মহারাষ্ট্রের ভিওয়ান্দিতে একটি চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে (Mumbai Man Kills)। ২২ বছর বয়সী মুসকান নামে এক তরুণীকে তার স্বামী মোহাম্মদ তাহা আনসারি ওরফে সোনু নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। অভিযুক্ত স্বামী তার স্ত্রীর গলা কেটে মাথা বিচ্ছিন্ন করার পর শরীরটি ১৭ টুকরো করে ভিওয়ান্দির ইদগাহ রোডের কাছে একটি উপসাগরে ফেলে দিয়েছে বলে অভিযোগ ।
এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর পুলিশ মোহাম্মদ তাহাকে গ্রেফতার করেছে। এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে এবং পুলিশ তদন্তে নেমেছে।
ঘটনাটি ঘটেছে ভিওয়ান্দির ইদগাহ রোডের কাছে একটি বস্তি এলাকায়, যেখানে মুসকান তার এক বছরের শিশু সন্তান এবং স্বামী মোহাম্মদ তাহার সঙ্গে ভাড়া বাড়িতে বসবাস করত। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বুধবার ইদগাহ উপসাগরের কাছে একটি মানুষের মাথা পাওয়া যায়, যা মুসকানের মা শনাক্ত করেন।
এরপর পুলিশ তদন্ত শুরু করে এবং মোহাম্মদ তাহাকে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করে। জিজ্ঞাসাবাদের সময় তাহা তার অপরাধ স্বীকার করে এবং জানায় যে সে তার স্ত্রীকে গলা কেটে হত্যা করেছে এবং শরীরটি টুকরো টুকরো করে উপসাগরে ফেলে দিয়েছে।মুসকান এবং মোহাম্মদ তাহার দুই বছর আগে বিয়ে হয়েছিল।
পুলিশ জানিয়েছে, তাদের মধ্যে পারিবারিক বিষয় নিয়ে প্রায়ই ঝগড়া হতো। মুসকান তার স্বামী এবং শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সঙ্গে ঘন ঘন মতবিরোধে জড়িয়ে পড়ত। এই বিরোধের জেরেই তাহা এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে ধারণা করা হচ্ছে। তবে, হত্যার সঠিক কারণ এবং ঘটনার বিস্তারিত এখনও তদন্তের মাধ্যমে নির্ধারণ করা হচ্ছে।
পুলিশ জানিয়েছে, এখনও পর্যন্ত শুধুমাত্র মুসকানের মাথা উদ্ধার করা গেছে। শরীরের বাকি অংশ এবং হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্র এখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি। ভিওয়ান্দি পুলিশের ডিসিপি বোরাটে বলেন, “আমরা এখনও জানি না কীভাবে এবং কোথায় সে শরীরটি টুকরো করেছে। তদন্তের পর এই বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।
অভিযুক্ত জানিয়েছে যে সে হত্যার অস্ত্রটি জলে ফেলে দিয়েছে।” পুলিশ সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করছে এবং স্থানীয় সূত্র থেকে তথ্য সংগ্রহ করছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, মুসকানের বাড়ি গত চার দিন ধরে তালাবদ্ধ ছিল।
মোহাম্মদ তাহাকে আদালতে পেশ করা হয়েছে, এবং আদালত তাকে ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে পাঠিয়েছে। পুলিশ এই ঘটনায় ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ ধারা (হত্যা) এবং ২০১ ধারা (প্রমাণ নষ্ট করা) এর অধীনে মামলা দায়ের করেছে। তদন্তে আরও তথ্য প্রকাশ্যে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।এই ঘটনা মহারাষ্ট্রে এবং সারা দেশে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
এর আগেও মহারাষ্ট্রে এই ধরনের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০২৪ সালে পুণেতে এক দম্পতি তাদের বোনকে হত্যা করে তার শরীর টুকরো টুকরো করে মুথা নদীতে ফেলে দেয়। এছাড়া, ২০২৩ সালে মুম্বইয়ের মীরা রোডে এক ব্যক্তি তার সঙ্গিনীকে হত্যা করে শরীর ২০ টুকরো করে ফেলে। এই ধরনের ঘটনাগুলি সমাজে নারী নিরাপত্তা এবং পারিবারিক সহিংসতার বিষয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা এই ঘটনায় শিউরে উঠেছেন। একজন প্রতিবেশী বলেন, “আমরা কখনও ভাবিনি এমন একটি ঘটনা আমাদের এলাকায় ঘটতে পারে। এটি অত্যন্ত ভয়াবহ।” সামাজিক মাধ্যমেও এই ঘটনা নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেকে এই ধরনের অপরাধের জন্য কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “এই ধরনের নৃশংস অপরাধীদের কোনও ক্ষমা করা উচিত নয়।
মুম্বাইয়ে ‘সে*ক্স র্যাকেট অভিযানে গ্রেফতার বাংলার অভিনেত্রী
নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।”এই ঘটনা পারিবারিক সহিংসতা এবং নারীদের প্রতি অপরাধের বিষয়ে সমাজে সচেতনতা বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার কথা মনে করিয়ে দেয়। পুলিশ এই মামলার তদন্তে গভীরভাবে নেমেছে এবং শরীরের বাকি অংশ উদ্ধারের জন্য অভিযান চালাচ্ছে। আগামী দিনে তদন্তের ফলাফল এবং আদালতের রায় এই মামলার দিক নির্ধারণ করবে।