হিন্দু উৎসবে মুলসিম লেখিকা! মুখ খুললেন মুখ্যমন্ত্রী

মৈসুরু, ২২ সেপ্টেম্বর: কর্ণাটকের (Karnataka Politics) ঐতিহ্যবাহী মৈসুরু দশেরা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক বুকার পুরস্কার বিজয়ী মুসলিম লেখিকা বানু মুস্তাককে আমন্ত্রণ জানানো নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।…

Karnataka Politics

মৈসুরু, ২২ সেপ্টেম্বর: কর্ণাটকের (Karnataka Politics) ঐতিহ্যবাহী মৈসুরু দশেরা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক বুকার পুরস্কার বিজয়ী মুসলিম লেখিকা বানু মুস্তাককে আমন্ত্রণ জানানো নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া স্পষ্ট সুরে তাঁর অবস্থান জানিয়েছেন। চামুণ্ডেশ্বরী দেবীর মূর্তির সামনে ফুল ছড়িয়ে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে তিনি বলেন, “(লেখিকা) বানু মুস্তাক হলেন মুসলিম হতে পারেন, কিন্তু তার চেয়েও বেশি তিনি একজন মানুষ।

আমরা সকলে একই মানবতার অংশ। যদি তুমি একে অপরকে ভালোবাসতে না পারো, তাহলে তা মানবতা নয়।” এই বক্তব্যে তিনি ধর্মীয় সংকীর্ণতার বিরুদ্ধে স্পষ্ট সতর্কবাণী জারি করেছেন, যা রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। মৈসুরু দশেরা, যা ‘নাড়া হব্বা’ নামে পরিচিত এবং রাজ্যের রাজকীয় ঐতিহ্যের প্রতীক, গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে।

   

এই ১১ দিনের উৎসবে চামুণ্ডি পর্বতের চূড়ায় চামুণ্ডেশ্বরী মন্দিরে আগ্র পূজা এবং রাজপ্রাসাদে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কর্ণাটকের সমৃদ্ধ সংস্কৃতি তুলে ধরা হয়। কিন্তু এবারের উদ্বোধনে বানু মুস্তাকের নামটি বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। আন্তর্জাতিক বুকার পুরস্কার জিতেছেন তাঁর ‘হার্ট ল্যাম্প’ গ্রন্থের অনুবাদের জন্য, যা কন্নড় ভাষায় লেখা ছোটগল্প সংকলন।

কিন্তু তাঁর মুসলিম পরিচয় এবং অতীতে দেবী ভুবনেশ্বরীকে সম্পর্কে কিছু বক্তব্যের ভাইরাল ভিডিও নিয়ে বিজেপি এবং কিছু হিন্দু সংগঠন প্রতিবাদ করেছে। বিজেপি নেতা বি.ওয়াই. বিজয়েন্দ্র বলেছেন, “দশেরা হিন্দু ঐতিহ্যের অংশ, এটাকে ধর্মনিরপেক্ষ করে তোলা হিন্দু বিশ্বাসের অপমান।” মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া তাঁর বক্তব্যে ঐতিহাসিক তথ্য তুলে ধরে বলেন, “যারা এই আমন্ত্রণের বিরোধিতা করছেন, তারা ইতিহাস জানেন না।

২০১৭ সালে মুসলিম কবি কে.এস. নিসার আহমেদ চামুণ্ডেশ্বরীর মূর্তিতে ফুল ছড়িয়ে উদ্বোধন করেছিলেন। হায়দার আলী এবং টিপু সুলতানের আমলে দশেরা উদযাপিত হয়েছে, এবং মির্জা ইসমাইলের মতো মুসলিম দেওয়ান এটাকে বর্ণাঢ্য করে তুলেছিলেন। দশেরা কোনো ধর্মের নয়, এটি সকলের উৎসব—হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান, জৈন সকলের।” তিনি যোগ করেন, “শুধু ধর্মান্ধরাই এমন বিরোধিতা করে। বানু মুস্তাক কন্নড় ভাষা ও সাহিত্যের প্রতি গভীর শ্রদ্ধাশীল, কৃষক আন্দোলন এবং কন্নড় আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত। উচ্চকমিটি তাঁকে বেছে নিয়েছে, এবং এটি রাজনৈতিক বা সাম্প্রদায়িক নয়।”

Advertisements

কর্ণাটক হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্ট এই আমন্ত্রণকে সমর্থন করে আদেশ দিয়েছে, যা মুখ্যমন্ত্রীকে আরও শক্তি দিয়েছে। তিনি বলেন, “দশেরা ধর্মীয় কাঠামোর মধ্যে আটকে থাকতে পারে না। এটি রাজ্যের উন্নয়ন এবং সাংস্কৃতিক ঐক্যের প্রতীক।” এই ঘটনা রাজ্যের রাজনীতিতে ধর্মনিরপেক্ষতার প্রশ্ন তুলেছে। কংগ্রেসের মতে, এটি সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াই, যখন বিজেপি এটাকে হিন্দু ঐতিহ্যের আঘাত বলে দাবি করছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই বিতর্ক আসন্ন স্থানীয় নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারে।

এই বিতর্কের মধ্য দিয়ে উদ্বোধন অনুষ্ঠান সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া, বানু মুস্তাক এবং অন্যান্য মন্ত্রীগণ চামুণ্ডেশ্বরী মন্দিরে প্রার্থনা করে রাজপ্রাসাদের সামনে রুপোর রথে ফুল অর্পণ করেছেন। বানু মুস্তাক বলেন, “আমার পুরনো বক্তব্যকে বিকৃত করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ানো হয়েছে।

পরকীয়া সন্দেহে স্ত্রীকে খুনের অভিযোগে গ্রেফতার স্বামী, পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তি

আমি কন্নড় ভাষাকে ভালোবাসি, এবং এই আমন্ত্রণ গ্রহণ করে আমি কর্ণাটকের ঐক্যের বার্তা দিতে চাই।” কিন্তু বিজেপি এবং মৈসুরু রাজপরিবারের কিছু সদস্য এখনও অসন্তুষ্ট। রাজপরিবারের সদস্য যাদুবীর ওড়িয়ার বলেছেন, “চামুণ্ডি পাহাড় শুধু হিন্দুদের নয়, কিন্তু ঐতিহ্যকে সম্মান করতে হবে।”

আমাদের Google News এ ফলো করুন

২৪ ঘণ্টার বাংলা নিউজ, ব্রেকিং আপডেট আর এক্সক্লুসিভ স্টোরি সবার আগে পেতে ফলো করুন।

Google News Follow on Google News