‘হিন্দু না থাকলে পৃথিবীও থাকবে না’, মণিপুরে সভ্যতার অমরত্বের ডাক ভাগবতের

Mohan Bhagwat's claim on Hindus

মণিপুর সফরে এসে বিশ্বের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার নেপথ্যে ‘হিন্দু সমাজের ভূমিকা’ নিয়ে দৃঢ় বার্তা দিলেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘের (আরএসএস) সরচিটক মোহন ভাগবত। তাঁর কথায়, “হিন্দুরা না থাকলে পৃথিবীও থাকবে না।” সভ্যতার ঔজ্জ্বল্য, যুগযুগান্তরের উত্থান-পতন এবং ভারতীয় ধারার স্থায়িত্বকে সামনে রেখে ভাগবত দাবি করেন, হিন্দু সমাজ ‘অমর’, আর ভারত (ভারতবর্ষ) সেই অমর সভ্যতার নাম।

Advertisements

ভাগবত আরও বলেন, “বিশ্বের সব দেশের ইতিহাস দেখুন। ইউন্নান (গ্রীস), মিসর (ইজিপ্ট), রোম— প্রাচীন সভ্যতাগুলি মুছে গিয়েছে পৃথিবীর মানচিত্র থেকে। কিন্তু আমাদের সভ্যতা আজও টিকে আছে। আমাদের ভেতরে এমন কিছু আছে বলেই আজও আমরা আছি।”

   

হিন্দু সমাজ চিরকাল থাকবে

জাতপাত, ভাষা বা ধর্মাভিধান নির্বিশেষে ‘দায়িত্ববোধ-নির্ভর সাংস্কৃতিক সমন্বয়’কে ভারতের শক্তি বলে উল্লেখ করে ভাগবত দাবি করেন, “ভারতের সমাজজাল এমন, যার ফলে হিন্দু সমাজ চিরকাল থাকবে। হিন্দুর অস্তিত্ব শেষ হলে পৃথিবীরও অস্তিত্ব শেষ হবে।”

আরএসএস প্রধানের এ বক্তব্য গুরুত্ব পাচ্ছে কারণ মণিপুরে জাতিগত সংঘর্ষের পটভূমিতে এটি তাঁর প্রথম সফর। সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি আরও মনে করিয়ে দেন, ভারতীয় মুসলিম ও খ্রিস্টানরাও এই ভূমির একই পূর্বপুরুষের সন্তান, এবং তাই কোনও ভারতবাসীকে ‘অহিন্দু’ বলা যায় না— এ বক্তব্য আগে বহুবারই রেখেছেন ভাগবত।

অর্থনীতি–সামরিক শক্তি–জ্ঞান: জাতিগঠনে তিন স্তম্ভ, স্বনির্ভরতার ডাক ভাগবতের Mohan Bhagwat’s claim on Hindus

জাতীয় শক্তি সঞ্চয়ের প্রশ্নে ভাগবতের জোর, স্বনির্ভর অর্থনীতি। আরএসএস প্রধানের মতে, “দেশ গঠনের প্রথম শর্ত শক্তি। শক্তির ভিত্তি হল অর্থনৈতিক ক্ষমতা।”

Advertisements

তাঁর বক্তব্য, “স্বনির্ভরতা মানে শ্রেষ্ঠত্ব দাবি করা নয়। বরং আমাদের অর্থনীতি এমন হতে হবে যে আমরা কারও উপর নির্ভরশীল না থাকি। স্বনির্ভর না হলে জাতি শক্তিশালী হতে পারে না।”

অর্থনীতির পাশাপাশি সমান গুরুত্ব দেওয়া হয় সামরিক দক্ষতা ও জ্ঞান–ক্ষমতাকেও। তাঁর ভাষায়,
“শুধু অর্থনীতি নয়, সামরিক সামর্থ্য, জ্ঞান ও প্রযুক্তি দেশের জন্য অপরিহার্য।”

আমেরিকার শুল্ক সিদ্ধান্তের প্রেক্ষাপটে ‘স্বদেশি’র প্রাসঙ্গিকতা

আরএসএস প্রধানের এই বক্তব্য এমন সময়ে এল, যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন ভারতীয় রফতানির উপর প্রায় ৫০% শুল্ক আরোপ করেছে, যা নিয়ে কেন্দ্র ‘স্বদেশি’ এবং দেশীয় উৎপাদনমুখী নীতিকে আরও জোরদার করেছে। রাজনৈতিক মহলের মতে, আরএসএস প্রধানের বার্তা সরকারের এই নতুন অর্থনৈতিক অবস্থানকেও পরোক্ষভাবে সমর্থন করে।

সমগ্র বক্তব্যের সুর

মণিপুর সফরে মহন ভাগবতের বার্তার কেন্দ্রে ছিল, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ধারক হিসেবে হিন্দু সমাজ, সভ্যতার অমরত্ব, এবং অর্থনৈতিক-সামরিক-জ্ঞানভিত্তিক জাতিগঠন। সংঘর্ষবিধ্বস্ত মণিপুরে তাঁর ভাষণ রাজনৈতিকভাবেও তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা, কারণ সামাজিক সংহতি ও জাতীয় শক্তির বার্তা এখানকার পরিস্থিতির সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত।