যদি ‘ইন্ডিয়া’-তে পালায়! নীতীশকে পরবর্তী উপরাষ্ট্রপতি? কমিশনে ভোটের প্রস্তুতি

জগদীপ ধনখড়ের আচমকা পদত্যাগের পর কে হবেন উপরাষ্ট্রপতি এমন প্রশ্ন উঠছে। একাধিক নাম চর্চিত। তবে সর্বাধিক আলোচিত নাম বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার (Nitish )। বারবার…

Bihar CM Exits Midway from NDA Meet Chaired by PM Modi, Tensions Surface

জগদীপ ধনখড়ের আচমকা পদত্যাগের পর কে হবেন উপরাষ্ট্রপতি এমন প্রশ্ন উঠছে। একাধিক নাম চর্চিত। তবে সর্বাধিক আলোচিত নাম বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার (Nitish )। বারবার জোট বদলে তিনি আপাতত এনডিএ শিবিরে। তবে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে তাকে আর মুখ করে ভোট লড়াই করবে না এনডিএ শিবির তাও স্পষ্ট। সেক্ষেত্রে নীতীশ যাতে ফের জোট বদল করে ইন্ডিয়া শিবিরে চলে না যান তার জন্য উপরাষ্ট্রপতি উপহার দিতে চলেছে বিজেপি। ধুরন্ধর রাজনীতিক নীতীশ কি সেই উপহার নেবেন?

জনতা দল ইউনাইটেড সুপ্রিমো নীতীশ কুমার এখন কেন্দ্রের মোদী সরকারের অন্যতম শরিকি ভরসা। আর আছেন চন্দ্রবাবু নাইডু। তবে বিহার বিধানসভা নির্বাচনে সে রাজ্যে ক্ষমতা দখলের জন্য মরিয়া বিজেপি। গত নির্বাচনে বিজেপি এ রাজ্যে বৃহত্তম দল হয়। তবে জোট সরকার গড়ার স্বার্থে নীতীশ কুমারের দল আসন কম পেলেও তাকেই মুখ্যমন্ত্রী করা হয়। তাকে এবার উপরাষ্ট্রপতি করে মূলধারার রাজনীতি থেকে অবসর নেওয়াতে তৎপর বিজেপি।

   

এছাড়াও আরও কিছু নাম উঠে আসছে। যেমন হারিবংশ নারায়ণ সিং। তিনি নীতীশের বিশেষ আস্থাভাজন। রাজ্যসভায় জেডিইউ দলের ডেপুটি চেয়ারম্যান। পরবর্তী নাম মনোজ সিনহা। তিনি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জম্মু-কাশ্মীরেফ লে. গভর্নর। এরপর আছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাজনাথ সিং। এরপরই থাকছে শশী থারুরের নাম। কংগ্রেসের সাংসদ হলেও তিনি তিনি প্রায়শই মোদী সরকারের এর নীতি সমর্থন করে আলোচনায় থাকেন।নাম থাকছে আরিফ মোহাম্মদ খানের। তিনি বিহারের রাজ্যপাল। পিছিয়ে পড়া গোষ্ঠীর ভোটের কথা মাথায় রেখে প্রাক্তন সাংসদ ও দলিত নেত্রী রামা দেবীর নামও থাকছে।

উপরাষ্ট্রপতি পদের ভোট প্রস্তুতি
নির্বাচন কমিশন আগামী ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সময়সূচি ঘোষণা করবে। জগদীপ ধনখড়ের অপ্রত্যাশিত পদত্যাগের ফলে প্রয়োজনীয়তা ও নির্দেশিকা অনুযায়ী, আগস্ট মাসের শেষ সপ্তাহের মধ্যেই দেশ নতুন উপরাষ্ট্রপতি পেতে চলেছে।নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক থেকে পদত্যাগপত্র সংক্রান্ত আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ পাওয়ার পরপরই প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। নির্বাচন আয়োজনের প্রয়োজনীয়তা নির্দেশ করে একটি সরকারি বিজ্ঞপ্তি আগামী দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে জারি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু আনুষ্ঠানিকভাবে ধনখড়ের পদত্যাগ গ্রহণ করেছেন, যার ফলে নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হওয়ার প্রায় দুই বছর আগেই উপরাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হয়ে পড়েছে। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৬৮(২) অনুযায়ী, পদত্যাগের ক্ষেত্রে উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য কোনও নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই। এই বিধান অনুযায়ী নির্বাচন “যত দ্রুত সম্ভব” সম্পন্ন করতে হবে।

Advertisements

রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচন আইন, ১৯৫২ অনুসারে, বিজ্ঞপ্তি জারির পরে নির্বাচন কমিশনকে সর্বোচ্চ ৩২ দিনের মধ্যে মনোনয়ন, যাচাই, প্রত্যাহার, ভোটগ্রহণ এবং গণনা সহ সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হয়। সেই অনুযায়ী, ২০২৫ সালের আগস্ট মাসের শেষে ভারতের পরবর্তী উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়ে শপথ নিতে পারেন। মনোনয়নপত্র বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের ১৪ দিনের মধ্যে জমা দিতে হবে।

ধনখড়ের পদত্যাগ ঘিরে রাজনৈতিক বিতর্ক
ধনখড়ের পদত্যাগ, যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাস্থ্যজনিত কারণে বলে জানানো হয়েছে, তা রাজনৈতিক অস্থিরতার একটি সপ্তাহের পর ঘটেছে। সূত্রের মতে, এই পদত্যাগের পেছনের ঘটনাপ্রবাহ শুরু হয় ধনখড়ের একটি বিতর্কিত সিদ্ধান্তের মাধ্যমে, যা তিনি রাজ্যসভার চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়েছিলেন। সোমবার, ধনখড় বিরোধী সাংসদদের একটি প্রস্তাব গ্রহণ করেন, যেখানে উচ্চ আদালতের বিচারপতি যশবন্ত বর্মার অপসারণ দাবি করা হয়েছিল, যিনি এক দুর্নীতির তদন্তের কেন্দ্রে রয়েছেন, কারণ তার বাসভবন থেকে বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থ উদ্ধার হয়।

কেন্দ্রীয় সরকার লোকসভায় বিচারপতি বর্মার বিরুদ্ধে পৃথকভাবে প্রস্তাব আনতে প্রস্তুতি নিয়েছিল। বিরোধী দলের সাংসদদের স্বাক্ষর ইতিমধ্যেই সংগ্রহ করা হয়েছিল এবং বিষয়টি নিয়ে নেতৃত্বে থাকার লক্ষ্য ছিল সরকারের। কিন্তু ধনখড় বিরোধী দলের পক্ষ থেকে রাজ্যসভায় আনা প্রস্তাব গ্রহণ করায় সরকারের কৌশল বিঘ্নিত হয়।

সরকারি সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে সঙ্গে সঙ্গে অবহিত করা হয়। ওই সন্ধ্যায় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং, অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে অংশ নেন। তারা বিজেপি সাংসদদের দফায় দফায় ব্রিফ করেন, যেখানে ধনখড়ের আচরণকে সংসদের শালীনতা লঙ্ঘন বলে অভিহিত করা হয়। সাংসদদের একটি পাল্টা প্রস্তাবে স্বাক্ষর করতে বলা হয় এবং পরবর্তী চার দিন দিল্লিতে অবস্থান করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। সরকারের এই প্রতিক্রিয়া জানার কিছুক্ষণের মধ্যেই ধনখড় তার পদত্যাগপত্র জমা দেন।