উদ্বোধন হল নবি মুম্বাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, বাড়বে বাণিজ্য সংযোগ

মুম্বাই: দেশের বিমান চলাচলের ইতিহাসে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হল বুধবার। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করলেন বহু প্রতীক্ষিত নবি মুম্বাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের (Navi Mumbai International…

মুম্বাই: দেশের বিমান চলাচলের ইতিহাসে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হল বুধবার। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করলেন বহু প্রতীক্ষিত নবি মুম্বাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের (Navi Mumbai International Airport – NMIA) প্রথম পর্যায়। এর ফলে চত্রপতি শিবাজি মহারাজ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের (CSMIA) পরে মুম্বাই পেতে চলেছে তার দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, যা দেশের বাণিজ্য, সংযোগ এবং যাত্রীসেবায় এক নতুন মাত্রা যোগ করবে।

Advertisements

প্রধানমন্ত্রী মোদী উদ্বোধনের আগে এক্স (X)-এ লেখেন, “নবি মুম্বাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে রওনা হচ্ছি। এর মাধ্যমে মুম্বাই মহানগর অঞ্চল পাবে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, যা বাণিজ্য ও সংযোগ বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। একই সঙ্গে উদ্বোধন হবে মুম্বাই মেট্রো লাইন-৩-এর চূড়ান্ত পর্যায়ও।”

বিজ্ঞাপন

উলওয়ে, নবি মুম্বাইয়ে অবস্থিত এই বিমানবন্দরটি দক্ষিণ মুম্বাই থেকে প্রায় ৩৭ কিমি দূরে। প্রথম পর্যায়ে যাত্রীরা ব্যবহার করতে পারবেন একটি আধুনিক ইন্টিগ্রেটেড টার্মিনাল, যেখানে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক উড়ান পরিষেবা একসাথে থাকবে। পরবর্তী পর্যায়ে মোট চারটি টার্মিনাল চালু হবে।

বিমানবন্দরটির অন্যতম বৈশিষ্ট্য এর পদ্ম আকৃতির নকশা, যা ভারতের জাতীয় ফুলের প্রতি শ্রদ্ধা জানায়। এটি ডিজাইন করেছে খ্যাতনামা ব্রিটিশ আর্কিটেকচারাল ফার্ম Zaha Hadid Architects, যারা বেইজিং দাক্সিং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরও নির্মাণ করেছে। বিমানবন্দরে দুটি ‘কোড F’ মানসম্পন্ন রানওয়ে এবং উন্নত ব্যাগেজ হ্যান্ডলিং সিস্টেম রয়েছে।

NMIA সম্পূর্ণভাবে প্রযুক্তিনির্ভর এবং যাত্রীবান্ধব। ৫জি সংযোগ, ডিজি যাত্রা প্রযুক্তির মাধ্যমে কন্ট্যাক্ট-ফ্রি বোর্ডিং, স্মার্ট ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট এবং স্বয়ংক্রিয় ব্যাগেজ সিস্টেম যাত্রাকে করবে আরও সহজ। CIP লাউঞ্জে প্রায় ৫০০ যাত্রীর বসার ব্যবস্থা থাকবে, শিশুদের জন্য থাকবে বিশেষ খেলার জোন এবং ৮০ ঘরের ডে হোটেল।

এছাড়াও বিমানবন্দরে থাকবে ইন্টার‌্যাক্টিভ ডিজিটাল টানেল, যা মহারাষ্ট্র ও ভারতের ঐতিহ্যের গল্প তুলে ধরবে। লাগেজ ডেলিভারি, রিপেয়ার, র‌্যাপিং এবং ‘প্রণাম’ মিট-অ্যান্ড-গ্রীট পরিষেবা যাত্রীদের অভিজ্ঞতাকে করবে আরও উন্নত।

বিমানবন্দরের টিকিট বিক্রি শুরু হতে পারে অক্টোবরের শেষের দিকে। প্রথম দিকে প্রতিদিন সকালবেলা ৮-১০টি ফ্লাইট চালু হবে, যা যাত্রী চাহিদা বাড়লে প্রতি ঘণ্টায় ২০-৩০টিতে পৌঁছাতে পারে। ইন্ডিগো, আকাসা এয়ার এবং এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস ইতিমধ্যেই প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। ডিসেম্বর ২০২৫ থেকে শুরু হবে বাণিজ্যিক উড়ান।

বিমানবন্দরে পৌঁছানোর জন্য সিয়ন-পানভেল হাইওয়ে, ইস্টার্ন ফ্রিওয়ে এবং মুম্বাই ট্রান্স হারবার লিংক (MTHL) ব্যবহার করা যাবে। এমটিএইচএল ব্যবহার করলে যাত্রার সময় প্রায় ২০ মিনিট কমে যাবে। এছাড়াও রেলপথে প্যানভেল স্টেশন পর্যন্ত যাত্রা করে স্থানীয় পরিবহন ব্যবহারের সুযোগ থাকবে।

প্রধানমন্ত্রী মোদী উদ্বোধনী ভাষণে বলেন, “নবি মুম্বাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর শুধু অবকাঠামোগত উন্নয়ন নয়, এটি ভারতের বিশ্বব্যাপী সংযোগ ব্যবস্থাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে। এটি নাগরিকদের জীবনের মান উন্নত করবে এবং বাণিজ্যকে আরও গতিশীল করে তুলবে।”

এই প্রকল্প কেবল একটি বিমানবন্দর নয়, বরং আগামী দশকে ভারতের অর্থনীতি, পর্যটন এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার চালিকাশক্তি হয়ে উঠবে।