“মামাবাড়ির” নয়া সিদ্ধান্তে ভয়ে কাঁপছে অনুপ্রবেশকারীরা

assam-1950-immigrants-expulsion-act-implementation-24-hour-order

গুয়াহাটি: অসমের রাজনীতিতে যেন নতুন অধ্যায় শুরু হল। রাজ্য সরকার ঘোষণা করেছে দীর্ঘদিন অকার্যকর অবস্থায় থাকা “The Immigrants (Expulsion from Assam) Act, 1950” পুনরায় চালু করা হবে এবং বেআইনি অনুপ্রবেশকারীদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ভারত ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হবে। মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার এই সিদ্ধান্তকে ঘিরে ইতিমধ্যেই তীব্র আলোড়ন তৈরি হয়েছে রাজ্যজুড়ে এবং জাতীয় রাজনৈতিক মহলে।

Advertisements

সরকারি বক্তব্য অনুযায়ী, এই সিদ্ধান্তের উদ্দেশ্য অসমের সীমানা রক্ষা করা, সাংস্কৃতিক পরিচয় ও জনসংখ্যাগত ভারসাম্য বজায় রাখা, এবং বহু বছরের সামাজিক অর্থনৈতিক চাপ কমানো। মুখ্যমন্ত্রীর দাবি “অসমে বেআইনি অনুপ্রবেশ শুধু আইনভঙ্গ নয়, বরং রাজ্যের ভাষা, ভূমি, সংস্কৃতি ও সামাজিক কাঠামোর ওপর দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি ডেকে আনছে। তাই কঠোর সিদ্ধান্ত ছাড়া বিকল্প নেই।”

   

শুভেন্দুর গড়ে বিজেপি ভাঙন, তৃণমূলে ৫০ পরিবারের যোগ

১৯৫০ সালের Immigrants Expulsion Act মূলত জাতীয় নিরাপত্তা ও সীমান্তরক্ষার স্বার্থে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের দেশ থেকে বহিষ্কার করার জন্য তৈরি হয়েছিল। তবে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কারণে বহু দশক ধরেই আইনটি নিষ্ক্রিয় অবস্থায় ছিল। এবার প্রথমবার স্পষ্টভাবে এই আইনের পুনর্ব্যবহার ঘোষণা করলো আসাম সরকার।

সরকার জানিয়েছে, যাদের বিরুদ্ধে অবৈধ অনুপ্রবেশের যথেষ্ট প্রমাণ থাকবে, তাঁদের প্রথমে সাময়িক আটক শিবিরে রাখা হবে, এরপর কেন্দ্রীয় সরকারের সাহায্যে দেশান্তরের প্রক্রিয়া শুরু হবে। যদিও মানবাধিকার কর্মীদের প্রশ্ন ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পরিচয় যাচাই করা কতটা বাস্তবসম্মত? কোথায়, কীভাবে এবং কোন দেশের সঙ্গে সমন্বয়ে তাঁদের ফেরত পাঠানো হবে? ভুল পরিচয় শনাক্ত হলে নিরীহ নাগরিকদের ঝুঁকি কতটা?

Advertisements

সরকার দাবি করেছে, কঠোর আইন প্রয়োগের পাশাপাশি মানবিক দৃষ্টিও বজায় রাখা হবে মহিলা, শিশু, অসুস্থ ব্যক্তি ও প্রবীণদের ক্ষেত্রে পৃথক নজরদারি এবং আইনি সহায়তা দেওয়া হবে। শাসক ও বিরোধী দু’পক্ষেই উত্তেজনা শাসক শিবিরের বক্তব্য, “অসমের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষা করা হয়েছে, রাজ্যের মানুষ বহু বছর পর ন্যায়বিচার পেল।” অন্যদিকে বিরোধীদের অভিযোগ এটি নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক মেরুকরণের কৌশল এবং এর ফলে সাধারণ দরিদ্র মানুষের মাথার ওপর ভয় ও অনিশ্চয়তার বোঝা চাপবে।

রাজনীতির বাইরে সাধারণ মানুষের মধ্যেও প্রতিক্রিয়া মিশ্র অনেকে সিদ্ধান্তকে “প্রয়োজনীয় ও দুঃসাহসী” হিসেবে দেখছেন। অন্যদিকে অনেকে আশঙ্কা করছেন এই প্রক্রিয়ার মধ্যে নথিবিহীন হলেও বহু বছর ধরে ভারতে থাকা পরিবারগুলো বিপাকে পড়তে পারে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, অনুপ্রবেশ শুধু সাংস্কৃতিক ইস্যু নয়, এর সঙ্গে যুক্ত শ্রমবাজার, ভূমি বিতরণ,সরকারি সুবিধা, জনসংখ্যাগত চাপ। তাই এই সিদ্ধান্তের প্রভাব আগামী বছরগুলিতে সামাজিক ও রাজনৈতিক কাঠামোতে স্পষ্ট হবে এমনটাই বিশ্লেষকদের মত। সরকার জানিয়েছে এই আইন প্রয়োগ হবে ধাপে ধাপে, তড়িঘড়ি নয়।

সহায়ক নথি, জেলা প্রশাসন, বিদেশি ট্রাইব্যুনাল ও আদালতের তদারকির মাধ্যমে পুরো প্রক্রিয়া পরিচালিত হবে। অন্যদিকে বিরোধী দল ও মানবাধিকার সংস্থাগুলি আইনি পথে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারে এমনটাই অনুমান রাজনৈতিক মহলে।