পুরনোদের ওপর ভর করে আসন্ন লোকসভা ভোট জিততে চাইছে বিজেপি (BJP)? এখন এমনই প্রশ্ন জোড়ালোভাবে উঠতে শুরু করেছে/ লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির ৩৭০ আসনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ এবং কংগ্রেসের বিশ্বাসযোগ্যতা বাঁচানোর দায়িত্ব ‘দক্ষিণ ভারতের’ রাজ্যগুলির উপর। রাহুল গান্ধী কেরালাকে তার রাজনৈতিক ভিত্তি বানিয়েছেন, অন্যদিকে কর্ণাটক ও তেলেঙ্গানায় কংগ্রেস সরকার রয়েছে এবং তামিলনাড়ুতে একটি অংশীদার রয়েছে। উত্তর ভারতে মোদীর জাদু থাকলেও, কিন্তু দক্ষিণে তা এখনও ম্লান। এই অবস্থায় বিজেপির ৩৭০ ও এনডিএ-র ৪০০ আসনের লক্ষ্যমাত্রা দক্ষিণকে জয় করা ছাড়া সম্ভব নয়।
প্রধানমন্ত্রী মোদীর নেতৃত্বে দক্ষিণে পদ্মফুল ফোটানোর ইচ্ছা কমেনি। লোকসভা ভোটের রাজনৈতিক উত্তাপের মধ্যেই গত দু’মাসে দক্ষিণের ৬টি রাজ্য সফর করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এই সময়ে উন্নয়নের উপহার দিয়ে তারা দক্ষিণে বিজেপির জন্য রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরিতে ব্যস্ত, কিন্তু মিশন-দক্ষিণের স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে না। এই কারণেই বিজেপি দক্ষিণে তার এনডিএ জোটের গোষ্ঠী সম্প্রসারণের প্রচারের অংশ হিসাবে এখন জেডিএসের পরে টিডিপি এবং জন সেনা পার্টির সাথে বন্ধুত্বে সিলমোহর দিতে চলেছে বলে মনে হচ্ছে।
টিডিপি প্রধান চন্দ্রবাবু নাইডু বৃহস্পতিবার গভীর রাতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডার সাথে টিডিপি এবং বিজেপির সাথে জোটের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছেন। অমিত শাহ-নাইডুর সঙ্গে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন অভিনেতা তথা রাজনীতিবিদ জন সেনা পার্টির প্রধান পবন কল্যাণও। অন্ধ্রপ্রদেশে লোকসভার সঙ্গেই বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। পবন কল্যাণ এবং চন্দ্রবাবু নাইডু একসাথে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন এবং এখন বিজেপির সাথেও হাত মেলানোর জন্য তৈরি হচ্ছে বলে খবর।
মনে করা হচ্ছে, দু-একদিনের মধ্যেই জোটের ঘোষণা হয়ে যেতে পারে। দু’মাসের মধ্যে বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে চন্দ্রবাবু নাইডুর এটি দ্বিতীয় বৈঠক। ফেব্রুয়ারিতে দিল্লিতে এসে অমিত শাহ ও জেপি নাড্ডার সঙ্গে দেখা করেন চন্দ্রবাবু নাইডু। এছাড়াও নাইডু এবং পবন কল্যাণ রাম মন্দিরের প্রাণ প্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠানেও অংশ নিয়েছিলেন। অন্ধ্রপ্রদেশের বিজেপি সভাপতি ডি পূর্ণদেশ্বরী ইতিমধ্যেই রাজধানী দিল্লিতে শিবির করেছেন। বৃহস্পতিবার অমিত শাহ এবং জেপি নাড্ডার সাথে পবন কল্যাণ এবং নাইডুর বৈঠককে জোটের চূড়ান্ত ধাপ হিসাবে দেখা হচ্ছে কারণ নির্বাচনের বিজ্ঞপ্তি জারি হওয়ার আর মাত্র কয়েক দিন বাকি রয়েছে।
টিডিপি ইতিমধ্যেই এনডিএ জোটের সঙ্গে ছিল। চন্দ্রবাবু নাইডু এনডিএ-র আহ্বায়কও ছিলেন এবং ২০১৪ সালে একসাথে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। অন্ধ্রপ্রদেশকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়ার দাবিতে ২০১৮ সালে বিজেপির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে টিডিপি। ২০২৪ সালের নির্বাচনে তারা আবার একত্রিত হচ্ছেন, যার জন্য একটি ফর্মুলা তৈরি করা হচ্ছে। অন্ধ্রপ্রদেশে টিডিপি ও ওয়াইএসআর কংগ্রেসের মধ্যে যেভাবে সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলছে, তাতে বিজেপি একা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে খুব বেশি লাভবান হবে বলে মনে হয় না। নাইডু ক্ষমতায় ফেরার জন্য কোনও প্রয়াস ছাড়তে চান না, যার জন্য প্রথমে পবন কল্যাণ যোগ দিয়েছিলেন এবং এখন বিজেপির সাথে জোট বাঁধার প্রক্রিয়ায় রয়েছেন।
অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যে ২৫টি লোকসভা ও ১৭৫টি বিধানসভা আসন রয়েছে। আট থেকে দশটি লোকসভা আসনে লড়তে আগ্রহী বিজেপি। তবে টিডিপি সূত্রে খবর, জোট হলে পাঁচ থেকে ছ’টি লোকসভা আসনে লড়তে পারে বিজেপি। জন সেনা তিনটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে এবং তাঁর দল বাকি আসনগুলিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে।