জ্যোতি বসুর ‘ঐতিহাসিক ভুল’ নিয়ে বিস্ফোরক ফারুক আবদল্লাহ

প্রয়াত বাম নেতা সীতারাম ইয়েচুরির স্মরণসভায় এসে জ্যোতি বসুর ‘ঐতিহাসিক ভুল’ নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ফারুক আবদুল্লাহ। শনিবার দিল্লির তালকোটরা…

NC leader Farooq Abdullah slams CPIM for not allowing Jyoti Basu to be Prime minister of india

প্রয়াত বাম নেতা সীতারাম ইয়েচুরির স্মরণসভায় এসে জ্যোতি বসুর ‘ঐতিহাসিক ভুল’ নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ফারুক আবদুল্লাহ। শনিবার দিল্লির তালকোটরা স্টেডিয়ামে আয়োজিত হয় সিপিএমের এই প্রয়াত নেতার স্মরণসভা। সেখানে সীতারামের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বাংলার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর প্রসঙ্গ টেনে আনেন ন্যাশনাল কনফারেন্সের এই নেতা। ভরা মঞ্চে কার্যত সিপিএমকে (CPIM) কটাক্ষ করেই উপত্যকার এই জননেতা বলেন, “একসময় বাংলার মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুকে আমরা প্রধানমন্ত্রী করতে চেয়েছিলাম। উনি (সীতারাম) এবং আপনাদের পার্টি তা হতে দেননি। সেদিন যদি বাংলার মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু প্রধানমন্ত্রী হতেন, তাহলে এই দেশ অন্যরকম হত।” 

মহারাষ্ট্রে বিধানসভা ভোট কবে? বৈঠক শেষে জানাল কমিশন

   

ফারুক আবদুল্লাহের এই মন্তব্যের জেরে বামেদের কেন্দ্রীয় নের্তৃত্বকে একরকম কটাক্ষ করেছেন বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। কিন্তু আবদুল্লাহের এই মন্তব্যের পেছনে একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট রয়েছে। কারণ ৯০-এর দশকের মাঝামাঝি নরসিমা রাওয়ের পতনের পর দেশের জাতীয় রাজনীতিতে অস্থিরতা তৈরি হয়। কারণ সেই সময় নির্বাচন হলেও কেন্দ্রে সরকার গড়ার ক্ষেত্রে কোনও দলই সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারেনি। অন্যদিকে, বিজেপি দেশের অন্যতম বিরোধী দল হলেও অটলবিহারী বাজপেয়ী কিংবা লালকৃষ্ণ আডবানিদের পক্ষে ক্ষমতায় এসে মাত্র ১৩ দিনের বেশি সরকার টেকানো সম্ভব হয়নি। কারণ ৫৪৩ টি আসনের মাত্র ১৬১ টি আসন পেয়েছিল বিজেপি।

অভিষেকের নামে তোলবাজি, মেয়রের ওএসডির কাণ্ডে সরব জহর

অন্যদিকে কংগ্রেস পেয়েছিল মাত্র ১৩৬ টি আসন। এমন অবস্থায় বিজেপিকে রুখতে বাইরে থেকে যেকোনও ধর্মনিরপেক্ষ দলকে সমর্থনের আশ্বাস দিয়েছিল কংগ্রেস। সেই মতো জাতীয় রাজনীতিতে অচলাবস্থা কাটাতে ফারুক আবদুল্লাহের এনসি, সমাজবাদী পার্টি, বসপা, ডিএমকে, আরজেডি, জেডিইউএর সমর্থনে সরকার গড়তে উদ্যেগী হয়ে যুক্তফ্রন্ট। অন্যদিকে সমকালীন রাজনীতিতে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দুই দশক কাটিয়ে ফেলেছিলেন জ্যোতি বসু। তাই সবচেয়ে অভিজ্ঞ ও প্রবীন নেতা হিসেবে তাঁকেই বেছে নিয়েছিল যুক্তফ্রন্ট। সমর্থন জানিয়েছিল সিপিআই সহ অন্যান্য বামপন্থী দলগুলিও। তবে জ্যোতি বসুকে প্রধানমন্ত্রী করার বিষয়টি সিপিএম পলিটব্যুরোতে উঠলে শেষপর্যন্ত তা নাকচ করেন তৎকালীন পলিটব্যুরো সদস্য সীতারাম ইয়েচুরি-প্রকাশ কারাতরা।

তবে দলের সাধারন সম্পাদক তথা বিশিষ্ট বাম নেতা হরকিষেন সিং সুরজিত সমর্থন জানালেও সীতারাম ইয়েচুরি ও ভিএস অচ্যুতানন্দদের আপত্তিতে সেই প্রস্তাব পাশ হয়নি। সিপিএমের যুক্তি ছিল বামেদের মোট আসন সংখ্য ৩২। সুতরাং এই স্বল্প সংখ্যক আসন নিয়ে সরকার বেশিদিন টেকানো সম্ভব নয়। দ্বিতীয়ত অনেক নীতি মানতে বাধ্য হতে হবে দলকে ফলে দলের প্রতি মানুষের আস্থাভঙ্গ হতে পারে।

নির্বাচনী বন্ড দুর্নীতিতে নির্মলার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের

আর এই ঘটনাকেই পরবর্তীতে ‘ঐতিহাসিক ভুল’ বলে আখ্যায়িত করেছিলেন জ্যোতি বসু। তবে জ্যোতি বসু প্রধানমন্ত্রী হলে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি এমন হত না। এই কথাতে যদিও গত দু-দশকের মোদী সরকারের হিন্দুত্ববাদী রাজনীতিকে কটাক্ষ করেছেন ফারুক। কারণ সেই সময় যদি জ্যোতি বসু প্রধানমন্ত্রী হতেন তা হলে হয়তো অস্থিরতার সুযোগে বিজেপির উত্থান কিছুটা হলেও প্রতিহত হত। তার কারণ জ্যোতি বসু প্রধানমন্ত্রী না হওয়ায়ে সেই জায়গা নেন বিশ্বনাথ প্রতাপ সিং বা ভিপি সিং। কিন্তু সেই সরকার বেশিদিন না টেকায় ১৯৯৯ সালে ক্ষমতায় চলে আসে এনডিএ সরকার। যার প্রধানমন্ত্রী পুননির্বাচিত হন অটলবিহারী বাজপেয়ী।

একই বাড়িতে থাকেন, মায়ানমারে খেয়ে ভারতে ঘুমোতে যান তাঁরা! জানেন কোথায় এই অদ্ভুত গ্রাম?

এদিন ফারুক আবদুল্লাহ ছাড়াও সীতারামের স্মরণ সভায় হাজির ছিলেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে, বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী ও কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন ও ডিএমকে নেত্রী কানিমোঝি। সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি আচমকা অসুস্থ হয়ে দিল্লির একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন সিপিএমের এই প্রবীন নেতা।