১৯ বছর পর মুক্তি! মুম্বই ট্রেন বিস্ফোরণ মামলায় বেকসুর খালাস ১২ অভিযুক্ত

Mumbai Train Blasts Acquittal Challenge

মুম্বই: প্রায় দুই দশক পর ন্যায় পেলেন ২০০৬ সালের মুম্বই ধারাবাহিক ট্রেন বিস্ফোরণ মামলায় দোষী সাব্যস্ত ১২ জন। সোমবার বম্বে হাইকোর্ট তাদের সবাইকে বেকসুর খালাস করে (Mumbai Train Blasts Verdict)। ১৯ বছর আগে মুম্বইয়ের ব্যস্ত লোকাল ট্রেন লাইনে বিস্ফোরণে প্রাণ হারিয়েছিলেন ১৮৯ জন, আহত হন ৮০০-র বেশি। আজ সেই মামলায় রীতিমতো ভর্ৎসনা করল আদালত- তদন্তে ছিল ‘গভীর ফাঁকফোকর’, সাক্ষ্য-প্রমাণে ছিল ‘বিশ্বাসযোগ্যতার অভাব’।

Advertisements

আদালতের পর্যবেক্ষণ

বিচারপতি রেবতী মোহিতে দেরে ও গৌরী গোদসের ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, গোটা মামলার সাক্ষ্য ও তদন্ত প্রক্রিয়ায় অসংখ্য গলদ রয়েছে। বিচারপতিরা বলেন, “গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীরা ছিলেন অবিশ্বাসযোগ্য। অনেকেই দীর্ঘদিন চুপ থাকার পর হঠাৎ করে অপরাধীদের শনাক্ত করেন, এটি স্বাভাবিক নয়।”

আদালত আরও জানায়, একাধিক সাক্ষী নানা অপরাধ মামলায় ‘পেশাদার সাক্ষী’র ভূমিকা পালন করেছেন, যার ফলে তাঁদের বক্তব্য সন্দেহজনক বলে ধরা হয়।

পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রক্রিয়া, ফরেনসিক স্যাম্পলের হেফাজত, এমনকি MCOCA আদালতে দায়ের করা স্বীকারোক্তিগুলি নিয়েও প্রশ্ন তোলে আদালত। রায়ে বলা হয়, “প্রসিকিউশন মামলাটি নির্দ্বিধায় প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে দণ্ডাদেশ বজায় রাখা সম্ভব নয়।”

১৯ বছরের জেল, এখন মুক্তি

২০১৫ সালে MCOCA আদালত পাঁচজনকে মৃত্যুদণ্ড এবং সাতজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেছিল। সেই রায়ই সোমবার বাতিল করে দেয় হাইকোর্ট। তবে ১২ জনের মধ্যে এক অভিযুক্ত, কামাল আনসারি, ২০২১ সালে কোভিডে আক্রান্ত হয়ে নাগপুর জেলে মারা যান। বাকি ১১ জন এখন মুক্তি পাওয়ার অপেক্ষায়।

Advertisements

প্রতিক্রিয়া

অভিযুক্তদের পক্ষে আইনজীবী ইউগ মোহিত চৌধুরি বলেন, “এই রায় নিঃসন্দেহে আশার আলো হয়ে থাকবে তাঁদের জন্য, যাঁরা ভুলভাবে বন্দি হয়ে আছেন।” আদালত উত্তর দেয়, “এটাই ছিল আমাদের দায়িত্ব।” পাবলিক প্রসিকিউটর রাজা ঠাকরে এই রায়কে ভবিষ্যতের বিচার ব্যবস্থার জন্য একটি “দৃষ্টান্তমূলক রায়” বলে বর্ণনা করেছেন।

২০০৬ সালের ১১ জুলাই, সন্ধ্যের ব্যস্ত সময়, মুম্বইয়ের পশ্চিম রেলপথে চলা সাতটি লোকাল ট্রেনে বিস্ফোরণ হয় প্রথম শ্রেণির কামরাগুলিতে। এই হামলাকে দেশজুড়ে একটি অন্যতম ভয়াবহ জঙ্গি হামলা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বহু পরিবার আজও সেই ক্ষত বহন করে চলেছেন।

তবে সোমবারের রায় দেখিয়ে দিল, বিচারের দীর্ঘ পথ শেষ হলেও প্রশ্ন থেকে যায়, কি করে এতবছর ধরে ১২ জন ব্যক্তি দোষী হিসেবে বন্দি থাকলেন, যদি আদালতের মতে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা টিকতেই না পারে?