Love Without Borders: ভারতীয় অজয় আর বাংলাদেশী জুলির প্রেমকাহানিতে নয়া মোড়

‘সীমান্তের ওপারে ভালোবাসা’… কথাগুলো এই মুহূর্তে আলোচনায়। কারণ, তা পাকিস্তানের সীমা হায়দার এবং ভারতের সচিন মীনার প্রেমের গল্প হোক বা পাকিস্তানে যাওয়া ভারত থেকে আঞ্জু…

‘সীমান্তের ওপারে ভালোবাসা’… কথাগুলো এই মুহূর্তে আলোচনায়। কারণ, তা পাকিস্তানের সীমা হায়দার এবং ভারতের সচিন মীনার প্রেমের গল্প হোক বা পাকিস্তানে যাওয়া ভারত থেকে আঞ্জু ও নাসরুল্লাহর প্রেমের গল্প হোক, দুটোই শিরোনামে। এই দুটি প্রেমের গল্পের পাশাপাশি আরেকটি প্রেমের গল্প শিরোনামে রয়েছে । এটি অজয় এবং জুহি ওরফে জুলির গল্প। অজয় উত্তরপ্রদেশের মোরাদাবাদ জেলার বাসিন্দা, আর জুহি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার বাসিন্দা। এবার এই দুজনের প্রেমের গল্পে এসেছে নতুন মোড়, যা অবাক করার মতো।

প্রায় ১৫ দিন আগে, সিভিল লাইন থানা এলাকার বাসিন্দা সুনিতা নামে এক মহিলা এসএসপির সাথে দেখা করেছিলেন এবং তার ছেলেকে বাংলাদেশ থেকে নিরাপদে ফিরিয়ে আনার আবেদন করেছিলেন। মহিলা এসএসপিকে বলেছিলেন যে তার ছেলে ফেসবুকে এক বাংলাদেশি মেয়ের সাথে দেখা করেছিল। কিছুক্ষণ পর মেয়েটি তার মেয়েকে নিয়ে মোরাদাবাদে আসে আমার ছেলের সাথে দেখা করতে। এখানে দুজনেই বিয়ে করেন। বিয়ের প্রায় তিন মাস পর মেয়েটি বাংলাদেশে ফিরে যায়। তার ছেলেও মেয়ের সঙ্গে গেলেও ছেলেকে সেখানে আটকে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন।

   

বাংলাদেশে আটকে পড়া মোরাদাবাদের যুবকের খবর পাওয়া মাত্রই চিন্তিত হয়ে পড়ে পুলিশ। গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে পুলিশের টিম তদন্তে নামে। তবে পুলিশ ও তদন্তকারী সংস্থার দীর্ঘ তদন্তের পর এবার অজয় ও জুলির প্রেমের গল্পে এসেছে নতুন মোড়। তথ্য অনুযায়ী, সুনিতার ছেলে অজয় সাইনি ট্রাক চালাতেন। ২০১৭ সালে, তিনি ফেসবুকে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার একটি মেয়ের সাথে দেখা করেছিলেন। মেয়েটির নাম জুহি ওরফে জুলি, সে ঢাকার গাজীপুরের বাসিন্দা।

ফেসবুকে প্রেম হয়েছে, মোরাদাবাদে ডেকে বিয়ে করেছে

ধীরে ধীরে দুজনেই অনেক কথা বলতে লাগলো। দুজনেই প্রেমে পড়লে একদিন জুলি অজয়কে জানায় যে সে বিবাহিত। তার একটি ১১ বছর বয়সী কন্যা হালিমা রয়েছে, তবে তার স্বামী আর এই পৃথিবীতে নেই। বাড়িভাড়া থেকে প্রাপ্ত টাকা দিয়ে ঘরের খরচ চলে। এই কথা শুনে অজয় দিশেহারা হয়ে যান এবং বলেন যে তিনি তাকে বিয়ে করবেন। এতে জুলি বলে যে তুমি হিন্দু আর আমি মুসলিম, বিয়ে করবো কিভাবে। তখন অজয় জুলিকে বলে তুমি ভারতে আসো। এখানে তুমি ধর্ম পরিবর্তন করে হিন্দু হয়ে যাও তারপর বিয়ে করব।

অজয়ের মতে, ২০২২ সালে জুহি ওরফে জুলি পশ্চিমবঙ্গ হয়ে ভারতে আসেন। সঙ্গে ছিলেন তার মেয়ে হালিমা। এখান থেকে ট্রেনে করে মোরাদাবাদে পৌঁছান তিনি। অজয় তাকে মোরাদাবাদে রিসিভ করে বাড়িতে নিয়ে যায়। কিছুদিন পর জুহি ওরফে জুলি ধর্মান্তরিত হয়ে মন্দিরে অজয়কে বিয়ে করে। অজয়ের এই বিয়েতে খুশি ছিলেন না তাঁর মা সুনিতা। অজয় মাকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করে, কিন্তু সে জুলিকে মানতে রাজি হননি।

অজয় কর্ণাটকে রোজগার করতে গেলে তার মা ও তার স্ত্রীর মধ্যে বিবাদ হয়

অজয় যেমন ট্রাক চালাতেন, কিছু দিন পর তিনি তার স্ত্রী জুলিকে তার মায়ের কাছে রেখে কর্ণাটকে রোজগার করতে গেলেও বাড়ির পরিস্থিতি উত্তেজনাপূর্ণ ছিল। সুনিতা আর জুলির মধ্যে মিল ছিল না। করভা চৌথের দিনে দুজনের মধ্যে এমন ঝগড়া হয় যে জুলি মোরাদাবাদ থেকে বাংলাদেশে ফিরে যায়। অজয় বিষয়টি জানতে পেরে আঁতকে ওঠেন। সে জুলিকে বুঝিয়ে বলে তুমি ফিরে যেও না কিন্তু জুহি রাজি না হয়ে বাংলাদেশে চলে গেল।

১১ মাস পর, অজয় মোরাদাবাদে আসেন এবং তার মাকে জুলিকে রাজি করাতে বলেন, কিন্তু অজয়ের মা স্পষ্টভাবে বলেন যে তিনি জুলিকে এই বাড়িতে রাখবেন না। এদিকে জুলিও অজয়ের মোরাদাবাদে ফিরে আসার কথা জানতে পেরেছে, তাই সে আবার বাংলাদেশ থেকে মোরাদাবাদে পৌঁছেছে। কয়েকদিন একসঙ্গে থাকার পর ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর অজুহাতে জুলি, তার মেয়ে হালিমা ও অজয় কলকাতায় যান। কলকাতায় পৌঁছে জুলি অজয়কে বলে যে বাংলাদেশে তার বাড়িতে বসবাসকারী ভাড়াটেদের মধ্যে কিছু বিরোধ রয়েছে, তাকে চলে যেতে হবে।

বাংলাদেশ সীমান্তে একটা রুম ভাড়া নিয়ে অটো চালাতে লাগলাম

অজয় তাকে এ বিষয়ে অনুমতি দেন। অজয় সেখানে বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে মাসে ৩,৫০০ টাকা ভাড়ায় একটি রুম নিয়ে বসবাস শুরু করে এবং একটি অটোরিকশা চালানো শুরু করে। অজয়ের কাছে জুলির বাংলাদেশি মোবাইল নেটওয়ার্ক কোম্পানির সিম কার্ড ছিল, যেটিতে সে সীমান্তের কাছে গেলে সহজেই বাংলাদেশের নেটওয়ার্ক আসতে শুরু করে। সীমান্তে গিয়ে জুহির সঙ্গে কথা বলতেন। এদিকে, সীমান্তে অবিরাম বর্ষণে একদিন অজয় নিচে পড়ে আহত হন, যার কারণে তার মাথা থেকে রক্তক্ষরণ শুরু হয়।

অজয়ই তার মাথা থেকে বয়ে যাওয়া রক্তের ছবি তার মায়ের কাছে পাঠিয়েছিলেন

অজয় তার রক্তের একটি ছবি তুলে তার মায়ের কাছে পাঠায়। তার মনে হয় যে তার রক্ত প্রবাহ দেখে মায়ের হৃদয় ভেঙে যাবে। এই ছবিটা সে তার বোনকেও পাঠিয়েছিল এবং তার কাছে কিছু ঋণের টাকা চেয়েছিল। ছেলের মাথায় রক্ত দেখে সুনিতার সন্দেহ হয় অপ্রত্যাশিত কিছু, তাই তিনি অজয়ের সাথে ফোনে যোগাযোগ করেন, কিন্তু ফোন তোলার পর অজয় জানান যে তিনি বাংলাদেশে আছেন। এখানে কথা বলা যাবে না।

পুত্রবধূ ঘরে থাকবে না, ছেলে একসঙ্গে থাকতে চাইলে ভাড়ায় থাকবে

বর্তমানে অজয় এসেছেন মোরাদাবাদে। অজয় তার পাসপোর্ট তৈরি করছে। অজয় জানান, পাসপোর্ট হয়ে গেলেই তিনি জুলির সঙ্গে দেখা করতে বাংলাদেশে যাবেন। অন্যদিকে সুনিতা জানান, তিনি খুব নার্ভাস ছিলেন, তবে ছেলে নিরাপদ থাকলে সব ঠিক আছে। তবে সুনিতা সাফ জানিয়ে দেন, জুলির সঙ্গে থাকতে চাইলে তাকে ভাড়ায় কোথাও থাকতে হবে। সে তাকে তার বাড়িতে থাকতে দেবে না।