নিখিল সোসালের অন্তর্বর্তী জামিন খারিজ হাই কোর্টে

কর্ণাটক হাইকোর্ট (high-court) মঙ্গলবার (১০ জুন, ২০২৫) রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু (RCB)-এর মার্কেটিং প্রধান নিখিল সোসালের অন্তর্বর্তী জামিনের আবেদন খারিজ করেছে। এই মামলা ৪ জুন এম. চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের বাইরে সংঘটিত ভয়াবহ ভিড়ের ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কিত, যেখানে ১১ জনের মৃত্যু হয় এবং ৫৬ জন আহত হয়।

আদালত (high-court) সোসালের আবেদনের উপর তার রায় ১১ জুন পর্যন্ত স্থগিত রেখেছে। সোসাল ৬ জুন ভোরে বেঙ্গালুরুর কেম্পেগৌড়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে দুবাই যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, যখন সেন্ট্রাল ক্রাইম ব্রাঞ্চ (CCB) তাঁকে গ্রেপ্তার করে। তাঁর আইনজীবী এই গ্রেপ্তারের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দাবি করেছেন যে এটি রাজনৈতিক নির্দেশের প্রভাবে এবং প্রক্রিয়াগত ত্রুটির মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছে।

সোসালের আইনজীবীর যুক্তি (high-court)

নিখিল সোসালের পক্ষে সিনিয়র অ্যাডভোকেট (high-court) সন্দেশ চৌতা বিচারপতি এস আর কৃষ্ণকুমারের একক বিচারপতির বেঞ্চে যুক্তি উপস্থাপন করেন। তিনি দাবি করেন, গ্রেপ্তার প্রক্রিয়ায় গুরুতর ত্রুটি ছিল, বিশেষ করে এই কারণে যে তদন্ত ইতিমধ্যেই ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্টে (CID) হস্তান্তর করা হয়েছিল।

চৌতা বলেন, “তারা (CCB) বলছে, তারা উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে গ্রেপ্তার করতে পারে। কিন্তু এমন ক্ষমতা থাকলেও, তা লিখিতভাবে থাকতে হবে এবং গ্রেপ্তারের সময় তা জানানো উচিত(high-court)।” তিনি ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা (BNSS)-এর ধারা ৫৫ উল্লেখ করে বলেন, গ্রেপ্তারের সময় প্রয়োজনীয় নথি সরবরাহ করা হয়নি, যা নাগরিকের মৌলিক অধিকার এবং স্বাধীনতার লঙ্ঘন।

তিনি আরও যুক্তি দেন, “এটি স্বাধীনতার প্রশ্ন। যদি অপরাধের শাস্তি সাত বছরের বেশি হলেও, বিশ্বাসযোগ্য কারণ এবং রেকর্ডে প্রমাণ না থাকলে কাউকে স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করা যায় না।” চৌতা সুপ্রিম কোর্টের(high-court) একটি রায়ের উল্লেখ করে এই যুক্তি সমর্থন করেন।

চৌতা আরও বলেন, প্রাথমিক এফআইআর-এ সোসাল বা অন্য কোনো ব্যক্তির নাম উল্লেখ ছিল না, শুধুমাত্র ‘সংস্থা’ (entities) হিসেবে RCB, DNA এন্টারটেইনমেন্ট এবং কর্ণাটক স্টেট ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন (KSCA)-এর উল্লেখ ছিল।

তিনি প্রশ্ন তোলেন, “এফআইআর-এ কোনো ব্যক্তির নাম নেই। তাহলে কি RCB, KSCA বা DNA-এর সবাইকে গ্রেপ্তার করা যায়? এটি সম্পূর্ণ নির্বিচারে এবং নির্বাচনী(high-court)।” তিনি দাবি করেন, গ্রেপ্তারের সময় সোসালকে কোনো তদন্তে অংশ নেওয়ার নোটিশ দেওয়া হয়নি এবং তিনি পালানোর চেষ্টা করছিলেন বলে যে অভিযোগ, তা অপ্রমাণিত।

তিনি বলেন, “তিনি তাঁর স্ত্রী এবং দুই বছরের সন্তানের সঙ্গে বিমানবন্দরে ছিলেন। তিনি পালাচ্ছিলেন বলে কোনো প্রমাণ নেই। দলের অন্য সদস্যরাও সেদিন ভ্রমণ করছিলেন।”

আদালতের প্রশ্ন এবং তদন্ত হস্তান্তর নিয়ে বিভ্রান্তি

বিচারপতি (high-court) কৃষ্ণকুমার তদন্ত CID-তে হস্তান্তরের বিজ্ঞপ্তি এবং CCB-এর হঠাৎ হস্তক্ষেপ নিয়ে স্পষ্টীকরণ চান। তিনি প্রশ্ন করেন, “সমস্যা হল, CCB হঠাৎ এসে হস্তক্ষেপ করল। জনগণ শুধু জানে যে তদন্ত CID-এর হাতে দেওয়া হয়েছে। তারপর ভোরে CCB সোসালকে গ্রেপ্তার করে। এর মাঝে কী ঘটল?” তিনি আরও বলেন, “থানায় অন্তত গ্রেপ্তারের কারণ জানানো উচিত ছিল।”

চৌতা জানান, (high-court) গ্রেপ্তারের কারণ বিকেল ২:৩০টায় জানানো হয়, যা প্রক্রিয়াগত লঙ্ঘন। তিনি আরও বলেন, রিমান্ড আবেদনে রাজ্য জানিয়েছে যে তদন্ত CID-এর হাতে, তবুও কাব্বন পার্ক পুলিশ সোসালকে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে পেশ করে।

চৌতা সময়রেখার অসঙ্গতি তুলে ধরে বলেন, ৫ জুন তদন্ত CID-তে হস্তান্তর করা হয়, কিন্তু ৬ জুন ভোর ৪:৩০টায় সোসালকে গ্রেপ্তার করা হয়, এবং একই সময়ে DNA এন্টারটেইনমেন্টের তিনজন কর্মী—সুনীল ম্যাথু, কিরণ এবং সুমন্ত—কে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি প্রশ্ন তোলেন, “CCB-কে হস্তক্ষেপের জন্য কোন আইনি প্রক্রিয়া অনুমোদন করেছিল?”

তিনি আরও বলেন, (high-court) গ্রেপ্তারের জন্য কোনো প্রাথমিক প্রমাণ ছিল না এবং এটি মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধারামাইয়ার মৌখিক নির্দেশের ভিত্তিতে করা হয়েছে, যা ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতার লঙ্ঘন। তিনি দাবি করেন, “মুখ্যমন্ত্রীর কি গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেওয়ার ক্ষমতা আছে? তিনি শুধু বলতে পারতেন যে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে এবং তদন্ত আইন অনুযায়ী এগিয়ে যাবে।”

রাজ্যের পক্ষে যুক্তি

রাজ্যের পক্ষে অ্যাডভোকেট (high-court) জেনারেল শশি কিরণ শেট্টি বলেন, সোসালকে বিমানবন্দরে গ্রেপ্তার করা হয় কারণ আশোক নগর পুলিশের তথ্য ছিল যে তিনি দেশ ছাড়ার চেষ্টা করছেন। তিনি দাবি করেন, গ্রেপ্তার আইন অনুযায়ী করা হয়েছে এবং CCB-কে সহায়তার জন্য নিয়োগ করা হয়েছিল।

তিনি আরও বলেন, RCB-এর এক্স পোস্টে ফ্রি এন্ট্রির ঘোষণা করা হয়েছিল, যা ১৩ কোটি মানুষ দেখেছে এবং এটি বিশাল জনসমাগমের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তবে, তিনি মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের অভিযোগের জবাবে বলেন, তিনি এ বিষয়ে নির্দেশনা নেবেন এবং লিখিত জবাব দেবেন।

ঘটনার পটভূমি এবং আইনি পদক্ষেপ

৪ জুন RCB-এর প্রথম আইপিএল জয় উদযাপনের জন্য এম. চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের বাইরে বিশাল জনসমাগম হয়। পুলিশের দাবি, RCB এই ইভেন্টের জন্য অনুমতি চায়নি, এবং ফ্রি এন্ট্রির ঘোষণার ফলে লক্ষাধিক মানুষ জড়ো হয়, যা ভিড়ের ঘটনার কারণ হয়।

এফআইআর-এ RCB, DNA এন্টারটেইনমেন্ট এবং KSCA-এর বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার (BNS) ধারা ১০৫ (হত্যার ইচ্ছা ছাড়া নরহত্যা), ১১৫(২) (স্বেচ্ছায় আঘাত), ১১৮(১) (বিপজ্জনক অস্ত্র দিয়ে আঘাত), ১৯০ (অবৈধ সমাবেশ), ১২৫(ক) (মিথ্যা হলফনামা) এবং ১২৫(খ) (বেপরোয়া কাজ) ধারায় মামলা দায়ের করা হয়।

মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধারামাইয়া (high-court) ৫ জুন পাঁচজন সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তাকে সাসপেন্ড করেন এবং RCB, DNA এবং KSCA-এর প্রতিনিধিদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, এই ঘটনা “দায়িত্বহীনতা এবং অবহেলার” ফল। রাজ্য সরকার মৃতদের পরিবারের জন্য ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ এবং আহতদের চিকিৎসার ব্যয় বহনের ঘোষণা করেছে। RCBও ‘RCB Cares’ নামে একটি তহবিল গঠন করে আহতদের সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

ম্যাচ কমিশনার তৈরির উদ্যোগ নিল IFA, তিনদিনের ওয়ার্কশপ কলকাতায়

আদালতের পরবর্তী পদক্ষেপ

আদালত এই মামলায় ১১ জুন আরও শুনানির জন্য তারিখ নির্ধারণ করেছে। এছাড়াও, এই ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিত পিআইএল-এর শুনানি ১২ জুন নির্ধারিত হয়েছে। KSCA-এর শীর্ষ কর্মকর্তারা গ্রেপ্তার থেকে অন্তর্বর্তী সুরক্ষা পেয়েছেন, তবে তাদের তদন্তে সহযোগিতা করতে বলা হয়েছে। CID এখন তদন্তের দায়িত্বে রয়েছে এবং সোসাল সহ অন্যান্য গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেওয়ার পরিকল্পনা করছে।

এই ঘটনা বেঙ্গালুরুর (high-court) জননিরাপত্তা ব্যবস্থার গুরুতর ত্রুটি প্রকাশ করেছে। হাইকোর্টের কঠোর প্রশ্ন এবং সোসালের গ্রেপ্তারের বৈধতা নিয়ে বিতর্ক এই মামলার জটিলতা তুলে ধরে। রাজনৈতিক নির্দেশের অভিযোগ এবং প্রক্রিয়াগত ত্রুটির দাবি এই ঘটনাকে আরও গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে। আদালতের চূড়ান্ত রায় এবং CID-এর তদন্ত ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।