উত্তর প্রদেশের বারাণসীতে (Varanasi) শনিবার এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi) ঘোষণা করেছেন, “অপারেশন সিন্দুরের সাফল্য ভগবান মহাদেবের আশীর্বাদে সম্ভব হয়েছে।” তিনি বলেন, এই অভিযান কাশ্মীরের পহেলগামে ২২ এপ্রিলের সন্ত্রাসী হামলায় নিহত ২৬ জন নিরীহ নাগরিকের প্রতিশোধ নিয়েছে।
লোকসভা কেন্দ্র বারাণসীতে তাঁর ৫১তম সফরে এসে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “অপারেশন সিন্দুরের পর এই প্রথম আমি কাশীতে এসেছি। পহেলগামে সন্ত্রাসীরা ২৬ জন নিরীহ বেসামরিক নাগরিককে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল… আমার হৃদয় দুঃখে ভরে গিয়েছিল। আমি আমার মেয়েদের সিন্দুরের প্রতিশোধ নেওয়ার প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, এবং মহাদেবের আশীর্বাদে আমি তা পূরণ করেছি। আমি মহাদেবের চরণে অপারেশন সিন্দুরের সাফল্য উৎসর্গ করছি।”
প্রধানমন্ত্রী চলমান কাঁওয়ার যাত্রারও প্রশংসা করেছেন, কাশীতে শিবভক্তদের গঙ্গাজল বহনের দৃশ্যকে “ঐশ্বরিক” বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, “বিশেষ করে, যখন আমাদের যাদব ভাইয়েরা গৌরী-কেদারেশ্বর থেকে গঙ্গাজল বহন করেন, তখন এটি একটি অসাধারণ দৃশ্য।” তিনি আরোও বলেন, “আমার খুব ইচ্ছে ছিল পবিত্র শ্রাবণ মাসে বাবা বিশ্বনাথের কাছে প্রার্থনা করতে পারব। কিন্তু যদি আমি সেখানে যাই, তাহলে অন্যান্য ভক্তরা অসুবিধার সম্মুখীন হবেন এবং প্রার্থনা করতে পারবেন না, তাই আমি এখান থেকে ভোলেনাথ এবং মা গঙ্গার সামনে প্রণাম করছি।”
এই সফরের সময়, প্রধানমন্ত্রী মোদী প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মান নিধির ২০তম কিস্তি প্রকাশ করেন, যার মাধ্যমে ৯.৭ কোটি কৃষকের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ২০,৫০০ কোটি টাকারও বেশি স্থানান্তর করা হয়। তিনি বারাণসীতে প্রায় ২,২০০ কোটি টাকার একাধিক উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
প্রধান অবকাঠামো প্রকল্পগুলির মধ্যে, মোদী বারাণসী-ভাদোহি সড়ক এবং ছিতাউনি-শূল টঙ্কেশ্বর সড়ক চওড়া এবং মজবুত করা। পাশাপাশি মোহন সরাই-আদলপুরা সড়কে যানবাহন চলাচল সহজ করার জন্য হরদত্তপুরে একটি রেলওয়ে ওভারব্রিজের উদ্বোধন করেন। তিনি ডালমান্ডি, লাহারতারা-কোটোয়া, গঙ্গাপুর এবং বাবতপুর সহ নগর ও গ্রামীণ করিডোর জুড়ে বিস্তৃত রাস্তা চওড়া ও মজবুত সহ লেভেল ক্রসিং ২২সি এবং খালিসপুর ইয়ার্ডে নতুন রেলওয়ে ওভারব্রিজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
বারাণসীর বিদ্যুৎ পরিকাঠামো শক্তিশালী করার জন্য, প্রধানমন্ত্রী স্মার্ট ডিস্ট্রিবিউশন প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ৮৮০ কোটি টাকারও বেশি মূল্যের বৈদ্যুতিক ব্যবস্থার ভূগর্ভস্থকরণ করেন।
পর্যটন বৃদ্ধির লক্ষ্যে, মোদী আটটি নদীর তীরবর্তী কুচ্চা ঘাটের পুনর্নির্মাণ, কালিকা ধামে উন্নয়নমূলক কাজ এবং শিবপুরে রঙ্গিলদাস কুটিয়ার পুকুর ও ঘাটের সৌন্দর্যায়নের উদ্বোধন করেন। দুর্গাকুণ্ড এবং কর্দমেশ্বর মহাদেব মন্দিরের সংস্কার ও জল পরিশোধন কাজেরও উদ্বোধন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বেশ কয়েকজন স্বাধীনতা সংগ্রামীর জন্মস্থান কারখিয়াওয়ে উন্নয়নের জন্য এবং সারনাথ, ঋষি মান্ডভির পাশাপাশি রামনগর জোনে নগর সুবিধা কেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। লামাহিতে মুন্সি প্রেমচাঁদের পৈতৃক বাড়ির পুনর্নির্মাণ এবং সংশ্লিষ্ট জাদুঘরের উন্নয়নেরও ঘোষণা করা হয়।
মোদী কাঞ্চনপুরে একটি নগর মিয়াওয়াকি বন, শহীদ উদ্যানের পুনর্নির্মাণ ও সৌন্দর্যায়ন এবং আরও ২১টি পার্কের পরিকল্পনা উন্মোচন করেন।
উল্লেখ্য, রামকুণ্ড, মন্দাকিনী এবং শঙ্খুলধারা সহ বেশ কয়েকটি সাংস্কৃতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ জলাশয় শুদ্ধিকরণ এবং রক্ষণাবেক্ষণের আওতায় আসবে। পাশাপাশি চারটি ভাসমান পূজা মঞ্চ স্থাপন করা হবে।
নিরাপদ পানীয় জলের পরিষেবা নিশ্চিত করতে, প্রধানমন্ত্রী জল জীবন মিশনের অধীনে ৪৭টি গ্রামীণ পানীয় জল প্রকল্পের উদ্বোধন করেন।
শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য তার দৃষ্টিভঙ্গিকে আরও জোরদার করে, মোদী পুরসভা অঞ্চলের সীমানার মধ্যে ৫৩টি স্কুল ভবনের উন্নয়নের উদ্বোধন করেন। পাশাপাশি, নতুন শিক্ষামূলক প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ক্ষেত্রে তিনি মহামান পণ্ডিত মদন মোহন মালব্য ক্যান্সার সেন্টার এবং হোমি ভাবা ক্যান্সার হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসা সুবিধার উদ্বোধন করেন।
একটি নতুন হোমিওপ্যাথিক কলেজ ও হাসপাতাল, একটি পশু জন্ম নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র এবং একটি সংশ্লিষ্ট কুকুর পরিচর্যা কেন্দ্রও উন্মোচন করা হয়েছে।