য সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের দপ্তর থেকে বলা হয়েছে, ভারতের পদক্ষেপ “একতরফা, অন্যায় এবং আইনি ভিত্তিহীন।”

চুক্তির গুরুত্ব ও প্রভাব

সিন্ধু জল চুক্তি সিন্ধু নদী ব্যবস্থার ছয়টি নদীর জল ভাগাভাগি নিয়ন্ত্রণ করে। পূর্বাঞ্চলীয় নদী—সতলুজ, বিয়াস এবং রাভি—ভারতের জন্য বরাদ্দ, যখন পশ্চিমাঞ্চলীয় নদী—সিন্ধু, ঝিলাম এবং চেনাব—মূলত পাকিস্তানের জন্য। পাকিস্তানের ৮০ শতাংশ সেচযোগ্য জমি এই নদী ব্যবস্থার উপর নির্ভরশীল। চুক্তি স্থগিত হওয়ায় ভারত আর পাকিস্তানের সঙ্গে জলপ্রবাহ বা বন্যার তথ্য ভাগ করতে বাধ্য নয়, যা পাকিস্তানের কৃষি ও বিদ্যুৎ উৎপাদনকে প্রভাবিত করতে পারে।

সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিতকরণ ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। ওমর আব্দুল্লাহর মন্তব্য জম্মু ও কাশ্মীরের জনগণের দীর্ঘদিনের অভিযোগকে প্রতিফলিত করে। অমিত শাহের নেতৃত্বে ভারত এখন জলবিদ্যুৎ প্রকল্প ত্বরান্বিত করার পরিকল্পনা করছে, যা রাজ্যের উন্নয়নে সহায়ক হতে পারে। তবে, পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া এবং আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট এই সিদ্ধান্তের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব নির্ধারণ করবে।