অসম, ১৭ সেপ্টেম্বর: বাংলা তথা সারাদেশে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী ইস্যু(Rohingya) নিয়ে উত্তাল রাজনৈতিক প্রাঙ্গন। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী অসমের একটি জনসভায় বলেন দেশের জনবিন্যাস পাল্টে যাচ্ছে দ্রুত হারে। অবৈধ অনুপ্রবেশ বেড়ে যাওয়ায় তৈরী হচ্ছে এই ধরণের সমস্যা। নাম না করে তিনি বাংলাকে টার্গেট করেন। আজ খোদ গেরুয়া শাসিত রাজ্য অসমে পুলিশের জালে একজন দুজন নয় গুনে গুনে ১১ জন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারী।
তারাপুর রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় গতকাল ১১ জন রোহিঙ্গা (Rohingya) মুসলিম অনুপ্রবেশকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই ঘটনা সারা দেশে অবৈধ অনুপ্রবেশের ইস্যুকে নতুন করে উত্তপ্ত করে তুলেছে। নাম না উল্লেখ করে তিনি বাংলাদেশ থেকে আসা অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের টার্গেট করে বলেছেন যে এই অনুপ্রবেশের ফলে দেশের সামাজিক-অর্থনৈতিক কাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কিন্তু এখন খোদ গেরুয়া শাসিত অসমেই এমন এক ঘটনা ঘটেছে, যা কেন্দ্রীয় সরকারের দাবিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে।
পুলিশের তথ্য অনুসারে, এই ১১ জন রোহিঙ্গা হায়দ্রাবাদ থেকে ট্রেনে ফিরেছিল। তারাপুর রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছানোর পর বজরং দলের সদস্যরা তাদের চিহ্নিত করেন। সন্দেহজনক আচরণ লক্ষ্য করে তারা স্থানীয় পুলিশকে খবর দেন, এবং অল্পক্ষণের মধ্যেই পুলিশ অভিযান চালিয়ে সকলকে গ্রেফতার করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা সকলে ইউএনএইচসিআর (জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা) কার্ড দেখিয়েছেন, যা প্রমাণ করে যে তারা মায়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের সদস্য। এই কার্ডগুলো তাদের শরণার্থী স্থিতি নির্দেশ করে। কিন্তু ভারতে অবৈধভাবে প্রবেশ সম্পূর্ণভাবে বেআইনি। পুলিশ সূত্র জানাচ্ছে, এরা দীর্ঘদিন ধরে ভারতে লুকিয়ে থেকে কাজকর্ম করছিল এবং সম্প্রতি হায়দ্রাবাদ থেকে অসমে ফিরছিল।
এই গ্রেফতারের ঘটনা অসমের রাজনৈতিক মহলে ঝড় তুলেছে। বিজেপি সরকারের সমর্থকরা এটিকে তাদের ‘জাতীয় নিরাপত্তা’ নীতির সাফল্য হিসেবে দেখছেন। বজরং দলের মতো সংগঠনগুলো সরকারের সঙ্গে মিলে অবৈধ প্রবাসীদের বিরুদ্ধে সতর্কতামূলক ভূমিকা পালন করছে। অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বলেছেন, “আমাদের সরকার অবৈধ অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। এই রোহিঙ্গাদের গ্রেফতার প্রমাণ করে যে আমরা সতর্ক এবং সক্রিয়।”
সারাদেশে অবৈধ অনুপ্রবেশের ইস্যু দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দু। প্রধানমন্ত্রী মোদীর সাম্প্রতিক বক্তব্যে তিনি বলেছেন, “দেশের জনবিন্যাস দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে। অবৈধ অনুপ্রবেশের ফলে স্থানীয় সংস্কৃতি, অর্থনীতি এবং নিরাপত্তা বিপন্ন।” এই বক্তব্যে তিনি বাংলাদেশকে ইঙ্গিত করে বলেছেন যে পশ্চিমবঙ্গ এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলে এই সমস্যা বেশি।
কিন্তু এই ১১ জন রোহিঙ্গার গ্রেফতার অসমকে নতুন করে বিতর্কের কেন্দ্র বিন্দুতে নিয়ে এসেছে। মায়ানমারে সাম্প্রদায়িক হিংসার শিকার হয়ে ২০১৭ সাল থেকে রোহিঙ্গারা বড় আকারে ভারতে আশ্রয় নিচ্ছে। রাষ্ট্রসংঘের তথ্য অনুসারে, ভারতে প্রায় ৪০,০০০ রোহিঙ্গা শরণার্থী রয়েছে। এদের মধ্যে অনেকেই অবৈধভাবে প্রবেশ করেছে। অসমের মতো সংবেদনশীল রাজ্যে এদের উপস্থিতি স্থানীয় অধিবাসীদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করছে। যা ১৯৮০-এর দশকের অসম আন্দোলনের স্মৃতি ফিরিয়ে আনে।