Modi Trump relationship
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর শনিবার এক গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্যে বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ককে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। একইসঙ্গে তিনি তুলে ধরেন যে মোদীর সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যক্তিগত সম্পর্কও সবসময়ই ইতিবাচক ও ঘনিষ্ঠ ছিল।
শুল্ক ও রাশিয়ার তেল কেনা নিয়ে দ্বন্দ্ব
সাম্প্রতিক সময়ে শুল্ক আরোপ এবং রাশিয়ার তেল কেনা নিয়ে দুই দেশের মধ্যে কিছু মতপার্থক্য দেখা দিলেও ভারত–মার্কিন কূটনৈতিক বন্ধন অটুট রয়েছে বলে আশ্বস্ত করেছেন জয়শঙ্কর। তিনি স্পষ্ট ভাষায় জানান, “মোদীজী আমাদের অংশীদারিত্বকে ভীষণ গুরুত্ব দেন। ট্রাম্পের ক্ষেত্রেও বলতে পারি, তাঁর সঙ্গে সবসময়ই মোদীর ভালো ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল। আপাতত আমি এর বেশি কিছু বলতে পারছি না, তবে এটুকুই বলব—আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্রমাগত যোগাযোগে আছি।”
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই বক্তব্য এসেছে একেবারে প্রধানমন্ত্রী মোদীর প্রতিক্রিয়ার পরপরই। সম্প্রতি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ভারত–মার্কিন সম্পর্ক নিয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করেছেন। তার জবাবে মোদী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স (পূর্বতন টুইটার)-এ লিখেছেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের উষ্ণ মন্তব্য এবং আমাদের সম্পর্ক নিয়ে ইতিবাচক মূল্যায়নকে আমি গভীরভাবে কৃতজ্ঞচিত্তে গ্রহণ করছি। ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একটি অত্যন্ত ইতিবাচক এবং ভবিষ্যতমুখী পূর্ণাঙ্গ বৈশ্বিক কৌশলগত অংশীদারিত্ব বিদ্যমান।”
সবসময় মোদীর বন্ধু থাকব Modi Trump relationship
ট্রাম্পও শুক্রবার হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিস থেকে সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, “আমি সবসময় মোদীর বন্ধু থাকব, তিনি একজন অসাধারণ প্রধানমন্ত্রী। যদিও বর্তমান পরিস্থিতিতে তাঁর কিছু পদক্ষেপ আমার ভালো লাগছে না, তবে সেটি বড় কোনো সমস্যা নয়। ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একটি বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে, চিন্তার কিছু নেই। মাঝে মাঝে মতপার্থক্য হয়েই থাকে।”
দুই দেশের এই কূটনৈতিক কথোপকথনের পেছনে রয়েছে সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক দ্বন্দ্ব। ট্রাম্প প্রশাসন সম্প্রতি ভারতের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ—ভারত এখনো রাশিয়া থেকে ছাড়কৃত দামে অপরিশোধিত তেল আমদানি করছে, যা মার্কিন নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
তবে দিল্লি বরাবরই বলে আসছে, ভারতের জ্বালানি প্রয়োজন মেটাতে নানা উৎসের ওপর নির্ভর করতে হয়। রাশিয়ার তেল সেই কৌশলের অংশ মাত্র। নয়া দিল্লি মনে করে, এর ফলে ভারতীয় অর্থনীতি যেমন সুরাহা পাচ্ছে, তেমনি বৈশ্বিক বাজারেও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার চেষ্টা করছে।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মোদী–ট্রাম্প সম্পর্কের একটি আলাদা মাত্রা রয়েছে। একদিকে উভয়ের ব্যক্তিগত বোঝাপড়া গভীর, যা অনেক সময় দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যায়। অন্যদিকে বাণিজ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তা নিয়ে মতপার্থক্য সম্পর্ককে জটিল করে তোলে।
‘ভারতকে চীনের হাতে হারিয়েছি’
ট্রাম্প একসময় বলেছিলেন, “আমরা ভারতকে গভীরতম, অন্ধকারতম চীনের হাতে হারিয়েছি।” কিন্তু তার পরেই তিনি মন্তব্যে ঘুরে দাঁড়িয়ে বলেন, “ভারতের সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে, চিন্তার কিছু নেই।” এই ওঠা–নামা আসলে দুই দেশের সম্পর্কের বহুমাত্রিক বাস্তবতাকেই তুলে ধরে।
তবে সমস্ত বিতর্কের মাঝেই দুই দেশই বারবার একটি বিষয় স্পষ্ট করেছে—ভারত–মার্কিন সম্পর্কের ভবিষ্যৎ মজবুত ও আশাব্যঞ্জক। প্রতিরক্ষা, প্রযুক্তি, শিক্ষা, জলবায়ু পরিবর্তন, এমনকি মহাকাশ গবেষণার মতো ক্ষেত্রেও দুই দেশের সহযোগিতা ক্রমাগত বাড়ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমানের শুল্ক বা তেল আমদানি ইস্যু হয়তো স্বল্পমেয়াদি অস্বস্তি তৈরি করছে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে দিল্লি–ওয়াশিংটনের কৌশলগত বন্ধন আরও গভীর হবে। কারণ দুই দেশই গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, আঞ্চলিক নিরাপত্তা এবং বৈশ্বিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় একে অপরের ওপর নির্ভরশীল।
প্রধানমন্ত্রী মোদী ও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ব্যক্তিগত সম্পর্ক শুধু কূটনৈতিক বৈঠকেই সীমাবদ্ধ নয়। হিউস্টনে অনুষ্ঠিত “হাউডি মোদী” অনুষ্ঠান কিংবা দিল্লির “নমস্তে ট্রাম্প” সফর—এই সবকিছুই দুই নেতার ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের প্রতীক হয়ে আছে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই ব্যক্তিগত সখ্য বহুবার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে নতুন দিশা দেখিয়েছে।
জয়শঙ্করের মন্তব্য থেকে স্পষ্ট, ভারত চাইছে না যে সাময়িক অস্বস্তি দীর্ঘমেয়াদে কোনো ক্ষতি করুক। বরং ভারত বারবার জানাচ্ছে, তাদের কৌশলগত অংশীদারিত্ব যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অটুট এবং ভবিষ্যতেও তা আরও প্রসারিত হবে।
একইসঙ্গে মোদীর প্রতিক্রিয়া থেকেও বোঝা যায়, ব্যক্তিগত কূটনীতি তিনি অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে ব্যবহার করেন। ট্রাম্পের উষ্ণ মন্তব্যকে প্রকাশ্যে স্বাগত জানিয়ে মোদী মূলত বার্তা দিয়েছেন—ভারত–মার্কিন বন্ধুত্ব সময়সাপেক্ষ সমস্যার ঊর্ধ্বে।
সাময়িক বাণিজ্যিক দ্বন্দ্ব সত্ত্বেও মোদী ও ট্রাম্প দু’জনেই বারবার জোর দিয়ে বলছেন, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক বিশেষ এবং গভীর। বিশ্বের দুই বৃহত্তম গণতন্ত্রের মধ্যে এই অংশীদারিত্ব কেবল অর্থনীতি নয়, ভূ-রাজনীতি ও বিশ্বশান্তির ভবিষ্যতের দিকেও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।
Bharat: Indian External Affairs Minister S. Jaishankar highlighted the importance Prime Minister Narendra Modi places on India’s relationship with the US, stating that Modi’s personal rapport with President Donald Trump has always been positive. Jaishankar’s comments follow a series of public remarks by both leaders affirming the strength of the India-US strategic partnership despite recent trade tensions.