আন্তর্জাতিক কূটনীতির প্রেক্ষাপটে এক তাৎপর্যপূর্ণ অধ্যায়ের সূচনা করলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির আত্মজীবনী “আই অ্যাম জর্জিয়া — মাই রুটস, মাই প্রিন্সিপলস”-এর ভারতীয় সংস্করণের ভূমিকাংশ লিখে তিনি কেবল ব্যক্তিগত বন্ধুত্বকেই প্রকাশ করলেন না, বরং ভারত-ইতালি সম্পর্কের এক গভীরতর রাজনৈতিক বার্তাও পৌঁছে দিলেন। রূপা পাবলিকেশনস-এর উদ্যোগে বইটি শীঘ্রই বাজারে আসছে।
মোদী তাঁর ভূমিকায় মেলোনির রাজনৈতিক জীবনকাহিনিকে আখ্যা দিয়েছেন “তাঁর মন কি বাত”। প্রধানমন্ত্রী লিখেছেন, “মেলোনির জীবন ও নেতৃত্ব আমাদের মনে করিয়ে দেয় চিরন্তন সত্যের কথা। তিনি নিঃসন্দেহে সমসাময়িক সময়ের এক অনন্য দেশপ্রেমিক ও অসাধারণ রাজনৈতিক নেত্রী।” একইসঙ্গে তিনি মেলোনির প্রতি নিজের “সম্মান, শ্রদ্ধা ও বন্ধুত্ব” প্রকাশ করে লিখেছেন, এই আত্মজীবনী ভারতীয় পাঠকদের কাছে একটি অনুপ্রেরণাদায়ক দলিল হয়ে উঠবে।
কূটনৈতিক প্রেক্ষাপট ও অভিন্ন মূল্যবোধ
মোদীর বক্তব্যে স্পষ্ট, মেলোনির নেতৃত্ব ও ভারতের মূল্যবোধের মধ্যে রয়েছে এক সূক্ষ্ম মিল। সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, জাতীয় পরিচয় এবং সমতার প্রশ্নে উভয় দেশের অবস্থান কাছাকাছি। মোদীর মন্তব্য, “মেলোনির বিশ্বাস সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও পরিচয়ের প্রতি। এই অভিন্ন মূল্যবোধ ভারত-ইতালি সম্পর্ককে আরও শক্ত ভিতের উপর দাঁড় করিয়েছে।”
২০২৩ সালে মেলোনির দিল্লি সফরের পর দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক কৌশলগত অংশীদারিত্বের স্তরে উন্নীত হয়। ফলে এই ভূমিকাংশ কেবল একটি সাহিত্যিক আঙ্গিক নয়, কূটনৈতিক পরিসরে বার্তাবহ একটি পদক্ষেপ বলেই ধরা হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিধ্বনি Modi writes Meloni autobiography
মেলোনির আত্মজীবনী প্রথম প্রকাশিত হয় ২০২১ সালে, বিরোধী নেত্রী হিসেবে তাঁর সংগ্রামের কাহিনি নিয়ে। ইতালিতে এটি বেস্টসেলার হয়। ২০২৫ সালের জুনে প্রকাশিত আমেরিকান সংস্করণের ভূমিকায় ছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র, যেখানে তিনি মেলোনির শ্রমজীবী পরিবার থেকে উঠে আসা দেশপ্রেমিক কণ্ঠস্বরকে গুরুত্ব দেন। ভারতীয় সংস্করণে মোদীর ভূমিকাটি তাই আন্তর্জাতিক পাঠক মহলেও আলাদা গুরুত্ব পাবে।
সংগ্রামী জীবনের আখ্যান
আত্মজীবনীতে মেলোনি লিখেছেন অবিবাহিতা মা হিসেবে সামাজিক আক্রমণের মুখে পড়া, গর্ভাবস্থায় প্রচার চালানো এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের আক্রমণ সামলানোর অভিজ্ঞতার কথা। তাঁর বিখ্যাত ঘোষণা— “আমি জর্জিয়া, আমি একজন নারী, আমি ইতালীয়, আমি খ্রিস্টান”— ইতালীয় রাজনীতিতে এক পরিচয় রাজনীতির প্রতীক হয়ে উঠেছিল। মোদী এই বক্তব্যের প্রতিধ্বনি টেনে মাতৃত্ব, জাতীয়তাবোধ ও ঐতিহ্যের প্রতি তাঁর অটল অবস্থানকে কুর্নিশ জানিয়েছেন।
ব্যক্তিগত বন্ধুত্বের জনসমক্ষে প্রতিফলন
সাম্প্রতিক বছরগুলিতে মোদী-মেলোনি সম্পর্ক আন্তর্জাতিক পরিসরে বিশেষভাবে আলোচিত হয়েছে। বিশেষত দু’জনের সেলফি ভাইরাল হওয়ার পর সামাজিক মাধ্যমে #Melodi হ্যাশট্যাগ আলোড়ন তুলেছিল। ভূমিকাংশে সেই আন্তরিকতা আরও স্পষ্ট হল।
ভারতীয় সংস্করণের প্রকাশ তাই কেবল একটি আত্মজীবনীর নতুন অধ্যায় নয়, বরং দুই দেশের সম্পর্কের বুননে কূটনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও ব্যক্তিগত স্তরে এক নতুন তাৎপর্য যোগ করল।