গুয়াহাটি, ২৭ অক্টোবর: অসমে বহুবিবাহের দিন শেষ। এবার থেকে একাধিক বিবাহ করলে জেল অবধারিত। সোমবার গুয়াহাটির এক সরকারি অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ডক্টর হিমন্ত বিশ্ব শর্মা স্পষ্ট জানালেন, “অসম সরকার বহুবিবাহের বিরুদ্ধে কঠোর আইন আনছে। আগামী ২৫ নভেম্বর রাজ্য বিধানসভায় বিল উত্থাপন করা হবে। যদি কোনো ব্যক্তি প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে আদালতের মাধ্যমে বিবাহবিচ্ছেদ না ঘটিয়ে দ্বিতীয় বিবাহ করেন, তবে তাঁকে সাত বছর বা তারও বেশি মেয়াদের কারাদণ্ড দেওয়া হবে।”
এই ঘোষণা শুধু আইনি পদক্ষেপ নয়, বরং সামাজিক সংস্কারের বার্তা বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “নারীর মর্যাদা, সুরক্ষা ও আর্থিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যেই এই আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে। বহুবিবাহ সমাজে বৈষম্য, অন্যায় ও নির্যাতনের জন্ম দেয়। আমরা চাই, এমন অসম গড়ে উঠুক যেখানে নারীকে অবমাননা করা বা তাঁর অধিকার হরণ করা কোনোভাবেই সহ্য করা হবে না।”
আরও পড়ুন: অজিভূমিতে দাঁড়িয়ে সূর্যকে নিয়ে ‘বিস্ফোরক’ গম্ভীর!
হিমন্ত বিশ্ব শর্মা জানান, গত দুই বছর ধরে সরকার পরিকল্পিতভাবে এই বিষয়ে কাজ করছে। ইতিমধ্যেই রাজ্য মন্ত্রিসভা বিলটি বিধানসভায় উপস্থাপনের অনুমোদন দিয়েছে। তিনি বলেন, “এই আইন শুধুমাত্র শাস্তির উদ্দেশ্যে নয়, বরং সমাজের নৈতিক ও পারিবারিক শুদ্ধতার জন্য প্রয়োজনীয়।”
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, এই পদক্ষেপ হিমন্ত সরকারের “নারী-কেন্দ্রিক সংস্কার” নীতির ধারাবাহিকতা। ইতিমধ্যেই অসম সরকার বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযান চালিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী জানান, “২০২২ সাল থেকে আমরা অসমে বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেছি। এখন পর্যন্ত ৫,০০০ পুরুষ এবং ৩,০০০ অভিভাবককে গ্রেফতার করা হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “অনেক বাবা-মা দারিদ্র্যের কারণে মেয়েদের অল্প বয়সে বিয়ে দেন। আমি তাঁদের জিজ্ঞেস করেছিলাম, যদি সরকার ছাত্রীদের শিক্ষার সম্পূর্ণ দায়িত্ব নেয়, তাহলে কি মেয়েকে বিয়ে দেবেন? তাঁরা বলেছিলেন না, কখনই না।” হিমন্ত স্পষ্ট বার্তা দেন, “সরকারের লক্ষ্য একটাই অসমের প্রতিটি নারী যেন আত্মনির্ভর হয়, শিক্ষিত হয়, এবং নিজের মর্যাদা নিয়ে সমাজে মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারে।”
এই উদ্যোগের রাজনৈতিক তাৎপর্য নিয়েও আলোচনা চলছে। অনেকের মতে, হিমন্ত সরকারের এই পদক্ষেপ সমাজের রক্ষণশীল অংশের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। তবে রাজ্য সরকার বলছে, এটি কোনো ধর্মীয় ইস্যু নয়, বরং নারীর সুরক্ষা এবং সামাজিক ন্যায়ের বিষয়।
অসম মহিলা কমিশনের চেয়ারম্যান মণিকা শর্মা এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, “অসমে বহুবিবাহ ও বাল্যবিবাহের কারণে বহু নারী মানসিক ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। এই আইনের মাধ্যমে তাঁদের জন্য ন্যায়বিচারের পথ খুলবে।”
অন্যদিকে, বিরোধী কংগ্রেস শিবির দাবি করেছে, সরকার এই বিলকে নির্বাচনী প্রচারের অংশ হিসেবে ব্যবহার করছে। কংগ্রেস মুখপাত্র দেবব্রত শর্মা বলেন, “নারীর অধিকার রক্ষায় শুধু আইন নয়, বাস্তবিক শিক্ষা ও কর্মসংস্থান প্রয়োজন। সরকার সেটা করছে না।”
তবে সরকারি মহল স্পষ্ট জানিয়েছে, “অসম সরকার সামাজিক সংস্কারের জন্যই এই পদক্ষেপ নিয়েছে কোনো রাজনৈতিক স্বার্থে নয়।” যেভাবেই দেখা হোক, অসমের ইতিহাসে এই আইন নিঃসন্দেহে একটি যুগান্তকারী অধ্যায় হয়ে থাকবে। বহুবিবাহ বিরোধী এই বিল কার্যকর হলে রাজ্যের সামাজিক কাঠামোয় বড় পরিবর্তন আসতে পারে, এমনটাই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।



