নয়াদিল্লি: ভারতের বিদেশ মন্ত্রক একপ্রকার স্পষ্ট জানিয়ে দিল, কেরালার নার্স নিমিষা প্রিয়ার বিরুদ্ধে ইয়েমেনে জারি মৃত্যুদণ্ড আদেশ বাতিল হয়েছে বলে যে দাবি সামনে এসেছে, তা এই মুহূর্তে তথ্যভিত্তিক নয়। মন্ত্রক সূত্রে মঙ্গলবার জানানো হয়েছে, “নিমিষা প্রিয়া সংক্রান্ত কিছু ব্যক্তি যে তথ্য প্রচার করছেন, তা ভুল এবং বিভ্রান্তিকর (Nimisha Priya Death Sentence)।”
ভারতের গ্র্যান্ড মুফতির দফতরের দাবি
এর আগে, সোমবার একটি বিস্ময়কর দাবি করে ভারতের গ্র্যান্ড মুফতির দফতর। তাদের বিবৃতিতে বলা হয়, ইয়েমেনের রাজধানী সানায় এক উচ্চপর্যায়ের আলোচনার শেষে নিমিষা প্রিয়ার মৃত্যুদণ্ড সম্পূর্ণরূপে বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ওই সিদ্ধান্তের জেরে দীর্ঘদিন ধরে স্থগিত থাকা মৃত্যুদণ্ড এখন সম্পূর্ণ রূপে প্রত্যাহার করা হয়েছে বলেই দাবি করা হয়।
কিন্তু, ভারতের বিদেশ দফতরের মতে, ইয়েমেন সরকারের তরফ থেকে এমন কোনও সিদ্ধান্তের সরকারি নথি বা আনুষ্ঠানিক বিবৃতি এখনও পর্যন্ত ভারত সরকারের হাতে এসে পৌঁছায়নি। ফলে, কোনও পক্ষের মৌখিক বক্তব্যের ভিত্তিতে এমন গুরুতর সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে, এই দাবি করা অনুচিত ও সময়ের আগে।
কে এই নিমিষা প্রিয়া?
কেরালার পালাক্কাড জেলার বাসিন্দা নিমিষা প্রিয়া একজন প্রশিক্ষিত নার্স, যিনি ২০০৮ সালে জীবিকার খোঁজে ইয়েমেন পাড়ি দেন। পেশাগত সাফল্যের পাশাপাশি তিনি স্থানীয় নাগরিক তালাল আবদো মাহদির সঙ্গে যৌথভাবে একটি চিকিৎসাকেন্দ্র পরিচালনা করতেন। কিন্তু সেই সম্পর্ক পরে শোষণ ও নির্যাতনের চেহারা নেয়। অভিযোগ, মাহদি তাঁকে একতরফাভাবে ‘স্ত্রী’ দাবি করে তাঁর পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত করেন, যাতে তিনি ভারতে ফিরতে না পারেন।
২০১৭ সালে মাহদির হেফাজত থেকে নিজের কাগজপত্র উদ্ধার করতে গিয়ে নিমিষা তাঁকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচেতন করার চেষ্টা করেন। সেই চেষ্টাই বিপর্যয়ের রূপ নেয়, ওই ইয়েমেনি নাগরিকের মৃত্যু হয়। নিমিষাকে গ্রেপ্তার করে ২০১৮ সালে দোষী সাব্যস্ত করা হয় এবং ২০২০ সালে ইয়েমেনের আদালত তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেয়।
কূটনৈতিক চাপ ও মৃত্যুদণ্ড স্থগিত
২০২৪ সালের শেষদিকে ইয়েমেনের রাষ্ট্রপতি রাশাদ আল-আলিমি এবং হুতি প্রশাসনের নেতা মাহদি আল-মাশাত মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন করেন। চলতি বছরের ১৬ জুলাই ছিল সেই সাজা কার্যকরের নির্ধারিত দিন। তবে ঠিক তার আগেই, ভারতের গ্র্যান্ড মুফতি কান্তাপুরম এ পি আবুবকর মুসলিয়ার ব্যক্তিগতভাবে হস্তক্ষেপ করে ইয়েমেনি নেতৃত্বের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তাঁর অনুরোধে আপাতত মৃত্যুদণ্ড স্থগিত রাখা হয়।
সেই পরিপ্রেক্ষিতেই সোমবার মুফতির দফতর থেকে দাবি করা হয়, শুধুমাত্র স্থগিত নয়—সেই সাজাই নাকি সম্পূর্ণরূপে বাতিল হয়েছে।
ভারতের অবস্থান: “সতর্কতা ও সংযম জরুরি”
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রকের বক্তব্যে পরিষ্কারভাবে উঠে এসেছে—যথাযথ কূটনৈতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সরকারি ভাবে লিখিত নিশ্চয়তা না পাওয়া পর্যন্ত কোনও সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলা যাবে না। সূত্রের খবর, ইয়েমেন সরকারের পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত কোনও নথিভিত্তিক ঘোষণা ভারতকে জানানো হয়নি।
নিমিষা প্রিয়ার পরিবার ও সমর্থকেরা আশা রাখছেন ‘blood money’ বা রক্তমূল্য প্রদানের মাধ্যমে ইয়েমেনি আইনের অধীনে শেষ পর্যন্ত মুক্তি মিলবে।
তবে যেহেতু বিষয়টি একাধিক কূটনৈতিক ও ধর্মীয় স্তরে জটিল আলোচনার অন্তর্গত, তাই সরকার কোনও আবেগপ্রবণ বা প্রচারমূলক বার্তার ভিত্তিতে অবস্থান নিতে নারাজ। পররাষ্ট্র মন্ত্রকের বক্তব্য, “সংবেদনশীল মামলাগুলিতে নির্ভুল তথ্য ও সতর্কতা—এই দুই-ই সবচেয়ে বড় দায়িত্ব।”