ওড়িশার রাজধানী ভুবনেশ্বরে (Bhubaneswar) এক চাঞ্চল্যকর ঘটনায় রাজ্য সচিবালয়ে একজন সিনিয়র ওএএস (ওড়িশা অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস) অফিসারের উপর হামলার অভিযোগ উঠেছে। বিজু জনতা দলের (বিজেডি) বিধায়ক অরুণ কুমার সাহু দাবি করেছেন, বিজেপির কিছু দুষ্কৃতী, দলের সিনিয়র নেতাদের নির্দেশে এই নৃশংস হামলা চালিয়েছে।
তিনি বলেন, (Bhubaneswar)“রাজ্য সচিবালয়ের মতো স্থানে যদি এমন ঘটনা ঘটে, তবে এটি স্পষ্ট যে রাজ্যে আইনশৃঙ্খলার কোনো অস্তিত্ব নেই। এই সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় পরিস্থিতি দিন দিন অবনতি হচ্ছে। গত এক বছর ধরে আমরা দেখছি, দুষ্কৃতীরা সাধারণ মানুষ এবং বিরোধী দলের কর্মীদের লক্ষ্যবস্তু করছে। এই ষড়যন্ত্রকারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করতে হবে।”
এই ঘটনা রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। সাহু আরও জানান, গত ২৮ জুন, ২০২৫ তারিখে ভুবনেশ্বরের (Bhubaneswar) লোকসেবা ভবনে (রাজ্য সচিবালয়) এই হামলার ঘটনা ঘটে। অভিযোগ, বিজেপির কিছু দুষ্কৃতী সিনিয়র ওএএস অফিসারের উপর হামলা চালায়, যিনি তাঁর কার্যালয়ে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
হামলায় অফিসার গুরুতরভাবে আহত হয়েছেন এবং তাঁকে ভুবনেশ্বরের (Bhubaneswar) একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে, তবে এখনও কোনো গ্রেপ্তারের খবর পাওয়া যায়নি। বিজেডি নেতা অরুণ কুমার সাহু এই ঘটনাকে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সম্পূর্ণ ভাঙন হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
তিনি বলেন, “বিজেপি সরকারের আমলে ওড়িশায় অপরাধের হার বেড়েছে। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সরকারি কর্মকর্তারাও নিরাপদ নন। এই হামলা কেবল একটি ঘটনা নয়, বরং বিজেপি নেতাদের পৃষ্ঠপোষকতায় দুষ্কৃতীদের উৎসাহিত করার প্রমাণ।” তিনি আরও অভিযোগ করেন, মুখ্যমন্ত্রী মোহন চরণ মাঝির নেতৃত্বাধীন সরকার জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে।
এই ঘটনা রাজ্যের বিরোধী দলগুলির মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। বিজেডি এবং কংগ্রেস নেতারা এর আগেও রাজ্যে মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধ, এসসি-এসটি সম্প্রদায়ের উপর অত্যাচার এবং আইনশৃঙ্খলার অবনতির অভিযোগ তুলে মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবন ঘেরাও করার চেষ্টা করেছিল। বিজেডি নেতা ইপ্সিতা সাহু বলেন, “মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধের ঘটনা বাড়ছে, এবং এখন সরকারি কর্মকর্তারাও নিরাপদ নন। এই সরকারের ব্যর্থতা স্পষ্ট।”
বিজেপি এই অভিযোগের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। বিজেপি বিধায়ক অশোক মোহান্তি বলেন, “বিজেডি এই ঘটনাকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করছে। তারা যখন ক্ষমতায় ছিল, তখনও আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটেছিল। এখন তারা কেবল রাজনৈতিক সুবিধা নিতে চাইছে।” তিনি আরও দাবি করেন, বিজেপি সরকার নিরাপত্তা জোরদার করতে একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার তদন্তে একটি বিশেষ দল গঠন করা হয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজ এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান সংগ্রহ করা হচ্ছে। তবে, বিজেডি অভিযোগ করেছে, পুলিশের তদন্তে সরকারের হস্তক্ষেপ রয়েছে, (Bhubaneswar) যা এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তে বাধা সৃষ্টি করছে। অরুণ সাহু বলেন, “যদি সরকার সত্যিই নিরপেক্ষ হয়, তবে অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করা উচিত। এই হামলার পেছনে যারা ষড়যন্ত্র করেছে, তাদের চিহ্নিত করতে হবে।”
এই ঘটনা রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে। বিজেডি এবং কংগ্রেস বারবার বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলার অবনতির অভিযোগ তুলেছে। গত মার্চ মাসে বিজেডি বিধায়করা বিজু পট্টনায়কের জন্মবার্ষিকীতে পঞ্চায়েতি রাজ দিবসের তারিখ পরিবর্তনের প্রতিবাদে বিধানসভায় হট্টগোল সৃষ্টি করেছিল। সেই সময় অরুণ সাহু সরকারের এই সিদ্ধান্তকে ‘ওড়িশার অস্মিতার উপর আঘাত’ হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন।
সামাজিক মাধ্যমে (Bhubaneswar) এই ঘটনা নিয়ে তীব্র আলোচনা চলছে। একজন নেটিজেন লিখেছেন, “রাজ্য সচিবালয়ে যদি সরকারি কর্মকর্তারা নিরাপদ না থাকেন, তবে সাধারণ মানুষের কী হবে?” আরেকজন লিখেছেন, “বিজেপি সরকারের আমলে ওড়িশায় অপরাধ বেড়েছে। এই হামলা তারই প্রমাণ।” তবে, বিজেপি সমর্থকরা দাবি করছেন, বিজেডি এই ঘটনাকে রাজনৈতিক রঙ দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করছে।
অষ্টম বেতন কমিশনে মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য বড় সুযোগ নাকি হতাশার কারণ?
এই ঘটনা ওড়িশার (Bhubaneswar) আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উপর নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। অতীতে অরুণ সাহু নিজেও বিতর্কের মুখে পড়েছিলেন। ২০২০ সালে নয়াগড় জেলায় একটি পাঁচ বছরের শিশুকন্যার অপহরণ ও হত্যার ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে অভিযুক্তকে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। তবে, তিনি সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন।
পুলিশ (Bhubaneswar) জানিয়েছে, তারা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করছে এবং প্রমাণের ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে। তবে, এই ঘটনা রাজ্যের রাজনৈতিক দৃশ্যপটে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। আগামী দিনে তদন্ত কীভাবে এগোয় এবং অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করা হয় কিনা, তা ওড়িশার রাজনীতি ও প্রশাসনের উপর গভীর প্রভাব ফেলবে।