ভারত সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক (MHA) বিদেশে বসবাসকারী ভারতীয় বংশোদ্ভূত নাগরিকদের জন্য প্রদত্ত ওভারসিজ সিটিজেন অব ইন্ডিয়া (OCI) কার্ডের ক্ষেত্রে নতুন ও কঠোর নিয়ম জারি করেছে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, যদি কোনও ওসিআই কার্ডধারীকে দুই বছর বা তার বেশি কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয় অথবা সাত বছর বা তার বেশি সাজাযোগ্য অপরাধে চার্জশিট দাখিল হয়, তবে তার নিবন্ধন বাতিল হতে পারে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ১১ আগস্ট এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, এই পরিবর্তন ভারতীয় নাগরিকত্ব আইন, ১৯৫৫ (Citizenship Act, 1955)-এর ৭ডি ধারা (da) অনুযায়ী কার্যকর হবে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, “ভারতীয় নাগরিকত্ব আইন, ১৯৫৫ (৫৭ অব ১৯৫৫)-এর ধারা ৭ডি (da) অনুসারে কেন্দ্রীয় সরকার এই মর্মে ঘোষণা করছে যে, কোনও ওসিআই নিবন্ধন বাতিলযোগ্য হবে যদি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি কমপক্ষে দুই বছরের জন্য কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন অথবা সাত বছর বা তার বেশি সাজাযোগ্য অপরাধে চার্জশিটভুক্ত হন।”
ভারত ও বিদেশ— উভয় ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য:
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, এই নিয়ম শুধু ভারতে সংঘটিত অপরাধের ক্ষেত্রেই নয়, বিদেশে সংঘটিত অপরাধ যেখানে সেই অপরাধ ভারতীয় আইনে অপরাধ হিসেবে স্বীকৃত, সেখানেও প্রযোজ্য হবে। অর্থাৎ, কোনও ওসিআই কার্ডধারী যদি বিদেশে কোনও গুরুতর অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হন, এবং সেই অপরাধ ভারতীয় আইনে অপরাধ বলে গণ্য হয়, তবে তাঁর কার্ড বাতিল হতে পারে।
আইনি কাঠামো আরও শক্তিশালী করার উদ্যোগ:
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্মকর্তারা সংবাদ সংস্থা এএনআই-কে জানিয়েছেন, এই পদক্ষেপের মূল লক্ষ্য হলো ওসিআই কার্ডের আইনি কাঠামো আরও শক্ত করা এবং এর অপব্যবহার রোধ করা। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, কয়েকটি ক্ষেত্রে দেখা গেছে যে ওসিআই কার্ডধারীরা অপরাধমূলক কার্যকলাপ বা বিরোধী-ভারতীয় কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন। এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতেই সরকার কড়া মনোভাব নিচ্ছে।
ওসিআই কার্ডের সুবিধা ও সীমাবদ্ধতা:
ওসিআই কার্ডধারীরা ভারতের জন্য একটি বহুমুখী, বহুবার প্রবেশযোগ্য আজীবন ভিসা পান। তাঁরা অর্থনৈতিক, আর্থিক ও শিক্ষাগত ক্ষেত্রে কিছু বিশেষ সুবিধা ভোগ করতে পারেন। এর মধ্যে রয়েছে—
ভারতে দীর্ঘমেয়াদি বসবাসের অনুমতি, একাধিকবার প্রবেশের সুযোগ, অর্থনৈতিক বিনিয়োগ ও শিক্ষাক্ষেত্রে সমান সুযোগ।
তবে, ওসিআই কার্ডধারীরা রাজনৈতিক অধিকার যেমন ভোটাধিকার, সাংবিধানিক পদে অধিষ্ঠান বা সরকারি চাকরিতে কিছু নির্দিষ্ট পদে আবেদন করার সুযোগ পান না।
প্রিভিলেজ, অধিকার নয়:
সরকার বারবার স্পষ্ট করে জানিয়েছে যে, ওসিআই কার্ড কোনও জন্মগত অধিকার নয়, বরং একটি বিশেষ সুবিধা। তাই আইন ভঙ্গ করলে বা ভারতের স্বার্থের বিরোধী কোনও কাজে যুক্ত হলে, এই কার্ড বাতিল করে দেওয়া যেতে পারে।
নতুন বিজ্ঞপ্তির প্রভাব:
আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, নতুন এই নিয়ম ওসিআই কার্ডধারীদের জন্য একটি কঠোর সতর্কবার্তা হিসেবে কাজ করবে। আগে যেখানে কেবলমাত্র গুরুতর অপরাধে দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেই পদক্ষেপ নেওয়া হতো, এখন চার্জশিট দাখিল হওয়াও বাতিলের পথে বড় পদক্ষেপ। ফলে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার আগেই যদি অপরাধের গুরুতরতা প্রমাণিত হয়, সরকার দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারবে।
একজন জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “ওসিআই একটি সুবিধা, অধিকার নয়। ভারতীয় আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রাখা প্রতিটি কার্ডধারীর দায়িত্ব। সাম্প্রতিক বিজ্ঞপ্তি ওসিআই স্কিমের সততা রক্ষায় সহায়ক হবে।”
পূর্ববর্তী পরিবর্তন ও নজরদারি বৃদ্ধি:
এর আগেও, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ওসিআই কার্ডধারীদের জন্য ভিসা-সম্পর্কিত কিছু শর্ত পরিবর্তন করেছিল। ২০২১ সালে জারি হওয়া নির্দেশনায় ওসিআই কার্ডধারীদের জন্য একাধিক কার্যকলাপে পূর্বানুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল, যেমন— গবেষণা, মিশনারি কার্যকলাপ, সাংবাদিকতা ইত্যাদি। এছাড়াও, ভারতের নিরাপত্তা ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় এই কার্ডধারীদের কার্যকলাপের ওপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
সুবিধা রক্ষায় কড়া পদক্ষেপ: সরকার চাইছে যেন ওসিআই কার্ডের মর্যাদা অক্ষুণ্ণ থাকে।
বৈশ্বিক প্রয়োগ: ভারত বা বিদেশ— উভয় ক্ষেত্রেই আইন প্রয়োগের সিদ্ধান্ত এই স্কিমের আন্তর্জাতিক গুরুত্ব বাড়ায়।
প্রতিরোধমূলক প্রভাব: সম্ভাব্য অপরাধীরা সতর্ক থাকবে, কারণ শুধু দোষী সাব্যস্ত হওয়া নয়, চার্জশিট দাখিল হলেও পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
নতুন এই বিজ্ঞপ্তি প্রমাণ করে যে ভারত সরকার ওসিআই কার্ডের অপব্যবহার বরদাস্ত করবে না। একদিকে যেমন বিদেশে থাকা ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের সাথে দেশের সম্পর্ক বজায় রাখতে এই স্কিম গুরুত্বপূর্ণ, তেমনই এর সততা বজায় রাখতেও সরকারের কড়া পদক্ষেপ প্রয়োজন। এবার থেকে ওসিআই কার্ডধারীদের আইন মেনে চলা এবং অপরাধ থেকে দূরে থাকার ক্ষেত্রে আরও বেশি সচেতন হতে হবে।