কেরলের ত্রিশূর জেলার একটি স্কুলে ওনাম উৎসব নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করার জন্য একজন শিক্ষিকার বিরুদ্ধে পুলিশ মামলা দায়ের করেছে (Muslim Students)। কাদাভাল্লুরের সিরাজুল উলুম ইংলিশ হাই স্কুলের শিক্ষিকা খাদিজা নামে অভিযুক্ত এই শিক্ষিকা অভিভাবকদের কাছে একটি অডিও বার্তা পাঠিয়েছিলেন, যাতে তিনি মুসলিম ছাত্রদের ওনাম উৎসবে অংশ না নিতে উৎসাহিত করেন।
তিনি ওনামকে “বহুদেবতাবাদী” উৎসব হিসেবে অভিহিত করে বলেন, এতে অংশগ্রহণ করা ইসলামের শিক্ষার বিরুদ্ধে এবং এটি ‘শিরক’ (বহুদেবতাবাদ) হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। এই ঘটনার পর স্কুল কর্তৃপক্ষ দুজন শিক্ষিকাকে সাসপেন্ড করেছে এবং পুলিশ ভারতীয় ন্যায় সংহিতার (বিএনএস) ১৯২ ধারায় মামলা দায়ের করেছে, যা দাঙ্গা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে উস্কানিমূলক মন্তব্যের অভিযোগের সঙ্গে সম্পর্কিত। এই ঘটনা কেরলের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পরিবেশে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে।
ঘটনাটি ঘটেছে ত্রিশূরের কাদাভাল্লুরে অবস্থিত সিরাজুল উলুম ইংলিশ হাই স্কুলে। শিক্ষিকা খাদিজা অভিভাবকদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে একটি অডিও বার্তা পাঠান, যাতে তিনি বলেন, “আমাদের মুসলিম হিসেবে ইসলামের নিয়ম মেনে চলা উচিত। ওনাম একটি বহুদেবতাবাদী উৎসব, এটিকে উৎসাহিত করা উচিত নয়।
আমরা বা আমাদের সন্তানরা কোনোভাবেই ওনাম উৎসবে অংশ নেবে না। অন্য ধর্মের রীতিনীতিতে অংশ নেওয়া শিরক হতে পারে।” তিনি আরও বলেন, মুসলিম শিশুদের ইসলামিক সংস্কৃতিতে বড় করা উচিত এবং অন্য ধর্মের আচার-অনুষ্ঠান থেকে তাদের দূরে রাখা প্রয়োজন। এই বার্তা সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে।
ডেমোক্রেটিক ইয়ুথ ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়া (ডিওয়াইএফআই), সিপিআই(এম)-এর যুব সংগঠন, এই ঘটনার বিরুদ্ধে কুন্নমকুলম পুলিশ স্টেশনে অভিযোগ দায়ের করে। অভিযোগে বলা হয়, শিক্ষিকার মন্তব্য সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে। পুলিশ এই অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা দায়ের করেছে এবং তদন্ত শুরু করেছে।
স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই মন্তব্য শিক্ষিকার ব্যক্তিগত মতামত এবং স্কুলের অবস্থানের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। তারা নিশ্চিত করেছে, প্রতি বছরের মতো এবারও ২৮ আগস্ট ওনাম উৎসব জাঁকজমকপূর্ণভাবে পালন করা হবে, যার মধ্যে ওনাসদ্যা (প্রথাগত ভোজ) এবং অন্যান্য অনুষ্ঠান অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
বিতর্কের জেরে সিরাজুল উলুম ইংলিশ হাই স্কুলের ব্যবস্থাপনা কমিটি দুজন শিক্ষিকাকে সাসপেন্ড করেছে, যারা পৃথকভাবে এই ধরনের অডিও বার্তা পাঠিয়েছিলেন। স্কুল কর্তৃপক্ষ একটি বিবৃতিতে বলেছে, “আমরা প্রতি বছরের মতো এবারও ওনাম উৎসব বড় আকারে পালন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
এই শিক্ষিকাদের মন্তব্য তাদের ব্যক্তিগত মতামত, এবং স্কুলের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। তদন্তের জন্য আমরা দুজন শিক্ষিকাকে সাসপেন্ড করেছি।” এই ঘটনার বিরুদ্ধে স্থানীয় ডিওয়াইএফআই এবং সিপিআই(এম) স্কুলের সামনে বিক্ষোভের ঘোষণা করেছে।
ওনাম কেরলের প্রধান রাজ্য উৎসব, যা সকল ধর্মের মানুষ একসঙ্গে পালন করে। এই উৎসব মহাবলি রাজার স্মৃতিতে পালিত হয়, যিনি হিন্দু পুরাণে বিষ্ণুর ভক্ত এবং সমতার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হন। ওনামে পুক্কলম (ফুলের রাংগোলি), তিরুভাথিরা নৃত্য, ওনাসদ্যা এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কেরলের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য প্রকাশ পায়। এই উৎসব কেরলের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়, যেখানে হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান এবং অন্যান্য সম্প্রদায়ের মানুষ একত্রে অংশ নেয়।
অতীতে, ২০২২ সালে কাসারগোডের একটি স্কুলে মুসলিম ছাত্রীদের ওনাম উৎসবে অংশ নেওয়া নিয়ে বিতর্ক হয়েছিল। একটি ভিডিওতে হিজাব পরা ছাত্রীদের নাচতে দেখা গিয়েছিল, যা কিছু মুসলিম সংগঠনের সমালোচনার মুখে পড়েছিল। তবে, সেই সময় শশী থারুরের মতো নেতারা এই উৎসবকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির প্রতীক হিসেবে সমর্থন করেছিলেন।
এই ঘটনা কেরলের রাজনৈতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। ডিওয়াইএফআই এবং সিপিআই(এম) এই মন্তব্যকে “বিভাজনকারী” এবং “সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বিরুদ্ধে” বলে অভিহিত করেছে। স্থানীয় অভিভাবকরাও শিক্ষিকার মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছেন।
আমেরিকার নতুন শুল্ক নীতিতে ধাক্কা বাংলার চামড়া শিল্পে
অন্যদিকে, কিছু সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারী শিক্ষিকার বক্তব্যকে তাঁর ব্যক্তিগত ধর্মীয় বিশ্বাসের অংশ বলে সমর্থন করেছেন। তবে, বেশিরভাগ মানুষ মনে করেন, এই ধরনের মন্তব্য কেরলের সাংস্কৃতিক ঐক্যের পরিপন্থী।