দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত G20 শীর্ষ সম্মেলনের শেষ দিনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (PM MODI) । শীর্ষ সম্মেলনের এই দিনে তিনি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক নেতাদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন। তার মধ্যে ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রপতি সিরিল রামাফোসা, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জিওর্জিয়া মেলোনি, এবং কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কারনি। এছাড়া, এই সম্মেলনের প্রেক্ষিতে পরবর্তী ইন্ডিয়া-ব্রাজিল-সাউথ আফ্রিকা (IBSA) শীর্ষ সম্মেলনের পরিকল্পনাও আলোচনার অংশ ছিল।
“ভারতের দৃষ্টি সম্ভবত গ্লোবাল সাউথের সমস্যাগুলি এবং সমগ্রিক বৃদ্ধির একটি সমন্বিত দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখার দিকে থাকবে।” অর্থাৎ, ভারত কেবল নিজেদের স্বার্থ নয়, বরং উন্নয়নের ক্ষেত্রে দক্ষিণ গোলার্ধের দেশগুলিরও স্বার্থকে গুরুত্ব দিচ্ছে।
PM মোদি এই সম্মেলনে চারটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব তুলে ধরেন, যা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে নতুন চিন্তার প্রতিফলন। প্রথমত, তিনি গ্লোবাল ট্র্যাডিশনাল নলেজ রিপোজিটরি বা একটি বিশ্বব্যাপী প্রথাগত জ্ঞানভাণ্ডার গঠনের প্রস্তাব দেন। এই উদ্যোগের মাধ্যমে প্রাচীন ও ঐতিহ্যগত জ্ঞানকে সংরক্ষণ এবং সকল দেশের মধ্যে ভাগ করে নেওয়া সম্ভব হবে। দ্বিতীয়ত, তিনি প্রস্তাব করেন G20 আফ্রিকা স্কিলস মাল্টিপ্লায়ার। এটি আফ্রিকার দেশগুলিতে দক্ষতা বৃদ্ধি এবং সক্ষমতা উন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হবে। এই উদ্যোগ যুবসমাজকে নতুন দক্ষতা অর্জনের সুযোগ দেবে এবং অর্থনৈতিক বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করবে।
তৃতীয় প্রস্তাবটি ছিল ড্রাগ-টারর নেক্সাস মোকাবিলায় একটি উদ্যোগ। মোদি বলেছিলেন, আন্তর্জাতিক স্তরে নেশা ও সন্ত্রাসের সংযোগ রোধ করতে সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। এটি শুধু নিরাপত্তার জন্য নয়, বরং সমাজের সামগ্রিক সুস্থতা এবং শান্তির জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।
চতুর্থ প্রস্তাবটি ছিল গ্লোবাল হেলথকেয়ার রেসপন্স টিম। এটি বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য সঙ্কট মোকাবিলায় একটি কার্যকরী ও সহযোগিতামূলক উদ্যোগ হিসেবে কাজ করবে। স্বাস্থ্য সংকট মোকাবিলায় দেশগুলির মধ্যে তথ্য, দক্ষতা এবং প্রযুক্তি বিনিময় নিশ্চিত করার জন্য এই প্রস্তাব অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, এই G20 সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং উপস্থিত ছিলেন না। তবে, এই অবস্থার মধ্যেও ভারত আন্তর্জাতিক মঞ্চে বৈশ্বিক উন্নয়নের জন্য সমন্বিত দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখার ক্ষেত্রে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করেছে।
PM মোদির এই কার্যক্রম আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ে ভারতের গুরুত্ব বৃদ্ধি করছে এবং গ্লোবাল সাউথের দেশগুলির স্বার্থ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরছে। বিশেষভাবে, তিনি এমন একটি আন্তর্জাতিক পরিবেশ গড়ে তুলতে চাচ্ছেন যেখানে উন্নয়ন শুধু অর্থনৈতিক নয়, বরং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সমন্বিতভাবে সংঘটিত হবে।
G20 সম্মেলনে মোদি যে প্রস্তাবগুলো উত্থাপন করেছেন তা আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, দক্ষতা উন্নয়ন, স্বাস্থ্য নিরাপত্তা এবং সন্ত্রাসবিরোধী প্রচেষ্টার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও, এই প্রস্তাবগুলো দক্ষিণ গোলার্ধের দেশগুলির জন্য বিশেষভাবে উপকারী, যেগুলি অনেক সময় উন্নয়নমূলক নীতি ও প্রযুক্তি সংরক্ষণের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ থাকে।
