পাটনা: বিহার বিধানসভা নির্বাচনের চূড়ান্ত ফল বিশ্লেষণের পর একটি বিষয় স্পষ্ট, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের নেতৃত্বাধীন এনডিএ-র বিজয়রথ থামানোর ক্ষমতা মহাগঠবন্ধনের ছিল না। এই জয়ের নেপথ্যে যে স্লোগানটি সবচেয়ে বেশি কাজ করেছে, তা হলো, ‘দশ হাজারি চুনাব হ্যায়, দুসরি তরাফ কাট্টা সরকার হ্যায়’ (এটি ১০,০০০ টাকার নির্বাচন, অন্য দিকে রয়েছে আইনহীন সরকার)।
মহিলা ভোট: নীরব শক্তি, ১০,০০০ টাকা প্রকল্পের প্রভাব
নীতীশ কুমারের এই ₹১০,০০০ টাকার আর্থিক সহায়তা প্রকল্প রাজ্যের ১.৩ কোটি মহিলার জন্য গেমচেঞ্জার হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। এই প্রকল্পের ফলস্বরূপ মহিলা ভোটারদের অংশগ্রহণের হার রেকর্ড ৭১ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। মহিলাদের কাছে তেজস্বী যাদবের মাসিক ২,৫০০ টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতির চেয়ে, নীতীশ কুমারের হাতে পাওয়া ১০,০০০-টাকার নগদ সহায়তা অনেক বেশি বিশ্বাসযোগ্য হয়েছে।
অন্যদিকে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নির্বাচনী সমাবেশে দেওয়া ‘কাট্টা, দুনালি, রঙদারি’ (আগ্নেয়াস্ত্র ও তোলাবাজি) সংক্রান্ত কঠোর বার্তা ভোটারদের মনে আরজেডি-র ‘জঙ্গল রাজ’-এর দিনগুলো মনে করিয়ে দিয়েছে। মোদীর শক্তিশালী বার্তা নারী ভোটারদের নিরাপত্তা ও সুশাসনের প্রশ্নে এনডিএ-র ওপর আস্থা আরও মজবুত করতে সহায়ক হয়েছে।
বৃদ্ধদের উপহার, বিদ্যুৎ বিলের স্বস্তি NDA Victory Factors Bihar Election
এই বিজয়ের অন্যতম অতিরিক্ত সুবিধাগুলি ছিল:
বিনামূল্যে বিদ্যুৎ: ১২৫ ইউনিট পর্যন্ত গার্হস্থ্য বিদ্যুতে ছাড়—বিশেষত গ্রামীণ এলাকায়, যেখানে অধিকাংশ পরিবারকে আর বিল দিতে হয়নি। “আমাদের গাঁয়ে তো মহিষও ফ্যানের নিচে ঘুমোয়,” এই সাধারণ উক্তিই প্রকল্পের সাফল্য বোঝায়।
বর্ধিত পেনশন: ১.২ কোটি প্রবীণ নাগরিকের জন্য বয়স্ক পেনশন ₹৪০০ থেকে বাড়িয়ে ₹১,১০০ করা হয়েছে। নীতীশ কুমারের প্রতি প্রবীণদের এই ‘বড় উপহার’ হিসেবেই দেখা হয়েছে, যা তাঁর অসুস্থতা বা মানসিক ক্ষমতা নিয়ে ওঠা সব জল্পনাকে উড়িয়ে দিয়েছে।
গ্রামের মানুষ তাই বলেছেন, “আমরা নীতীশ কুমারকে হার দিয়ে অবসর দিতে চাই না। আমরা তাঁকে জিতিয়ে দেব, যাতে তিনি তাঁর নিজের সময়মতো অবসরের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।”
বেকারত্বের মোকাবিলা: মহাজোটের ভুল কৌশল
যদিও রাজ্যে দুই দশক ধরে বেকারত্ব একটি বড় সমস্যা ছিল, যার ফলে এনডিএ-র প্রতি কিছু অসন্তোষ ছিল। তবে, নীতীশের ১০,০০০ টাকা, বিনামূল্যে বিদ্যুৎ এবং পেনশন বৃদ্ধির মতো পদক্ষেপগুলিকেই এই বেকারত্বের বিরুদ্ধে ‘কাউন্টার’ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।
বিরোধীদের জন্য সবচেয়ে বড় কৌশলগত ভুল ছিল – শিল্পপতি গোপাল খেমকার হত্যাকাণ্ডের পর আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মূল ইস্যু থেকে নজর সরিয়ে ‘এসআইআর’ (SIR) ইস্যুর উপর ফোকাস করা। যখন ইভিএম-এ বোতাম টেপার সময় এলো, তখন এই ‘ভোট চুরি’-র প্রসঙ্গ সাধারণ ভোটারদের আলোচনার বাইরে চলে যায়।
‘বিহারের বাদশাহ’-র প্রত্যাবর্তন
২০২০ সালের নির্বাচনে সবচেয়ে খারাপ ফল করা জেডিইউ (১১৫টির মধ্যে ৪৩টি জয়) এইবার ১০১টি আসনের মধ্যে অর্ধেকের বেশি জিতে তাদের স্ট্রাইক রেট উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে তুলেছে। এই ফল নীতীশ কুমারকে পুনরায় মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে এবং তাঁর দলীয় স্লোগান ‘২৫ সে ৩০, ফির নীতীশ’ (২০২৫ থেকে ২০৩০, আবার নীতীশ কুমার) সঠিক প্রমাণিত হয়েছে। নীতীশ কুমার নিশ্চিতভাবেই ফের একবার ‘বিহারের বাদশাহ’ হিসেবে নিজের অবস্থান সুদৃঢ় করলেন।


